শিরোনাম
রাঙ্গামাটির চম্পকনগরে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতিদের পাশে জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন সীমানা জটিলতা ৬২ আসনে,এসব আসনের পরিবর্তন এসেছিল ২০০৮ সালে, নির্বাচনের আগেই সমাধান চেয়ে অর্ধশত আবেদন পটিয়া প্রেসক্লাবের নির্বাচন স্থগিত রাঙ্গামাটির সাজেকে পর্যটকদের ঢল, খালি নেই কোনও রিসোর্ট খাগড়াছড়িতে জিপ উল্টে নিহত ১ সাড়ে ১২ বছরের কম বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ২১১১, বাদ যাচ্ছে নাম হদিস নেই ১৬৩টি অস্ত্র ও ১৮ হাজারের বেশি গুলির,লুণ্ঠিত অস্ত্রের বেশীর ভাগ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের হাতে জেলা পর্যায়ে বিজয় মেলা ছয় দিন ও উপজেলা পর্যায়ে এক দিন : ডিসি র‌্যাব বিলুপ্তিসহ পুলিশ সংস্কারে বিএনপির ৫ সুপারিশ মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা ১৭ জানুয়ারি, আবেদন শুরু মঙ্গলবার

দায়িত্ব পালনকালে কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৭৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলো পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই সংস্থার বিভিন্ন ইউনিট। পুলিশের বেশির ভাগ সদস্য বাইরে ধুলাবালু, বৃষ্টি, তীব্র দাবদাহ ও শব্দকে উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ ও ব্যারাকে থাকা পুলিশের সদস্যরা দাঁড়িয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ডিউটি করেন।

কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, টিবি, কিডনি রোগ, হার্ট অ্যাটাক, কান ও মস্তিষ্কসহ শরীরে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া দায়িত্ব পালনকালে নানা রকম ঝুঁকি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পুলিশ সদস্যদের।

সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ও শৃঙ্খলা রক্ষায় দিনরাত ডিউটি করেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তাদের জন্য শৌচাগারের তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। এতে দুর্ভোগ পড়েন বিভিন্ন সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করা নারী ও পুরুষ সদস্যরা। আশপাশের বিভিন্ন মার্কেট, ভবন, বাস কাউন্টার ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাদের শৌচাগারের কাজ সারতে হয়। ফলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ব্যবহারের কারণে শারীরিক নানা জটিলতায় পড়েন তারা। পাশাপাশি আবাসন ব্যবস্থা, খাবারের মানসহ সবকিছুরই রয়েছে সীমাবদ্ধতা।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি পুলিশ লাইন্সে আবাসনের প্রতিটি কক্ষে গাদাগাদি করে বসবাস করেন পুলিশ সদস্যরা। একটি ১২ জনের কক্ষে ৮০ থেকে ৯০ জন পর্যন্ত বসবাস করেন। পাঁচ জনের শৌচাগার ব্যবহার করেন ১৫ জন।

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফ্লু, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নাক ও কানের সমস্যা, হৃদরোগ ও জ্বর নিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী হাসপাতালে আসেন। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নাক ও কানের সমস্যা এবং জ্বর নিয়েই হাসপাতালে আসেন বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য।

রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ ব্যারাকে থাকেন পুলিশ সদস্য আব্দুর বিপ্লব (২৫), আসিফ (২৫) ও সায়েম (২০)। প্রতিদিন সকাল কিংবা সন্ধ্যা হলেই পালাক্রমে তার বের হন ডিউটির উদ্দেশ্যে। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে তারা ডিউটি করে থাকেন। প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজের মধ্যেই থাকতে হয় তাদের।

ডিউটিকালীন সৃষ্টি হওয়া নানা রকম বিড়ম্বনার কথা জানালেন তারা। তাদের একজন আব্দুর বিপ্লব বলেন, প্রতিদিন টানা ১২ ঘণ্টা ডিউটি করি। ব্যারাকে আসা-যাওয়া নিয়ে ১৪ ঘণ্টা চলে যায়। যেদিন নাইট ডিউটি থাকে, ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে রাতের খাবার সেরে ডিউটির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়। যেহেতু টানা ডিউটি করে রাত ১০টা-১১টার পরই আবার ক্ষুধা লেগে যায়। পরে নিজেদের খরচে কিছু খেয়ে নেই। অবশ্যই দুপুর বেলা ব্যারাক থেকে সেখানে দায়িত্ব পালন করি দেখানেই খাবার পৌঁছিয়ে দেয়।

শুধু রোদে পোড়া আর শৌচাগার সমস্যা নয়, আবাসন ব্যবস্থা, খাবারের মানসহ সবকিছুরই রয়েছে সীমাবদ্ধতাশুধু রোদে পোড়া আর শৌচাগার সমস্যা নয়, আবাসন ব্যবস্থা, খাবারের মানসহ সবকিছুরই রয়েছে সীমাবদ্ধতা

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সারা দিন ১২ ঘণ্টা ডিউটি করলাম। এ সময় একটু বিশ্রাম নেবো, ছায়ায় দাঁড়াবো, বসবো, এমন ব্যবস্থা আমাদের নেই। একটু ক্লান্তি লাগছে, পাশের দোকানে চেয়ার নিয়ে আসবো। দেখা যায় চেয়ার আনার কারণে ওই দোকানদার মন খারাপ করছে। এ রকম বিভিন্ন রকম অসুবিধায় পড়তে হয় আমাদের।

ট্রাফিক পুলিশের সদস্য শফিউল্লাহ বলেন, এটা তো আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা। সব জায়গায় শৌচাগার নেই। প্রয়োজনে হলে আমাদের নিজেদের খোঁজে নিতে হয়। আশপাশে কোথাও যাওয়া লাগে। বাস কাউন্টারে যাই। বৃষ্টি হলে আশ্রয় নেওয়ার কোনও জায়গা নেই। ঝড়-বৃষ্টিসহ যতই গরম পড়ুক, যতই প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক না কেন, আমাদের রাস্তা ছেড়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়া, বসে খাওয়া-দাওয়া করারও কোনও ব্যবস্থা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যই কষ্ট করেন। ট্রাফিক পুলিশের কথা যদি বলি, তারা রোদে পুড়ে দায়িত্ব পালন করেন, ধুলাবালুর মধ্যে যে কাপড় পরে ডিউটি করেন, শরীরের ঘামে যে কাপড়টি শরীরে কয়েকবার ভিজেছে আবার শুকিয়েছে, পরদিন হয়তো ওই কাপড় পরেই ডিউটিতে আসতে হচ্ছে। অন্য পেশায় এটা কি সম্ভব? কেউ কি করে? তবে পুলিশের যে কাজের ন্যাচার সেভাবে কাজ করতে হবে। সেখান থেকে পিছু হাঁটার সুযোগ নেই। শৌচাগার থেকে শুরু করে আবাসন, খাবারের মান—সব ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। যেমন খাবারের মান বর্তমানে কিছুটা ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একজন পুলিশ সদস্য সারা দিন যে পরিশ্রম করেন, তার যে পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন, তা তিনি খেতে পারছেন না। পুলিশ লাইন্সে একজনের জায়গায় পাঁচ জন ঘুমাচ্ছেন। এসব কারণে পুলিশের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে, নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব সমস্যা সমাধান করতে হলে ব্যাপকভাবে দীর্ঘ পরিকল্পনা করতে হবে। এসব এক দিনে পরিবর্তন সম্ভব না। তবে সমস্যাগুলো নিয়ে সরকারেরও আন্তরিকতার কমতি নেই।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সময় খোলা আকশের নিচে কাজ করলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, টিবি কিডনি, হার্ট, কান ও মস্তিষ্কসহ শরীরে জটিলতা দেখা দেয়। বায়ুদূষণের কারণে দীর্ঘমেয়াদি হাঁচি-কাশি হতে পারে, এজমা হতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে একধরনের ভাইরাসেও ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হতে পারে; টিবি রোগও হতে পারে। শ্বাসনতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ট্রাফিক পুলিশ প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখে। এতে প্রোস্টেটে নানা সমস্যা হতে পারে। শব্দদূষণের কারণে কানের সমস্যা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রৌদে গরমে দাঁড়িয়ে কাজ করলে প্রতি ৩০ মিনিট পড় অত্যন্ত পাঁচ মিনিট ছায়া ও ঠান্ডা স্থানে বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন। সেটা ব্যবস্থা করতে হবে। কাজের চাপ কমাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, ‘দীর্ঘসময় কাজ করলে যেকোনও লোকই শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। একজন পুলিশ সদস্যের এক্ষে ত্রে আরও বেশি ঝুঁকি রয়েছে। ৮ ঘণ্টার বেশি লাগাতার কাজ করলে কোনও লোকের ব্রেনই কাজ করবে না। এ জন্য শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য তাদের ছুটি ও নির্ধারিত কর্মঘণ্টা, পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, যদি আমরা উৎপাদনশীল ক্ষমতা বাড়াতে চাই, তাহলে আমাদের ব্রেইনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটারও তো বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। আট ঘণ্টা কাজ সর্বজনস্বকৃীত, তাই ব্রেইনের সক্ষমতাও সেভাবে তৈরি থাকে। তবে এরপর ব্রেইন আর কাজ করতে চায় না। একইভাবে কাজের পরিবেশ, আবাসনব্যবস্থা সবকিছুই ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলে। ট্রিবিউন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions