নাহিদ ইসলাম:- পেশার ক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে এ আই প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবেপেশার ক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে এ আই প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ছবি: সংগৃহীত
দুই মাস ধরে মার্কিন মুল্লুক থেকে শুরু করে ইংরেজি ভাষী সব দেশেই কিছু শব্দ বেশি বেশি শোনা যাচ্ছে, যেমন—এআই, এনএলপি, চ্যাট বট, জেনারেটিভ এআই মেশিন লার্নিং ইত্যাদি। শব্দগুলো হোয়াইট কলার কর্মীদের জীবনে বিভীষিকা হয়ে দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে ভয়ংকর শব্দটি হলো ‘চ্যাট জিপিটি’। এর পেছনে নাটের গুরুর ভূমিকায় আছে ওপেন এআই।
ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিস্কোভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান গত বছরের ৩০ নভেম্বর তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ওএনএলপি-ভিত্তিক চ্যাট বট, চ্যাট জিপিটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আর সেটিই হয়েছে কাল। পেনসিলভানিয়ার হোয়ারটন বিজনেস স্কুলের এমবিএ ক্লাসের পরীক্ষায় চ্যাট জিপিটি বাকি সব শিক্ষার্থীর পেছনে ফেলে দিয়েছে। এটি নিয়ে এহেন কেলেঙ্কারির খবর আসার পরে জানা গেল, প্রযুক্তিবিষয়ক মার্কিন মিডিয়া কোম্পানি সি-নেট, অনেক মাস ধরেই তাদের প্রকাশিত আর্টিকেল লেখার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে!
পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তো সামান্য ব্যাপার মাত্র। প্রবন্ধ কিংবা পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে শুরু করে চ্যাট জিপিটি নামের এআই চ্যাট বট কোড লিখতেও সক্ষম।
এমনিতেই ২০২২ সালে অ্যালফাবেট, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তিজগতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৭০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পর উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মজীবীরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতোই তাঁদের পেশাজীবনে চ্যাট জিপিটির আবির্ভাব। এমনকি সার্চ ইঞ্জিন ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি গুগল ‘কোড রেড’ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে।
চ্যাট জিপিটির মতো চ্যাট বটের সুবিধা হলো, সঠিক শব্দ চয়নের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিষয় তাকে লিখে বুঝিয়ে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে। এরপরই চ্যাট জিপিটি তার ডেটাবেইস থেকে খুঁজে খুঁজে তথ্য সংগ্রহ করে তা সহজবোধ্য ভাষায় উত্তর আকারে ব্যবহারকারীর কাছে উপস্থাপনা করবে। ব্যবহারকারীকে একটা একটা করে আর সাইট ঘেঁটে তথ্য খুঁজতে হবে না। সময় আর পরিশ্রম দুটোই কমে যাবে।
কোনো ঘটনার বিবরণ, বিশ্লেষণ, গাণিতিক সমস্যার সমাধান, বিশালাকৃতির প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ, হিসাব প্রতিবেদন প্রস্তুত করা থেকে গবেষণার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ করে হাইপোথেসিস গঠন ও পরীক্ষণ পর্যন্ত অনেক কাজেই সহায়তা করতে পারে চ্যাট জিপিটি। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং, ফিন্যান্স, শিক্ষকতা, গবেষণা, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, আইনি সেবা, ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে যেসব পেশাতেই তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, উপস্থাপন ইত্যাদি দক্ষতা প্রয়োজন হয়, সেসব ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
পেশার ক্ষেত্রে আগামীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হলে হতাশ না হয়ে এ আই প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ আইভিত্তিক বিভিন্ন চ্যাট বট, স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইমেজ জেনারেটর ইত্যাদি কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য জরুরি হলো সঠিক ‘প্রম্পট’ লিখতে শেখা। ভাষার ওপর দখল থাকলে, বিশেষ করে ইংরেজি ভালোমতো জানলে, যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে পারলে এবং সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করতে পারলে এ আই দিয়ে সহজেই অনেক কাজ সম্পন্ন করা যাবে। আর দক্ষতা অর্জনে অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই দেরি না করে আজই শুরু হোক এ আই জগতে পদচারণ।
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, সি নেট, দা ভার্জ