মস্তিষ্ক-হৃৎপিণ্ড-রক্তে জটিলতা বাড়ায় করোনা টিকা : গবেষণা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৮০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- করোনা টিকা ফাইজার-মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডোজের প্রভাবে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড ও রক্তে জটিলতা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ে বলে জানা গেছে এক গবেষণায়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থা গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডেটা নেটওয়ার্কের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে গবেষণাটি।

গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে বিশ্বের ১৩টি দেশের ৯ কোটি ৯০ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছে ডেটা নেটওয়ার্ক। গত সপ্তাহে গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ভ্যাকসিন’। প্রবন্ধে গবেষকরা বলেছেন, এই ৯ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে যারা এমআরএনএ টিকা ফাইজার এন বায়োএনটেক কিংবা মডার্না টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, তাদের একাংশ ইতোমধ্যে মায়োকার্ডিটি নামে হৃৎপিণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই সমস্যায় আক্রান্তরা হার্টের মাংসপেশির সার্বক্ষণিক প্রদাহে ভোগেন।

আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৃতীয় ডোজ যারা সম্পূর্ণ করেছেন, তাদের একাংশ আক্রান্ত হয়েছেন পেরিকার্ডিটিতে। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে হৃদপিণ্ডের কার্ডিয়াক মাংসপেশিতে প্রদাহ হয়। গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডেটা নেটওয়ার্কের গবেষকদের মতে, ফাইজার এবং মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ মায়োকার্ডিটির ঝুঁকি ২ দশমিক ৯ গুণ এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৃতীয় ডোজ পেরিকার্ডিটির ঝুঁকি ৬ দশমিক ন গুণ বৃদ্ধি করে।

এছাড়া অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অন্যান্য ভাইরাল-ভেক্টর করোনা টিকা এবং এমআরএনএ টিকা ফাইজার-মডার্নার ডোজে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, গুলিয়ান-ব্যারে সিন্ড্রোম এবং মায়েলিটিসের মতো শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে ২ দশমিক ৫ গুণ। গুলিয়ান ব্যারে সিন্ড্রোমে আক্রান্ত রোগীরা স্নায়বিক সমস্যায় ভোগেন আর মায়েলিটিসে আক্রান্তরো ভোগেন মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের প্রদাহে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

মহামারি শুরু হওয়ার অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে ২০২০ সালের আগস্টে প্রথম করোনা টিকা স্পুটনিক ৫ বাজারে আনে রাশিয়া। তবে জরুরি অবস্থায় এই টিকার ব্যবহার বিষয়ক ছাড়পত্রের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সস্থার কাছে আবেদন করেনি মস্কো। ডব্লিউএইচও’র ছাড়পত্র পাওয়া প্রথম করোনা টিকার নাম ফাইজার এন বায়োএনটিক। ২০২০ সালের নভেম্বরে এই টিকাটি বাজারে আসে।

এরপর একে একে বাজারে আসে মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসনসহ বিভিন্ন করোনা টিকা।

টিকা আবিষ্কারের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মোট ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডোজ ব্যবহার করা হয়েছে বলে গবেষনা প্রতিবেদনে জানিয়েছে গ্লোবাল ভ্যাকসিন নেটওয়ার্ক।

ডব্লিউএইচওর অন্যতম গবেষণা অংশীদার নিউজিল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা জিভিডিভি জানিয়েছে, করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এ পর্যন্ত ১৩ ধরনের শারীরিক জটিলতা ও সমস্যা তারা রেকর্ড করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে টিকা নেওয়ার পর এসব সমস্যায় রোগীরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন জিভিডিভির গবেষণকারা।

গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডেটা নেটওয়ার্কের যে বিজ্ঞানী দলটি এ গবেষণা পরিচালনা করেছে, সেই দলের অন্যতম সদস্য এবং ডেনমার্কের স্টাটেন্স সিরাম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ক্রিস্টিনা ফেকসোভা এক বিবৃতিতে নিজেদের গবেষনা প্রবন্ধ সম্পর্কে বলেন, ‘ব্যাপারটি এমন নয় যে আমরা করোনা টিকার ডোজকে ক্ষতিকর বলে প্রচার করছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন করোনা টিকার ডোজ নিয়েছেন এবং তাদের অধিকাংশই হয়তো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেননি।’

‘কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগেছেন বা ভুগছেন— এমন মানুষের সংখ্যা কম হলেও তারা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাদের এসব সমস্যা টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে এই বার্তা দেয় যে, করোনা টিকাগুলো আরও নিরাপদ ও নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions