ডেস্ক রির্পোট:- খাদ্য জরুরি হলেও তার চেয়ে বেশি জরুরি নিরাপদ খাদ্য। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্যের ঝুঁকিরই কারণ নয়, বরং দেহে রোগের বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। নিরাপদ খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার
–: দেশ খাদ্য পরিস্থিতির বর্তমান কী অবস্থা?
ড. দেবাশীষ সরকার: জীবনধারণের জন্য আমরা যা খাই সেটাকেই খাদ্য বলা হলেও মূলত খাদ্য বলতে নিরাপদ খাদ্যকেই বোঝায়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। গ্রামীণ এলাকার অল্প আয়ের মানুষ সব ধরনের খাবার কিনতে পারে না, ফলে নিরাপদ খাবারে তাদের মনোযোগ কম। গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় যারা থাকে তারা হয়তো কোনোরকমে ডাল-ভাত খেতে পারে। কিন্তু পুষ্টিকর খাবার যেমন, মাংস, ডিম, দুধসহ আরও কিছু খাবার তারা কিনে খেতে পারে না। কারণ, তাদের আয় সাপোর্ট করে না। পক্ষান্তরে শহর এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বসবাস করে। ফলে দাম একটু বেশি হলেও তারা বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনে খেতে পারে।
—-: সুস্থ থাকার জন্য আমাদের কী ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত?
ড. দেবাশীষ সরকার: আমাদের দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসে রয়েছে ভাত, আলু। কিন্তু আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে হলে এবং দীর্ঘ জীবন লাভ করতে হলে সুষম পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শুধু ভাত-আলু খেলে চলবে না। স্বল্প আয়ের মানুষ হলে ডাল খেতে হবে। কারণ, ডাল প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। এ ছাড়া এটা অনেকটা সহজলভ্য এবং কম দামে পাওয়া যায়। প্রাণিজ আমিষ যেমন মাছ, মাংস এগুলোর দাম বেশি বলে সবাই খেতে পারে না। আমরা তাদের ডিম ও ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিই। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিদিন মাছ-মাংস খাওয়ার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়নি। বিশ্ব খাদ্য দিবসে আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
—-: এ বছরের খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. দেবাশীষ সরকার: দেখুন, এ বছর খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়। ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’। খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত যে কৃষক-শ্রমিক, তারা পশ্চাতে রয়েছে। যারা উৎপাদন করছে তাদের পেছনে রাখা যাবে না। তারাও যেন নিরাপদ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের কৃষিজমি দিন দিন কমছে। প্রতিবছর কয়েক লাখ লোক আমাদের জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে।
—-: কৃষকদের জন্য করণীয় কী?
ড. দেবাশীষ সরকার: দেশীয় বিজ্ঞানীদের অধিক উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবনে মনোযোগ দিতে হবে। অধিক উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এগুলো সার্বিকভাবে উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করবে। পুষ্টিনির্ভর শাকসবজি চাষ এবং খাবার প্রস্তুত প্রক্রিয়া সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে হবে। খরা, জলমগ্ন এবং লবণাক্ত এলাকার উপযোগী জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)।
—-: বিশ্বমন্দা দেখা দিলে আমাদের দেশে কী অবস্থা হতে পারে?
ড. দেবাশীষ সরকার: যেসব দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক যে আভাস দিয়েছে, তাতে কিন্তু বাংলাদেশের নাম নেই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাম রয়েছে। আপনি দেখেন, করোনার সময় অনেকে বলেছিল দেশে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। আমাদের জাত আছে, প্রযুক্তি আছে, ফসল উপযোগী আবহাওয়া আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আমরা ফসল উৎপাদন করতে পারব। ফলে আমাদের দেশে দুর্ভিক্ষের কোনো আশঙ্কা নেই। প্রয়োজনে আমরা আমদানিনির্ভর খাবার কম খাব।
—–: আগামী দিনে আমাদের করণীয় কী?
ড. দেবাশীষ সরকার: ফসল উৎপাদনের পরেও আমরা অনেকটা নষ্ট করে ফেলি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কীটপতঙ্গের আক্রমণ ও হিমাগারে সংরক্ষণের সময়ও ফসল নষ্ট হয়। চাষাবাদের পরে ২৫-৪০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়। সবাই সচেতন হলে এটা কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা প্রচুর খাদ্য অপচয় করি। এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রতিবছর আমরা ১ কোটি টন খাবার অপচয় করি। একজন মানুষ বছরে ৬৫ কেজি খাবার নষ্ট করে। এই অপচয় থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। খাদ্য অপচয় এবং উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি কমিয়ে আনতে হবে। আলু-চালসহ আমাদের অনেক খাদ্যেই পর্যাপ্ততা আছে। সুতরাং দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আরেকটা বিষয়, আমাদের কৃষিজমির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে।আজকের পত্রিকা