ডেস্ক রির্পোট:- কোটা সংস্কারের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সারা দেশে গণপদযাত্রা করবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণপদযাত্রা করে প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি দেবেন। কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গতকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, কোনো অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করা হবে।
গতকাল বিকাল ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বাংলা ব্লকেড কার্যক্রমে জনদুর্ভোগ হচ্ছে বলে বলছেন। আমরা বলতে চাই, মা যখন সন্তান প্রসব করেন তখন যন্ত্রণা ভোগ করেন। আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ৫ শতাংশ কোটা থাকতে পারে। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পর্যন্ত এই কোটা থাকতে পারে।
তৃতীয় প্রজন্মের জন্য কোটার বিরোধী আমরা।
ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের জোয়ার বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেলা- উপজেলায় ছড়িয়ে গেছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা কেন ফিরে যাবে? শিক্ষার্থীরা এত বোকা নয়। আন্দোলনের শুরুতে তাদের কোনো খোঁজ ছিল না। এখন আন্দোলন সফল হওয়ার সময় বিরোধিতা করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যাখ্যান করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের ছাত্র ধর্মঘট চলবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আমাদের নামে হওয়া শাহবাগ থানার মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনে বাধাপ্রদানকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দাবি আদায় না হলে বৃহত্তর গণআন্দোলনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।
আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা ১১ই জুলাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়। চট্টগ্রামে নারী শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধা দেয়, সেইসঙ্গে লাঠিচার্জ করে। অনেক সাংবাদিককেও আহত করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি এক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতন করে। আমরা ১লা জুলাই থেকে আন্দোলন করছি। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, ১০ দিনের আন্দোলনে কোনো শিক্ষার্থী কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি। তাহলে শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে কেন হামলা করা হচ্ছে?
ছাত্রলীগ আন্দোলনে উস্কে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা মামলা হয়েছে। এসময় পুলিশের একটি রেকর্ড শোনানো হয়। সেখানে পুলিশকে বলতে শোনা যায়, ‘শিক্ষার্থীরা কোনো ক্ষতি করেনি।’ আমরা এমন কোনো পুলিশ প্রশাসন চাই না। আমরা চাই তাদের স্থানান্তর করে অন্য কোথাও পাঠানো হোক।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমাদের আন্দোলন থাকবে যতদিন পর্যন্ত আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হয়। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের পেনশন স্কিমের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জন করেছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর। আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেখতে চাই না শিক্ষকরা ক্লাসে বসে আছেন। ক্লাস, পরীক্ষার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের আন্দোলন দীর্ঘায়িত করতে হচ্ছে। এর দায় পুরোপুরি সরকারের। তারা যদি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয় আমরা রাস্তায় থাকবো না। অতিদ্রুত সংসদে আইন পাস করুন।
ছাত্রলীগের হুঁশিয়ারি: কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলনের আগে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, নতুন করে যদি কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয় তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। আমরা শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে গেছে। কিন্তু প্রফেশনাল আন্দোলনকারীরা মাঠে রয়েছে। তারা ব্লকেড ব্লকেড খেলছে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি প্রাথমিকভাবে আদায় হয়েছে। কোটা সব সময় একটি চলতি বিষয়। আজকে যারা স্বঘোষিত মেধাবী বলছে তারা কী আসলেই মেধাবী? তারা আসলে চায় কী? তারা বলে কোটা না মেধা? মেধা। আবার তারা বলে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই।
তিনি আরও বলেন, কোটায় যারা সুযোগ পান তারাও মেধাবী। ৪৩তম বিসিএসে প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় মাত্র ১৫ হাজার। এরপর নির্বাচিত হন প্রায় তিন হাজার। এটা কী মেধার পরিচয় নয়। এ ছাড়াও কয়েকটি চাকরি পরীক্ষার উদাহরণ টেনে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সমাধান হয়েছে।
ছাত্রলীগ সভাপতি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা কী চাকরিজীবী হতে চায় নাকি আন্দোলনজীবী হতে চায়? পূর্বের আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা কেউ সরকারি চাকরি করেন না। তারা বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আমরা নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে চাই। তারা তো নারীদের দূরে রাখার চেষ্টা করছে। তারা মেধার স্বর্গে নয় বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। আমরাও চাই সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়ে একটা সমাধান হোক।
সাদ্দাম বলেন, তারা শুধুমাত্র পলিটিক্যাল এটেনশন চায়। তারা শাহবাগে অবস্থান নেয়। কেন জাদুঘরের সামনে কিংবা লাইব্রেরির সামনে সমাবেশ করা যায় না। আমরা নানা পর্যায়ের মতামত নেবো। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের লড়াই অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চিঠি বা অফিসিয়াল ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত গ্রহণ করবে।
সাধারণ শিক্ষা পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চাইলে তা সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বশেষ দিনে ছাত্রদলের নেতাদের অংশগ্রহণ দেখতে পেয়েছি। তাদের কোটার সংস্কার মূল লক্ষ্য নয়। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, কোটা সংস্কারের নামে ভীতির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। আমরা ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন নিয়েছি। আমরা কোটার বাস্তব ও যৌক্তিক সমাধানের জন্য কাজ করছি। যারা সব সময় শিক্ষার্থীদের মাথাকে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করতে চায় তারা ইস্যু করছে এই আন্দোলনকে। তারাই কোটা আন্দোলনের নাম করে শান্ত পরিবেশকে নষ্ট করতে চায়।
তিনি বলেন, নারী কোটা নিয়েও গুটিকয়েক লোকের আস্ফালন দেখা যাচ্ছে। এই কোটা আপনার আমার- মা- বোন সবাই পাবে। জেলা কোটার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো জেলার লোক সুযোগ পাচ্ছে না। যাতে পিছিয়ে পড়া জেলা থেকে উঠে আসে। এটাই তো বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। তাদের নিয়ে এলার্জি কাদের? তাদের কটাক্ষ সহ্য করা হবে না। আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য এই কোটা প্রয়োজন। প্রতিবন্ধীরা আমাদের সন্তান। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন এই সুযোগটা পায়। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে ১লা জুলাই থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলাদেশে। শিক্ষার্থীরা চারদিন আধাবেলা ও একদিন সর্বাত্মক ব্লকেড পালন করেন। গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার অভিযোগ এনে গত শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এদিন এক ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধসহ রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।