ডেস্ক রির্পোট:- ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও বিভিন্ন শহরে ৪০টিরও বেশি রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। সোমবার (৮ জুলাই) পরিচালিত এই হামলায় অন্তত ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এ দিন দেশটির সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতালেও হামলা হয়েছে। মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ব্যস্ত হাসপাতালটি।
রাশিয়া হাসপাতালটিতে ইচ্ছেকৃতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে বলে দাবি করে পশ্চিমা বিশ্ব বিক্ষুব্ধ। তেমনি বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে। এমন সময় নতুন একটি দাবি সামনে এসেছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া হামলার দায় অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, রাশিয়া কখনও সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে না। হাসপাতালটিতে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মিসাইল আঘাত হেনেছে।
এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বেসামরিক স্থাপনায় রাশিয়ার ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে কিয়েভ সরকারের বিবৃতি একেবারেই অবাস্তব। কিয়েভের একাধিক ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিঃসন্দেহে সত্যতা নিশ্চিত করে যে, ইউক্রেনীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের পতনের কারণে এ ধ্বংস হয়েছে। শহরের সীমানার মধ্যে মিসাইল উৎক্ষেপণ করায় এ ভুল হয়েছে বলে দাবি রাশিয়ার।
তবে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কিয়েভের ওখমাতদিত নামে হাসপাতালে হামলাটি ইচ্ছাকৃত ছিল। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের সাবেক ডেপুটি হেড লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইহোর রোমানেনকো বলেন, তারা ইরানের তৈরি শহীদ ড্রোন ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্রটি পুরোপুরি ব্যবহার করেছিল। নৈতিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগের জন্যই দিনের বেলায় হামলা করা হয়। হাসপাতালটি অনেকটা কিয়েভের স্নায়ুর মতো কাজ করে। তাই এখানে আঘাত করে ইউক্রেনীয়দের আবেগপ্রবণ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে করে যুদ্ধ বন্ধে জেলেনস্কিসহ দেশের নেতাদের ওপর জনগণ চাপ দেবে। ফলে ক্রেমলিনের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে একমত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। যদি তা হয় তবে ঘরে-বাইরের চাপ ইউক্রেনের মস্কো অধিকৃত অঞ্চল এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করা হবে।
উল্লেখ্য, হাসপাতালে হামলার অনেক ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে একটি মিসাইল সদৃশ্য বস্তু হাসপাতালে আঘাত হানতে দেখা যায়। মুহূর্তে কেঁপে উঠে আশপাশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলার ভয়াবহতায় চিৎকার করে উঠেন। কালো ধোঁয়ায়ে ছেয়ে যায় আকাশ। পরে কিয়েভের শিশু হাসপাতালের কর্মকর্তাদের পাঠানো ছবিগুলোতে দেখা যায়, সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ পরিস্কার করছেন মানুষ। তারা হাতে হাতে কংক্রিটের ভারী টুকরো সরিয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
হামলার পর ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘রুশ সন্ত্রাসীরা’ আবারও বিভিন্ন শহর— কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভি রিগ, স্লোভিয়ানস্ক, ক্রামতোর্স্কে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করেছে।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, বিভিন্ন ধরনের ৪০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আবাসিক ভবন, অবকাঠামো ও একটি শিশু হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওখমাতদিত শিশু হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে অজানাসংখ্যক লোক আটকে পড়েছেন। সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে কি না তা স্পষ্ট নয়। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।