শিরোনাম
যে পর্যবেক্ষণে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয় বিচারপতি সিনহাকে ‘কোনো একজন ব্যক্তি দ্বারা কোনো একটি দেশ বা জাতি তৈরি হয়নি’ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের আলটিমেটাম পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেন আন্দোলনকারীরা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান এখন লন্ডনে, আমিরাতে আরও ৩০০ বাড়ির সন্ধান শাহবাগে না, সভা-সমাবেশ করতে হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বান্দরবানে ভিক্টরী টাইগার্সের ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন পাহাড়ে ফসলের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষীরা, কমেছে মিষ্টি কুমড়ার ফলন রাঙ্গামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান রাঙ্গামাটিতে পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত সময় বৃদ্ধি না করতে প্রদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে — জেলা প্রশাসক বিদায় রাঙ্গামাটি ও রাঙ্গামাটি সরকারী মহিলা কলেজ

নৌপথে প্রাণহানি ২০ হাজারেরও বেশি, আজও নেই নিরাপত্তা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪
  • ৭৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন (১১ এপ্রিল) বাড়ি ফেরার পথে লঞ্চের রশির আঘাতে পাঁচ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয় রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। সেখানে একই পরিবারের তিন জন মারা যান। সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনের ওপর বাবা মো. বেলাল ও মা মুক্তার মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল চার বছর বয়সী মাইশার নিথর দেহ। লঞ্চ শ্রমিকদের গাফিলতিতে ঈদের আনন্দ একমুহূর্তে বিলীন হয়ে যায় বেলালের পরিবারে।

দেশে নৌ-দুর্ঘটনায় বেলালের পরিবারের মতো এমন আরও কত হাজার পরিবার যে ধ্বংস হয়েছে, কত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে, তার হিসাব করা কঠিন।

প্রায় দুই দশক আগে ২০০৪ সালে একই দিনে তিনটি নৌ দুর্ঘটনায় কয়েক শ মানুষের প্রাণ যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নৌ দুর্ঘটনার সবচেয়ে শোকাবহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় দিনটিকে। এক বছর বয়সী ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে অনেকের পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে সেই দুর্ঘটনায়। প্রিয়জন হারানো সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনও কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

তাদের একজন সুমন শামস। ২০০৪ সালের ২৩ মে মেঘনা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় মাকে হারানোর পর থেকে নৌ-নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি জানিয়ে একাই লড়াই করছেন তিনি।

সুমন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নৌপথে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে। এখন নৌপথে ডুবে মরার চিত্র দেখা না গেলেও নৌ-নিরাপত্তার ঘাটতি সংক্রান্ত কারণে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। লঞ্চ শ্রমিক ও মালিকদের গাফিলতির ফল ভুগতে হয় অসংখ্য নিরীহ মানুষকে। বারবার বলার পরও নৌ-নিরাপত্তার বিষয় আমলে নেওয়া হয় না।

নদী ও প্রাণপ্রকৃতি নিরাপত্তার স্বার্থে সুমন শামস প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘নোঙর বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন। সুমন বলেন, ২০০৪ সালের সেই ঘটনার স্মরণে এবং নিরাপদ নৌযান চলাচল নিশ্চিত করতে দিনটিকে নৌ-নিরাপত্তা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এটি বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি নৌ-নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেসব ঘাটতি ছিল, তারও কোনও পরিবর্তন হয়নি।

সুমন বলেন, লঞ্চে মাঝনদীতে যাত্রী ওঠানো-নামানোর চিত্র নতুন নয়। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এসব অন্যায় বন্ধ করতে হবে। কোনও লঞ্চেই পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম নেই। যাত্রীদের জীবন রক্ষার স্বার্থে সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখা দরকার। এ নিয়ে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা বারবার বলার পরও লঞ্চমালিকরা তোয়াক্কা করছেন না, প্রশাসনও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

প্রতিটি লঞ্চ ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে তিনি বলেন, ২০০৪ সালে যে লঞ্চগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, সেগুলোয় ৫২টি ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি। সরকারিভাবে যদি তদন্ত করা হয়, তাহলে অসংখ্য ত্রুটি বের হয়ে আসবে। কোনও কিছু দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তারপর সরকারের হুঁশ হয়। এর আগে প্রতিকারের কথা মনে থাকে না। নৌযানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

লঞ্চে ত্রুটির বিষয়ে জানতে সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ লঞ্চেই নেই পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম। সদরঘাটে নোঙর করা অন্তত ২০টি লঞ্চের কোনোটিতে তা দেখা যায়নি। এ ছাড়া দুই-তিনটি লঞ্চ ছাড়া আর কোনোটিতে ছিল না প্রাথমিক চিকিৎসাব্যবস্থা। প্রতিটি লঞ্চের কোনও না কোনও অংশে জোড়াতালি দেওয়া। এ ছাড়া লঞ্চে দেওয়া চার্ট অনুযায়ী কোনও সরঞ্জাম পরিপূর্ণ নেই। এমনকি স্টাফের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নেই। লঞ্চের মাস্টারের অদক্ষতার প্রমাণও পাওয়া যায় বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে।

কিছু লঞ্চের বর্তমান বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর। বেশির ভাগ লঞ্চের ওপর চকচকে বাহারি রঙের প্রলেপ থাকলেও, ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিনসহ অনেক অংশে জোড়াতালি দেওয়া। যাত্রী নিরাপত্তায় প্রতিটি লঞ্চে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, বালুভরা বাক্স, ফায়ার বাকেট, পাম্প মেশিন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া, ফার্স্ট অ্যাইডসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ লঞ্চে তা নেই।

নৌযানের ওপর গবেষণা করা বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কারিগরি ও অবকাঠামোগত ত্রুটি, কার্যকর তদারকি না থাকা, চালকের অদক্ষতা ও অতিরিক্ত যাত্রীর করণে দেশে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া যেসব লঞ্চ পুরনো নকশায় নির্মিত, সেগুলোই এখন বেশি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে।

নৌপথে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে ডুবোচরকে দায়ী করছেন লঞ্চ মাস্টার তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডুবোচরের কারণে নৌযান চালাতে সমস্যা হয়। রাতে মালবাহী কার্গো চলাচলে নৌযান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো দরকার। মাঝেমধ্যে কোস্টগার্ডকে অভিযান চালাতে দেখলেও এর সংখ্যা কমেনি। কেন এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, রাতে মালবাহী বাল্কহেড, কার্গো চলাচলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব নৌযানের রাতে চলাচল বন্ধের দাবি জানালেও এর কোনও সুরাহা হয়নি। রাতে মালবাহী বাল্কহেড, কার্গো চললে যেন অন্তত বয়া-বাতি নিশ্চিত করে, কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান এই লঞ্চ মাস্টার।

এ বিষয়ে লঞ্চমালিকরা দাবি করে জানান, নদীপথে আগের মতো ব্যবসা নেই। লাভের মুখ দেখতে কষ্ট হয়। অর্থনৈতিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এ জন্য অনেক কিছুর ঘাটতি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে। তা ছাড়া লঞ্চ চলাচলও কমে আসছে। আগের মতো লঞ্চ দুর্ঘটনা হয় না বলে নৌ-নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নিতে নারাজ তারা।

কিছু ক্ষেত্রে লঞ্চ দুর্ঘটনায় সরাসরি লঞ্চ মাস্টারের অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতা এবং ছোট নৌযানের চালককে দায়ী করে তারা বলেন, লঞ্চ মাস্টাররা দক্ষ হলে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটবে না। সেটা ছোট নৌযানের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। অকারণে মেরিন কোর্টের নামে লঞ্চের মালিকদের অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানান এক লঞ্চ মালিক।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, অভিযান চালিয়ে ত্রুটিপূর্ণ নৌযান এবং যেসব নৌযানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘাটতি রয়েছে, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।

নৌ-নিরাপত্তার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাট দফতরের পরিবহন পরিদর্শক এ বি এম মাহমুদ বলেন, সব রকম শর্ত মানা হলে বিআইডব্লিউটিএ থেকে লঞ্চ নদীতে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনুমতি নেওয়ার পর ধীরে ধীরে বেশ কিছু ঘাটতি দেখা দেয়। এ জন্য অবশ্য অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ দশকে দেশে দুই হাজারের বেশি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয় হাজারের বেশি যাত্রী নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ২০ হাজারের বেশি মামলা হলেও নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র দেড়শর মতো। বাকি মামলাগুলো ঝুলে রয়েছে। কিছু মামলার হদিস নেই। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোয় অপরাধীদের উল্লেখযোগ্য কোনও শাস্তিও হয়নি। যে কারণে নৌ-নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন না নৌযানের মালিক-শ্রমিকরা।

নৌপথে যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন জানিয়ে নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম বলেন, আগে যাত্রীরা সদরঘাট এসে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতো। কোনও যাত্রী কোনও ধরনের হয়রানির অভিযোগ করলে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করি। শুরু থেকেই নদীপথের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নৌ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

নৌ-নিরাপত্তার সার্বিক বিষয় নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন লেন, নৌপথে দুর্ঘটনা অনেক কমেছে। মাঝেমধ্যে চালক বা নৌশ্রমিকদের কারণে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নৌপথে এখন তেমন কোনও দুর্ঘটনা নেই। ঝুঁকি-ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চের বিরুদ্ধে অতীতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এখনও কেউ যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে নৌযান চালায়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।বাংলা ট্রিবিউন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions