ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের ‘রাজনীতির’ পায়তারা,বুয়েট ফের উত্তাল

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪
  • ৬৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কয়েকজন নেতার প্রবেশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেন। এর আগে, গত শুক্রবার মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের মূল গেট বন্ধ করে আন্দোলনে নামেন তারা।
তাদের দাবি, আবারও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি সক্রিয় হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, গেল ২৮ মার্চ রাত ২টার দিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতারা প্রবেশ করেন। ওই সময় বিপুল সংখ্যক এমন বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। এরপরই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নামেন তারা। এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করাসহ ৬ দফা দাবি তুলেছেন তারা। এর আগে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গভীর রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার পৈচাসিক বর্বরোচিত নির্যাতনে খুন হন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ওই ঘটনায় দেশ বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের স্বর্তস্ফূর্ত আন্দোলনের মুখে বুয়েটের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়। ওই সময় কর্তৃপক্ষ বুয়েট ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে।

এদিকে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জঙ্গী ছায়া আবিস্কার করছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠান তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কোনো জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা তদন্ত করা হবে। তবে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে বুয়েট প্রশাসন একমত। কিন্তু কারো পক্ষেই আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৮ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর একাডেমিক কাউন্সিল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলাদেশ-ভারতের সাথে হওয়া একটি চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্যাটাস দেওয়ায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়। ওই পৈচাসিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম নেয়। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাস থেকে জনমনে। এক পর্যায়ে বুয়েটে সকল ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে মাঝে মাঝেই পা রাখছে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত ছাত্রনেতারা। ফলে ফের উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাস।
গত ২৭ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে ফের রাজনীতি প্রবেশের পায়তারার অভিযোগ এনে গত শুক্রবার আন্দোলনে নামেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে ছাত্রলীগকে প্রবেশে সহযোগিতাকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণসহ ৬ দফা দাবি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের কিছু দাবি মেনে নেয়। কিন্তু সকল দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার সকাল থেকেই বুয়েট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলে সিট বাতিল করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত শুক্রবার রাতে বুয়েট ভিসির নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগকে সহযোগিতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৭ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে- ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের (স্টুডেন্ট নম্বর ২১০৪১৪১) হলের সিট বাতিল করা হল। ২. এছাড়া সার্বিক বিষয়ে তদন্তপূর্বক সুপারিশ প্রদান করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর টার্ম/সেমিস্টার ফাইনালসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।

শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করে ক্লাস, পরীক্ষা চলমান রাখায় গতকাল শনিবার সকাল থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা অভিযুক্ত ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমকে স্থায়ীভাবে হল ও একাডেমিক বহিষ্কার ও তার সাহায্যকারীদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এক লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ওই ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সাথে বুয়েটের বাকি যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তাদের একাংশের নাম পরিচয় আমরা ছবি এবং ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করেছি। তারা হলো এ. এস. এম. আনাস ফেরদৌস (আইডি: ১৮১৮০০৪), মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল (আইডি: ২১০৬১০১), অনিরুদ্ধ মজুমদার (আইডি: ২১০৬০৭৯), জাহিরুল ইসলাম ইমন (আইডি: ২১১২০৩১) এবং সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাত ( আইডি : ২১০৬১২৬)। আমরা ইমতিয়াজ রাব্বির মতোই বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধানের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করায় এদের সকলের বুয়েট থেকে স্থায়ী একাডেমিক এবং হল বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া যাদেরকে তারা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়নি তাদেরও যেন দ্রুত শনাক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে বহিরাগত ঠেকাতে অক্ষম ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) প্রফেসর মিজানুর রহমানেরও পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম, সেমিনার রুম, ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন জায়গার ব্যবহার ডিএসডাব্লিউ আওতাধীন। উনি বলেছেন, এ জায়গাগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে উনি অনুমতি দেননি। এক্ষেত্রে উনার অনুমতি ব্যতিরেকে বহিরাগতদের এ জায়গাগুলো ব্যবহার করার মতো ধৃষ্টতামূলক আচরণ ডিএসডাব্লিউ এর দায়িত্বপালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এমন ডিএসডাব্লিও এর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ চাই।

তবে শিক্ষার্থীর এমন দাবি অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন বুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার। তিনি বলেন, ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের কোনো গাফিলতি ছিল না। বহিরাগতরা তাঁর অনুমতি নেয়নি। এছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখানো হবে বলেও জানান ভিসি। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ যেসব পরীক্ষা ছিল সেখানে উপস্থিত হয়নি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা পরীক্ষা বর্জন করে বোকামি করেছে। বরং তারা পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানাতে পারতো। সুতরাং নিয়ম অনুযায়ী আজ যে সব পরীক্ষা ছিলো, সেখানে তাদের অনুপস্থিত দেখানো হবে। নিয়ম মত রিটেক হয়ে যাবে। পরবর্তীতে পরীক্ষার জন্য আবেদন করলে, একাডেমিক কাউন্সিল বিবেচনা করতে পারে। অন্যদিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, বুয়েট আইন মত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভিসি শুধু হল হতে বহিষ্কার করতে পারে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যবস্থা নেবে একাডেমিক কাউন্সিল।

এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে ভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অংশ বলে মনে করছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। শুক্রবার রাত থেকে তারা অভিযুক্ত বুয়েট শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায়। এ প্রেক্ষিতে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল বলেন, শুক্রবার আমাদের আমাদের আন্দোলনের পর তথাকথিত রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু ব্যক্তিবর্গকে ফেসবুকে পোস্ট করে আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপপ্রচার চালাতে দেখি। আমরা তাদের এমন বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। আমরা সবসময়ই বুয়েটের সংবিধানে থাকা ‘বুয়েটে সকল রকম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সংঘবদ্ধ এবং যেকোনো মূল্যে বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির হাত থেকে মুক্ত রাখতে বদ্ধ পরিকর। আমরা আবারও সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের এসকল দাবি কেবলমাত্র কোনো বিশেষ ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুয়েটের সংবিধান অনুযায়ী সকল রকম ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছি।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বিশাল বহর নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদেরকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বুয়েটে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের এধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার প্রেক্ষিতে, ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions