ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন :- প্রায় দশ বছর পর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক এসে দেখলাম, যানজটের ক্ষেত্রে শহরটি আগের মতোই আছে। এতদিন পর যানজটের তুলনামূলক যে তীব্রতার কথা ভেবেছিলাম, বাস্তবে তা হয়নি। অথচ লোকসমাগম দশ বছর আগে যা দেখে গিয়েছিলাম, সে তুলনায় বেড়েছে। বিদেশিদের পদচারণায় ব্যাংকক শহর এখন মুখর; চারদিকে লোকে লোকারণ্য, যার মধ্যে আরব দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের নারী-পুরুষের সংখ্যা সর্বাধিক।
এসব দেশের লোকজন চিকিৎসাসহ ট্যুরিজমের স্থান হিসাবে থাইল্যান্ডকে বেছে নিয়েছেন। কারণ, তাদের দেশে এখনো উন্নততর চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। তাছাড়া আরেকটি কারণ হলো, বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটসহ থাইল্যান্ডের আইনশৃঙ্খলাও বেশ উন্নতমানের। এদেশে এসে বিদেশিদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। হোটেলসহ রাস্তাঘাট, বিনোদন কেন্দ্রগুলো পর্যটকবান্ধব হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ এখন থাইল্যান্ড ভ্রমণ করে থাকেন।
আর চিকিৎসাক্ষেত্রেও এখানকার কয়েকটি হাসপাতাল বেশ সুনাম অর্জন করেছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ এখন ব্যাংককের বামরুনগ্রাদসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন। কারণ, সিঙ্গাপুরের তুলনায় এখানে চিকিৎসা খরচ অনেক কম। আমি নিজেও ব্যাংককের রুতনিন আই হাসপাতালে চোখ দেখাতে এসেছি। কারণ, এ বয়সেও লেখাপড়া করায় আমার চোখে ডিজিজ হয়েছে।
অর্থাৎ দুই চোখের দুই কোণা সংকুচিত হয়ে গেছে। এখানকার ডাক্তার চোখ দেখে বললেন, একনাগাড়ে বেশিক্ষণ ধরে বই পড়া, ল্যাপটপে কাজ করা, টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি কোনো কিছুই করা যাবে না। এ অবস্থায় এখানে অবস্থানের বাকি সময়টুকু হোটেল রুমে বসে টেলিভিশন দেখা, বই বা কোনো কিছু পড়া বাদ দিয়ে একটু ঘোরাঘুরি করেই দেশে ফিরে যাব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে যখন ব্যাংকক এসেছিলাম, তখন ‘সূমনা’স হাউজ নামে ছোট্ট একটি গেস্ট হাউজের অতি ছোট একটি কক্ষে থাকার অভিজ্ঞতাও আমার আছে। মোটামুটি দুই আড়াই কাঠা জমির ওপর একজন থাই মহিলা তিনতলা একটি ভবন নির্মাণ করে সেখানে হোটেলটি পরিচালনা করায় কম মূল্যে রুম পাওয়া যেত বলে বাংলাদেশিসহ অনেকেই সেখানে এসে উঠতেন। আর আমিও পরপর দু’দফায় হোটেলটিতে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলাম। সে অবস্থায় একদিন নিচতলার বারান্দার এক কোণায় একজন বাংলাদেশি মহিলাকে স্টোভ জ্বালিয়ে ভাত-তরকারি রান্না করতে দেখলাম। সূমনা’স হাউজে খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। শুধু বেড। তো, ভদ্রমহিলাকে ভাত-তরকারি রান্না করতে দেখে জিজ্ঞাসা করে যা জানলাম, তা এক অনন্য কাহিনিই বটে!
ভদ্রমহিলার স্বামী একজন ব্যবসায়ী; তিনি মানিকগঞ্জ থেকে গাড়ি চালিয়ে ঢাকার বাসায় ফেরার পথে পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় মারাত্মক দুর্ঘটনাকবলিত হন এবং ঢাকার কোনো হাসপাতালে তার সুচিকিৎসা না হওয়ায় পরে তাকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। আর সেখানে মাসের পর মাস চিকিৎসা করাতে পরিবারটি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ায় অবশেষে ভদ্রমহিলা সূমনা’স হাউজের নিচতলার ছোট্ট একটি কক্ষে আশ্রয় গ্রহণ করে সামনের বারান্দায় স্টোভে রান্না করে নিজে খাবার পাশাপাশি হোটেলের অন্য বোর্ডারদের মাঝে তা বিক্রয় করা শুরু করেন।
এভাবে হোটেলটির ১৮/২০টি কক্ষের প্রায় সব বোর্ডারই কাস্টমার হয়ে ওঠায় মোটামুটি থাকা-খাওয়াসহ তার স্বামীর চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কিছু অর্থের সংস্থান হওয়ায় তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং পরিশ্রম দিয়ে রান্না-বান্নার কাজটি জোরেশোরে চালাতে থাকেন। কিন্তু এক সময় হোটেল মালিক ‘সূমনা’ বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেন এবং তার হোটেলে বোর্ডারদের জন্য ডাইনিং ফ্যাসিলিটি না থাকা সত্ত্বেও হোটেলের নিচতলার বারান্দায় রান্না-বান্নার কাজটি বন্ধ করে দেন।
সে অবস্থায় হাসপাতালের বেডে শায়িত অসুস্থ স্বামীকে রেখে ভদ্রমহিলা ভীষণ বিপাকে পড়ে যান এবং সুুকুম্বিত এলাকারই ৩ নম্বর সড়কে (ছিমছাম) একটি রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে নিজের নামে রীতিমতো ছোট্ট একটি রেস্টুরেন্ট চালু করে দেন। আর ব্যাংকক শহরের সুকুম্বিত এলাকার রোড থ্রিতে অবস্থিত ‘মনিকা’স কিচেন নামক ছোট্ট সেই রেস্টুরেন্টে আজ এখনো বাংলাদেশিদের আড্ডা জমে ওঠে। আমি এবারে এসেও সেখানে লাঞ্চ, ডিনার সম্পন্ন করেছি। যদিও মনিকা নামের সেই মহিলা আজ আর রেস্টুরেন্টটির মালিক নেই; শুনেছি তার ছোট বোনের হাতে এখন মালিকানা চলে গেছে। যাক সে কথা, এখন অন্য প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
ঢাকা থেকে আসার পথে একজন সাবেক মন্ত্রীও আমার সহযাত্রী ছিলেন। তো, রুতনিন হাসপাতালে চোখ দেখানোর ফাঁকে একদিন বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে গেলে দেখতে পেলাম সাবেক সেই মন্ত্রী মহোদয় লোকজনসহ সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, মেডিকেল চেকআপের জন্য তিনি বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে এসেছেন। আমিও আমার কথা বলে বললাম যে, এখানে পাশেই একটি হোটেলে উঠেছি।
উল্লেখ্য, ব্যাংকক এলে আমি সুকুম্বিত এলাকার কোনো হোটেলকেই বেছে নিই। কারণ, এ এলাকায় এখন অনেক বাংলাদেশি ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, যাদের অনেকেই হোটেল-রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করেন। এমনকি আমার নিজ জেলা পাবনা শহরের দুই ব্যক্তিও এখানে রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছেন। যাই হোক, সাবেক মন্ত্রী মহোদয় মেডিকেল চেকআপ করাতে ব্যাংকক এসেছেন জানতে পেরে ভালোই লাগল। সিঙ্গাপুর বাদ দিয়ে তিনি যে ব্যাংকক এসেছেন, এজন্য মনে মনে তাকে সাধুবাদও জানালাম।
কারণ, আমাদের দেশে একবার মন্ত্রী-এমপি হলে তাদের অনেকেরই টাকার অভাব থাকে না; অনেকেই অফুরন্ত টাকা-পয়সার মালিক হয়ে যান। আর সে অবস্থায় চিকিৎসার জন্য বিদেশের ক্ষেত্রে তারা ভারত, থাইল্যান্ড পছন্দ করেন বলে মনে হয় না। একজন এমপি সাহেবকে জানি বা চিনি, এসব বিষয়ে তিনি আমেরিকা, ইংল্যান্ড ছাড়া কুলি-ফুলিও ফেলেন না। মেডিকেল চেকআপ হোক বা অন্য কারণ হোক, বছরে দু’-চারবার আমেরিকা, ইউরোপ ভ্রমণ চাই-ই চাই।
আর এসব কারণে আমাদের দেশটাকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে, সে কথাটি বলাই বাহুল্য। সুতরাং আমলা, মন্ত্রী, এমপিসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার লোকজনের বিদেশ ভ্রমণের পেছনে বছরে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়, সে বিষয়টিও সরকারের ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করি। যাক, সে কথা। এবারে মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।
লেখাটির শুরুতে থাইল্যান্ড দেশটিকে পর্যটকবান্ধব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও শুধু থাইল্যান্ড নয়, এশিয়ার অন্যান্য দেশও পর্যটকবান্ধব। তাছাড়া পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্রগুলোও পর্যটক আকর্ষণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। আর বৈদেশিক মুদ্রা মানেই ডলার। অথচ এক্ষেত্রে আমাদের অর্জন একেবারেই নগণ্য; একদম তলানিতে। বরং আমাদের দেশের যুবকরা মরুভূমির দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কষ্টসহিষ্ণু কাজ করে যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠায়, আমরা তার অপচয় করি। আমাদের দেশের সাধারণ বা নিুবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা কল-কারখানায় শ্রম দিয়ে, কম পারিশ্রমিকে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আনয়ন করে, আমরা ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করি।
আর এসব নানাবিধ অনিয়ম, অনাচার, দুর্নীতির কারণে বর্তমান অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ায় আমাদের আইএমএফের শর্ত মেনে ঋণ পেতে গরিবের মাথায় বোঝার ওপর শাকের আঁটি চাপিয়ে দিয়ে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। কারণ, আইএমএফের ঋণ পেতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদি খাতে মূল্যবৃদ্ধির ফলে তার বিরূপ প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে জনগণের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে। আর সেক্ষেত্রে ধনিক শ্রেণির আর্থিক ভিত্তি শক্ত থাকায় তাদের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু অসহায় দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ভার সামলাতে তারা ন্যুব্জ হয়ে পড়বেন।
এ শ্রেণির মানুষের ঘরে ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা হবে। আবার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হিসাবে মাথাপিছু ঋণের সিংহভাগও তাদের ঘাড়ে চেপে থাকবে। কিন্তু তারপরও আইএমএফের ঋণ আমাদের চাই-ই চাই। কারণ, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণ বলে কথা! অথচ এ বৈদেশিক মুদ্রাই আমরা কত এলোমেলোভাবে খরচ করেছি। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণ করেছি এবং করছি; বিদেশে পাচার পর্যন্ত করে দিয়েছি এবং দিচ্ছি।
আবার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধা এবং তৈরি পোশাক শিল্পের ওপরই নির্ভর করে আছি; যার যে কোনো একটিতে ধস নামলেই আমাদের অর্থনীতির বারোটা বেজে যাবে। অথচ আমাদের দেশের জন্য পর্যটনশিল্পও জাতীয় অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে বা পারত। আর এমন একটি অপার সম্ভাবনাকে পঞ্চাশ বছরেও কাজে লাগানোর ব্যর্থতার কথা বলেই আজকের লেখাটির উপসংহার টানতে চাই।
পর্যটনক্ষেত্রে বিদেশিদের আকর্ষণ করতে পারলে বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানি করে আমরা যে অর্থ পাই, তা দ্বিগুণ করা সম্ভব। কারণ, অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে লাখ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটলে এদেশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় অন্যান্য মাছ এবং চিংড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেক্ষেত্রে ভ্যালু অ্যাড হয়ে একই পরিমাণ চিংড়ির দ্বিগুণ, তিনগুণ মূল্য পাওয়া যাবে। তাছাড়া আম, কাঁঠাল, লিচুর মতো আমাদের দেশীয় ফলেও ভ্যালু অ্যাড হয়ে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে।
থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটে যে পরিমাণ মাছ এবং ফলমূল সেদেশে আগত পর্যটকরা কনজিউম করেন, তাতে করে শুধু কৃষিপণ্যের ভোক্তা হিসাবেই প্রতিদিন তারা লাখ লাখ ডলার পরিশোধ করেন। অথচ আমাদের দেশের মাছ, আম, লিচু ইত্যাদি অনেক কিছুই থাইল্যান্ডের এসব খাদ্যদ্রব্য অপেক্ষা সুস্বাদু। তাছাড়া আমাদের দেশের বেঙ্গল গোটের মাংসও বিদেশিদের জন্য একটি আকর্ষণীয় খাবার।
যদিও এসব খাসির মাংস এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে; তবে এসব মাংস দ্বারা পর্যটকদের রসনা তৃপ্ত করতে পারলে, বিদেশে রপ্তানি না করেও দুই-তিনগুণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেত। এর কারণ হিসাবে ‘ভ্যালু অ্যাডে’র কথা আগেই বলেছি।
এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশে পর্যটক নেই বা আসেন না কেন? এ প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তর একটাই-পর্যটন খাতের উন্নয়নের ভারও সরকারি আমলাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রটিও গত পঞ্চাশ বছর ধরে সরকারি আমলারাই ঘষামাজা করে চলেছেন। পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যানসহ এ সংক্রান্ত যত প্রতিষ্ঠান আছে, তার সব পদ-পদবিই সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা অলংকৃত। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’ কথাটির মতোই পর্যটন ক্ষেত্রের অবস্থা হয়েছে। অন্যথায়, কাপ্তাই লেকের বার্ডস আইভিউ দেখলেই যেখানে বোঝা যায়, এখানে পর্যটনের কী অপার সম্ভাবনা ছিল বা রয়েছে, সেই কাপ্তাই লেক নিয়ে কোনো পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হলো না কেন? কক্সবাজারকেই বা কংক্রিটের বস্তি বানিয়ে ফেলা হলো কেন? সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এসব স্থানে দেশি-বিদেশি বড় বিনিয়োগই বা আকর্ষণ করা গেল না কেন? অথচ, কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান একবার লেকের ভেতর একটি সম্মেলন পর্যন্ত করেছিলেন।
আবার কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে মুগ্ধ হয়ে ডেনমার্কের অধিবাসী আমার এক বন্ধু প্রায় চল্লিশ বছর পূর্বে আমাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। অথচ সেই কাপ্তাই লেক, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দূরে থাক, সেসব দেশের দশ ভাগের এক ভাগ অনুপাত পর্যটন শিল্পও আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। কারণ, আমরা কাজে নয়; কথায় বিশ্বাস করি। আর সরকারি আমলাদের হাতে এমনসব কাজের দায়িত্ব পড়লে তো কথাই নেই।
পরিশেষে বলতে চাই, দীর্ঘ দশ বছর পর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক এসে সেখানকার রাস্তাঘাট, অলিগলিতে পর্যটকের ঢল দেখে ওপরের কথাগুলো না বলে থাকতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আর আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পের এমন দৈন্যদশার জন্য, এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত উন্নয়নে ব্যর্থতার জন্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত সবার দুঃখিত এবং লজ্জিত হওয়া উচিত বলেই মনে করি।
ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট