ডেস্ক রির্পোট:- দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আরও ৬১ নেতাকে দলের সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। শনিবার বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এরমধ্যে রয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৬ জন ভাইস চেয়ারম্যান ১৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১৬ জন। বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী ২১শে মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের যেসব নেতা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরআগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে অংশ নেয়ায় ২৬শে এপ্রিল ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। একই অভিযোগ ২৭শে এপ্রিল আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার করে দলটি। পরে ২৯শে এপ্রিল আরও এক নেতা এবং ৩০শে এপ্রিল ৪ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় রংপুর বিভাগে ১১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ৫, বরিশাল বিভাগে ৩, ঢাকা বিভাগে ৬, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬, সিলেট বিভাগে ১৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ ও খুলনা বিভাগে ৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাংগঠনিক বিভাগ ফরিদপুরে ও কুমিল্লায় ২ জন করে বহিষ্কার হয়েছে। এরআগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় বৃহস্পতিবার তাদের কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশ পাঠিয়ে ছিল বিএনপি।
পত্রপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক চিঠির জবাব ও নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোয় তাদেরকে বহিষ্কার করে দলটি।
চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা বহিষ্কার: রংপুর বিভাগে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপি’র পদ হারিয়েছেন মোট চারজন। এদের মধ্যে পঞ্চগড়ে আছেন দুইজন। এরমধ্যে আছে পঞ্চগড় বোদা উপজেলায় প্রার্থী হাবিব আল-আমিন ফেরদৌস। তিনি বিএনপি’র ময়দানদীঘি ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি। দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বুলবুল ছিলেন জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। অন্য দুইজন হলেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রার্থী রিয়াদ আরফান সরকার রানা (সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক) এবং দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রিয়াজুল ইসরাম রীজু (দিনাজপুর জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা)।
রাজশাহী বিভাগে চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়ে বিএনপি’র পদ হারিয়েছেন দুইজন। এরা হলেন নাটোরের লালপুরের ভিপি আরিফ (যুগ্ম আহ্বায়ক, লালপুর উপজেলা শাখা) এবং বাগাতিপাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক (যুগ্ম আহ্বায়ক, বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখা)।
খুলনা বিভাগে চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন তিনজন। এরা হলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জুলফিকার আলী ভুট্টো (সাবেক সহ-সভাপতি, গাংনী উপজেলা বিএনপি), খুলনার দিঘলীয়া উপজেলার এনামুল হক মাসুম (সাবেক সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, জেলা বিএনপি) এবং ফুলতলা উপজেলার সাব্বির আহমেদ রানা। তিনি খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
বরিশাল বিভাগে বরগুনা সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিমের সব পদ কেড়ে নিয়েছে বিএনপি। তিনি জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
ঢাকা বিভাগে পদ হারিয়েছেন চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলারই দুইজন। তারা হলেন মো. আব্দুল মান্নান (মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, জেলা বিএনপি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দল) এবং খন্দকার লেয়াকত হোসেন। শেষোক্ত জন জেলা বিএনপি’র সদস্য ছিলেন। বাকি দুইজন হলেন টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল (সহ-সভাপতি, জেলা বিএনপি) ও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার মাহবুবুর রহমান বাচ্চু হাওলাদার। তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।
ময়মনসিংহ বিভাগে দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি’র সদস্যপদ হারিয়েছেন। তারা হলেন ময়মনসিংহ সদরের হোসাইন নুর মোহাম্মদ আনির (সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, সদর থানা কৃষক দল) এবং শেরপুরের নকলার প্রার্থী মোকসেদুল হক শিপলু। তিনি জেলা বিএনপি’র সদস্য ছিলেন।
এদিকে সবচেয়ে বেশি ৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী পদ হারিয়েছেন সিলেট বিভাগে। এরা হলেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কামাল (ধর্মপাশা উপজেলার প্রার্থী), তাহেরপুর উপজেলা বিএনপি’র প্রার্থী ও একই উপজেলার সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, বিশ্বম্ভপুর উপজেলার দুই প্রার্থী উপজেলা বিএনপি’র সদস্য হারুনুর রশিদ দুলাল ও মোহন মিয়া বাচ্চু, জামালগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও জেলা বিএনপি’র সদস্য নুরুল হক আফিন্দি, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপি’র প্রথম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান সেফু এবং সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রার্থী ও জেলা বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন।
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত বাকি তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী চট্টগ্রাম বিভাগের। এরা হলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান রানা, কক্সবাজারের পেকুয়ার প্রার্থী সাফায়েত আজিজ রাজু (পেকুয়া উপজেলা বিএনপি’র সদস্য এবং কক্সবাজার জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি) এবং বান্দরবানের লামার প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি জাকের হোসেন মজুমদার। ঢাকা বিভাগেরও আছেন দুইজন। এদের মধ্যে আসাদ মাতব্বর ফরিদপুরের সালথায় এবং মাহমুদুল হাসান রবিন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা: রংপুর বিভাগের চারজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এরা হলেন: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মোরসালিন বিন মমতাজ রিপন, দেবীগঞ্জ উপজেলার আব্দুর রহিম, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার হযরত আলী এবং বীরগঞ্জ উপজেলার মামুনুর রহমান মামুন।
রাজশাহী বিভাগে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জিয়াউর রহমানও বহিষ্কৃত হয়েছেন।
খুলনা বিভাগের আছেন দুইজন। তারা হলেন: আমিরুল ইসলাম ও গোলাম রহমান। দুইজনই ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগে আছেন দুইজন। এরা হলেন: বরগুনা সদর উপজেলার সানাউল্লাহ সানি ও জয়নুল আবেদীন রাফি মোল্লা।
ময়মনসিংহ বিভাগে আছেন দুইজন। দুজনই শেরপুরের নকলা উপজেলার প্রার্থী। তারা হলেন রেজাউল করিম ও দেওয়ান মামুন।
সিলেট বিভাগের আছেন চারজন। এরা হলেন: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সিলেটের জৈন্তাপুরের ছাদ উদ্দীন সাদ্দাম, মৌলভীবাজার সদরের আব্দুল হেকিম ও হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আব্দুল আলিম ইয়াছিন।
চট্টগ্রাম বিভাগে আছেন বাকি দুইজন। এরা হলেন: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার আবু বক্কর সিদ্দীকি রুবেল ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কামাল উদ্দীন।
সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী: রংপুর বিভাগের আছেন তিনজন। এরা হলেন: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার লাইলী বেগম, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ফিরোজা বেগম সোনা এবং গাইবান্ধা সদরের শিল্পী খাতুন।
রাজশাহী বিভাগে সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুইজন। এরা হলেন: নওগাঁর পোরশা উপজেলার মমতাজ বেগম ও পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নাসরিন পারভীন মুক্তি।
খুলনা বিভাগে বহিষ্কৃত হয়েছেন একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি হলেন: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার প্রার্থী ইন্দোনেশিয়া শিতু।
ময়মনসিংহ বিভাগে বহিষ্কার হয়েছেন দুইজন। এরা হলেন: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রোকসানা বেগম এবং শেরপুরের নকলার দেওয়ান কোহিনুর।
ঢাকা বিভাগেও বহিষ্কারের আদেশ পেয়েছেন দুইজন। এরা হলেন: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার প্রার্থী তাসলিমা জেসমিন পাপিয়া ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রার্থী শাহিনুর আক্তার বিউটি।
সিলেট বিভাগে সংরক্ষিত নারী আসনের চারজন প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এরা হলেন: সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভপুর উপজেলার মদিনা আক্তার, সিলেটের জৈন্তাপুরের পলিনা রহমান, মৌলভীবাজারের রাজনগরের প্রার্থী ডলি বেগম এবং হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার আলফা বেগম।
চট্টগ্রাম বিভাগে সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে বিএনপি’র পদ হারিয়েছেন দুজন। তারা হলেন: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী রাবেয়া আক্তার রুবি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার হামিদা চৌধুরী।
তফসিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ৩০শে এপ্রিল। আগামী ২১শে মে হবে ভোটগ্রহণ। গত ২১শে মার্চ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রথম ধাপে আগামী ৮ই মে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে।