ডেস্ক রির্পোট:- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে গতকাল সূচকের বড় পতন হয়েছে। ধারাবাহিক সূচকের পতনের ফলে ডিএসই’র সার্বিক মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার ৮০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে, যা প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন্ন। এতে অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তলানিতে নেমে এসেছে বাজার। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন লাখো বিনিয়োগকারী।
এ ছাড়া বুধবারের পতনের কারণে টানা তিন কার্যদিবস ঢাকার শেয়ারবাজার দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকায় ডিএসইর প্রধান সূচক ১৭৯ পয়েন্ট হারিয়েছে। এদিন ডিএসইএক্স ৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫,৭৬২-এ, যা ২০২১ সালের ১২ মে’র পর সর্বনিম্ন। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গত ১৮ই জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতি তুলে নেয়ার পর থেকে প্রধান সূচকটি মোট ৫৭২ পয়েন্ট হারিয়েছে এবং বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।
অব্যাহত দরপতনের মধ্যে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। পতনের প্রকৃত কারণ খুঁজে পাচ্ছে কেউ। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদও থামছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ তত বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে।
এরমধ্যে ব্যাংক আমানতের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে শেয়ারবাজারের টাকা ব্যাংকে যাচ্ছে।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে সুদের হার বেড়েছে। বর্তমানে আমানতের সুদের হার সাড়ে ১১ শতাংশ। এ কারণে শেয়ারবাজার থেকে টাকা ব্যাংকে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফোর্সড সেল করছে। এসব কিছুর চাপ পড়েছে বাজারে। এতে বাজারের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইতে বুধবার সব ধরনের সূচক নেমেছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭১.৭০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৬২.৬৮ পয়েন্টে। যা প্রায় বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ২০২১ সালের ১২ই মে ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছিল ৫ হাজার ৭৫০.৪৯ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়া সূচক ১৪.৮১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৫২ পয়েন্টে এবং ডিএস ৩০ সূচক ১২.৮৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৬১৩ পয়েন্ট। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে উঠে আসে। কিন্তু চলমান ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক এখন ৫ হাজার ৮৩৪ পয়েন্টে নেমে গেছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স ৭২.১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৯৫৬ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৪.৮৩ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ৫৭৯ পয়েন্টে, শরিয়া সূচক ৭.২৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৪ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ১১.২৭ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৬৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এদিন, সিএসইতে ২২৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৩টি কোম্পানির, কমেছে ১৬৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৯টির। দিন শেষে সিএসইতে ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ২৮ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন থাকবে। এটাই নিয়ম। তবে, পতন বাজারে শেয়ার লসে বিক্রি না করে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে।
ফয়সাল নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ফ্লোর প্রাইজ আরোপের সময় আমার লস ১০ থেকে ১৩ শতাংশর মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু ফ্লোর প্রাইজ তুলে দেয়ার পর সেই লস ৩১ শতাংশে পৌঁছেছে বর্তমানে। পুঁজির ১৮ শতাংশই হারিয়েছি। সামনে কোন দিকে যাবে সেই চিন্তাই করছি।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারবাজারে মন্দার জন্য অনেক কারণ থাকতে পারে। এর একটা কারণ হলো বাজারের প্রতি অনাস্থা। অনেক বিনিয়োগকারীর কোটি কোটি টাকা দেড় বছর ধরে আটকে ছিল। তাদের মধ্যে একটা অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে সুশাসন ফেরাতে হবে, স্বচ্ছতা ফেরাতে হবে। সুশাসন ও স্বচ্ছতা ফিরলে বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ফিরবে।
বিও হিসাব কমেছে ৪৩ হাজার ৩৪০টি: এদিকে গত দুই মাসের ব্যবধানে শেয়ারধারী বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ৪৩ হাজার ৩৪০টি। অন্যদিকে কোনো শেয়ার না থাকা বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ হাজার ৯৭৭টি। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২১শে জানুয়ারি শেয়ারধারী বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৫ হাজার ৭৬৩। সর্বশেষ ২৫শে মার্চ তা কমে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৪২৩টিতে। ২১শে জানুয়ারি শেয়ার না থাকা বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪০২। ২৫শে মার্চে তা বেড়ে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৯-তে উন্নীত হয়।