ডেস্ক রির্পোট:- ‘চাঁদের মতো ফুটফুটে একটা শিশু। তার তো কোনো শত্রু থাকার কথা না। ঈদের জামা কাপড় কিনে দিয়েছি। তার পরে আমার নাতনিডারে কসমেটিকস দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে এসে মেরে ফেলেছে ওর সৎ মা। ওই খুনির সঙ্গে দেখা হলে তাকে জিজ্ঞাসা করব; আমার নিষ্পাপ নাতনিডারে কেন এভাবে মারল। তার তো কোনো দোষ নেই।’
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে আহাজারি করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু জোনাকি খাতুনের (৯) নানা সুরুজ মিয়া।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে যশোর শহরের রেলস্টেশনস্থ মডেল মসজিদের পেছনে একটি ডোবা পুকুর থেকে শিশু জোনাকির এই মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জোনাকির মুখ, হাত, পা ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এর আগে, গত সোমবার বেলা ১০টার দিকে নিখোঁজ হয় জোনাকি। ঘটনার দিন রাতেই যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় নিখোঁজ বিষয়ে জিডি করে তার পরিবার। জোনাকি রেলস্টেশন এলাকার ইজিবাইকচালক শাহীন তরফদারের মেয়ে। সে তার বড় ভাই ও বোনের সঙ্গে বেনাপোলের পোড়াবাড়ি গ্রামে নানা বাড়িতে থাকত। গত শুক্রবার নানা বাড়ি থেকে সৎ মায়ের সঙ্গে জোনাকি যশোরে আসে।
নিহত জোনাকির নানা সুরুজ মিয়া বলেন, জোনাকির বাবা শাহীন তার মা কহিনুরকে রেখে শহরের রেলগেট এলাকায় নার্গিস বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করে। তাদের সংসারে জোনাকি ছাড়াও তার আরও দুই ভাই বোন রয়েছে। শাহীন অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করায় কোহিনুর তার তিন সন্তানকে আমার কাছে রেখে তুরস্কে পাড়ি জমায়। এরপর তারা তিন ভাইবোন আমার কাছেই মানুষ হয়। মাঝে মধ্যে আমার নাতনিরা রেলগেট এলাকায় তার বাবা ও সৎ মায়ের কাছে বেড়াতে আসে। গত শুক্রবার জোনাকিকে কসমেটিকস কিনে দেওয়ার নাম করে তার সৎ মা নার্গিস যশোরের বাসায় বেড়াতে নিয়ে আসেন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে মঙ্গলবার দুপুরে তার বাবার বাসার পাশে পরিত্যক্ত পুকুর থেকে জোনাকির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নিহত জোনাকির বড় ভাই তাহিদুল ইসলাম চয়ন বলে, সোমবার থেকে জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সৎ মা আমাদের জানিয়েছিল পাশেই স্টেশন; সেই স্টেশনে খুলনার ট্রেনে উঠে যেতে পারে। আমরা খুলনাতেও খুঁজেছি। যশোরে থানাতে জিডি করেছি। এমনকি শহরে মাইকিং করে আমার বোনকে খুঁজেছি। আজ আমার বাবা ও সৎ মা যেখানে থাকে; সেই বাসার পেছনের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে জোনাকির মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে। সে অভিযোগ করে বলে, সৎ মা নার্গিস আমার বোনকে হত্যা করেছে। হত্যার পিছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, জোনাকি নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার থানায় জিডি করা হয়েছিল। আজ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের সৎ মাকে পুলিশি হেফাজতে আনা হয়েছে।