সংস্কারের পথ ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপে যাবে দেশ তারেক রহমানের প্রত্যাশা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে দেশ নির্বাচনী রোডম্যাপে যাবে’ বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে সংস্কারের ব্যাপারে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ সঠিক না হলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে লাখো-কোটি জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল’ উল্লেখ করে তারেক রহমান আরও বলেন, এই সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ, তাদের ব্যর্থতা হবে গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। দিবসটি উপলক্ষে এদিন ঢাকার বাইরে সব সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে র‌্যালি ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। গত রোববার দেশব্যাপী এই কর্মসূচি হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা পিছিয়ে মঙ্গলবার পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন। আড়াইটার আগেই নটর ডেম কলেজ থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় পর্যন্ত লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। অংশ নেওয়া কর্মীর অনেকের হাতে ছিল জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি সংবলিত প্ল্যাকার্ড। জনসমুদ্রের সেই ঢেউ নয়াপল্টন ছাড়িয়ে আশপাশের অলিগলিতেও ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর সব থানা ও ওয়ার্ড ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেন। রং-বেরঙের ক্যাপ পরা নেতাকর্মীদের হাতে হাতে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকাও ছিল।

সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মাণ করা হয় বিশাল একটি মঞ্চ। সেখানে বড় একটি ইলেকট্রনিক পর্দা স্থাপন করা হয়। এতে তারেক রহমানের বক্তব্য সরাসরি দেখানো হয়। এ ছাড়া কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল বাজার পর্যন্ত অন্তত দেড় শতাধিক মাইকের ব্যবস্থা করা হয়, এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় বড় পর্দার টিভি স্ক্রিনও।

সমাবেশের কারণে দুপুর থেকে নয়াপল্টনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আশপাশের গলিগুলোর ওপর তৈরি হয় যানবাহনের চাপ। সমাবেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিএনপি মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর স্বেচ্ছাসেবক টিম নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাকরাইল ও ফকিরাপুল মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করতে চাই, এখনো আমলাদের মধ্যে, সরকারের মধ্যে সেই ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেক প্রেতাত্মা উসকানি দিচ্ছে। আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ নস্যাৎ করার জন্য তারা বসে আছে।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন তারেক রহমান। এ সময় সুদূর লন্ডন থেকে সমাবেশ মঞ্চে স্থাপিত পর্দায় ভেসে ওঠে তারেক রহমানের ছবি। উপস্থিত নেতাকর্মীরা তখন মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে সমাবেশে প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানান।

দেশবাসীকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের বীর ছাত্র-জনতা-নারী-শিশু-কৃষক-শ্রমিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে রাজি, তবুও স্বৈরশাসন মেনে নিতে রাজি নয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী বীর জনগণকে জানাই আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা শহীদী মৃত্যুবরণ করেছেন, যারা আহত হয়েছেন, হাত-পা-চোখ হারিয়েছেন কিংবা চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজীবন তাদের এই আত্মত্যাগ এবং অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। হতাহতদের প্রতিটি পরিবারের প্রতি অবশ্যই রাষ্ট্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র-রাজনীতি শাসন-প্রশাসন হওয়ার কথা ছিল ‘গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’। অথচ গত ১৫ বছর বাংলাদেশে মাফিয়া শাসন চালু করা হয়েছিল। দেশে-বিদেশে পলাতক স্বৈরাচার বিনাভোটের সরকারের পরিচয় হয়ে উঠেছিল ‘গভর্নমেন্ট অব দ্য মাফিয়া, বাই দ্য মাফিয়া, ফর দ্য মাফিয়া’। এই মাফিয়া চক্র দেশকে সর্বক্ষেত্রে ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। দেশকে সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর, ঋণনির্ভর এবং পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। মাফিয়া চক্র দেশের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া করে দিয়েছে। গত দেড় দশকে দেশ থেকে ১৭ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পতিত স্বৈরাচারের বেপরোয়া দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বর্তমানে ১০০ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে আজ যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে, কোনো কারণ ছাড়াই সেই শিশুটিরও মাথাপিছু ঋণ কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা। মাফিয়া চক্র দেশকে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই ভঙ্গুর করে দেয়নি; দেশের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক রীতিনীতিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রতিটি সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান অকার্যকর করে ফেলা হয়েছিল। খোদ ফ্যাসিবাদকেই বিচার বিভাগের সূতিকাগারে পরিণত করে ফেলা হয়েছিল। একটি রাষ্ট্র কতটা সভ্য এবং গণতান্ত্রিক, সেটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু মাফিয়া চক্র দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অন্যায়-অনিয়ম আর অরাজকতার বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে মাফিয়া শাসন-শোষণের অবসান ঘটেছে। পতিত স্বৈরাচারের পলায়নের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক-মানবিক বাংলাদেশ গড়ার পথে প্রধান বাধা দূর হয়েছে। তবে বাধা দূর হলেও মাফিয়া চক্রের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর হয়নি। এই জঞ্জাল দূর করে জনগণের বাংলাদেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে। তবে মাফিয়া চক্রের প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও চক্রের বেনিফিশিয়ারি অপশক্তি প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে কিংবা রাজনীতির ছদ্মাবরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সবার কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে; কিন্তু তাদের ব্যর্থতা হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা, বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। দেশ-বিদেশ থেকে নানা রকমের উসকানিতেও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কিংবা যে কোনো দেশেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে। তবে কোনো এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতাও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেটও হওয়া জরুরি। এ জন্যই অগ্রাধিকারভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া দরকার। কারণ, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া, সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন-গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই এবং কার্যকর হয় না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করে ভোটারদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনের সংস্কার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘সক্ষম এবং উপযুক্ত’ করে গড়ে তুলতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যেই বেশকিছু ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এজেন্ডা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী চক্র নানা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এর কিছু আলামত ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, এবারের গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র অতীতের যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে ব্যতিক্রম। কারণ, পলাতক স্বৈরাচারের অবৈধ শাসনকালে সব গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার হারিয়ে জনগণ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও হারাতে বসেছিল। তাই এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শুধু মানুষের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেয়েছে। দেশ এবং জনগণ এখন গুম-খুন-অপহরণ আর বিভীষিকাময় ‘আয়নাঘরে’র আতঙ্কমুক্ত, স্বাধীন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পর এবার দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষায় প্রথম কাজ হতে হবে, রাষ্ট্র এবং সমাজে মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

তারেক রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটার। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়ার পর তরুণ প্রজন্মের এই আড়াই কোটি ভোটার একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। ভোট দিয়ে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেনি কিংবা তারা নিজেরাও কেউ ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়নি।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, দেশের জনশক্তির অর্ধেক নারী এবং তারুণ্যের এই বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অংশীদারত্বের বাইরে রেখে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। সংবিধান কিংবা প্রবিধানে যাই থাকুক, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে, সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে শেষ পর্যন্ত কোনো সংস্কার কার্যক্রমেরই কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে না।

২০২৩ সালে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা কর্মসূচির উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ঘোষিত ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং, রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির আরও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন-পরিমার্জনকেও বিএনপি স্বাগত জানায়।

নতুন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে একটি পরিণত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে তাতেও দোষের কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জনগণ কাকে সমর্থন জানাবে কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না, এটি তার নিজস্ব বিষয়। এই কারণে বিএনপি বরাবর জনগণের ভোটের অধিকারের ওপর জোর দিয়েছে। বিএনপি মনে করে, একমাত্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব প্রয়োজন।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান কিংবা সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানা রকম কথা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটি একটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য রীতি। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন, এটিই স্বাভাবিক। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ফৌজদারি অপরাধের বিচার যেমন বিচারিক আদালতে হয়, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা রাজনৈতিক আচরণের বিচার হয় জনগণের আদালতে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্র ক্ষমতার হাতবদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। তাই প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মনে রাখা প্রয়োজন, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণেও গুণগত পরিবর্তন জরুরি। সুতরাং আমার আহ্বান, কোনো প্রলোভন কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজের নেতৃত্ব দানের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখুন।

তিনি বলেন, হাজারো শহীদের রক্তস্নাত এই রাজপথে আজ আপনাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির অর্থ ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার এই যাত্রাপথে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে হয়তো আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, আরও কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে সেই পথ

সন্ত্রাস-সংঘর্ষ-প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসার নয়, সেই পথ হবে

ধৈর্য-সহনশীলতা এবং সমঝোতার। সবশেষে বলতে চাই, সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে দেশ। সুতরাং আসুন, আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস, ভালোবাসা অর্জন করি। জনগণের সঙ্গে থাকি, জনগণকে সঙ্গে রাখি।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ডা. জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, ঢাকা জেলার নিপুণ রায় চৌধুরী, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, নারায়ণগঞ্জের শওকত হোসেন সরকার, মুন্সীগঞ্জের কামরুজ্জামান রতন, টাঙ্গাইলের হাসানুজ্জামিল শাহিন, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, জাসাসের হেলাল খান, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশে বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, নাসির উদ্দিন অসীম, খন্দকার আবু আশফাক, আসাদুল করিম শাহিন, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, নজরুল ইসলাম আজাদ, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions