খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় গম চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন কৃষিবিদেরা। পরীক্ষামূলকভাবে গম চাষে তারই প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি গম উৎপাদনেও সহনশীল বলে পরীক্ষামূলক উৎপাদনেই ভালো ফলন মিলেছে।
ইতিমধ্যে জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় দুই মৌসুমে গম চাষে সফলতা পেয়েছেন কৃষকেরা। অন্যদিকে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় এবার প্রথম পরীক্ষামূলক গমের প্রদর্শনীতে ভালো ফলন দেখে গম চাষ নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছেন কৃষক ও কৃষিবিদেরা। তবে নিয়মিত সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে বলে কৃষিবিদদের ধারণা।
মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাটিতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম ১ হেক্টর জমিতে ৮ জন কৃষক গম চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। ফলে চলতি মৌসুমে রাজস্ব খাতে ৫ হেক্টর জমিতে বারি গম-৩২ জাত রোপণ করেছেন ২৫ জন চাষি। এখন চলছে ফসল কাটার পালা।
উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের বুদংপাড়ার সফল কৃষক মো. সামসুল আলম ২৩ শতক জমিতে দ্বিতীয়বারের মতো গম চাষ করেছেন। খেতের গম পাকা শুরুর পর পাখির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় জমির একাংশে গম কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন। গত ১৫ মার্চ দুপুরে খেতে গম কাটার সময় এ প্রতিবেদকের কথা হয় চাষি মো. সামসুল আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, গত মৌসুমেও গম চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। তাই এবারও কৃষি অফিসের বীজে গম লাগিয়েছেন। মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবং নিয়মিত সেচ সুবিধা থাকায় ফলন এবারও ভালো হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘এখানকার আবহাওয়া ও মাটি গম চাষের উপযোগী। তবে সাধারণত হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা চার থেকে সাড়ে চার টন হওয়ার সুযোগ থাকলেও পাহাড়ে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা না থাকায় এখানে গড় উৎপাদন হেক্টরে দুই থেকে আড়াই টন। সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’
অন্যদিকে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় প্রথমবারের মতো প্রণোদনার আওতায় চারটি এবং রাজস্ব খাতে একটি প্রদর্শনীতে গম চাষ করেছেন চারজন কৃষক। উপজেলার দুল্যাতলী ইউনিয়নের জারুলছড়ি গম প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক নূর হোসেন তাঁর ৩৩ শতক জমিতে সৃজিত গমখেতে পাখির আক্রমণ ঠেকাতে জালে পুরো গমখেত ঘিরে দিচ্ছেন।
এ সময় তিনি বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার দিকনির্দেশনায় এই প্রথম সবজি চাষের বদলে খেতে গম লাগিয়েছি। ফসল ভালো দেখে মনে আনন্দ লাগছে। গাছে গম পরিপক্ব হওয়ায় খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুঘু, টিয়া, চড়ুই পাখি পড়ছে। ফলে ফসল টিকিয়ে রাখতে জালে খেত ঘিরতে হয়েছে। জমির পাশে ছোট ছড়া থাকায় নিয়মিত সেচ দিতে পারছি। এ জন্য ফলন ভালো হয়েছে।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নূর হোসেন একজন সফল কৃষক। তিনি এই জমিতে রবি মৌসুমে সবজি ও আউশ, আমনে ধান চাষ করতেন। এবার তাঁর জমিতে পরীক্ষামূলক গমের প্রদর্শনী দিয়েছি। গাছে গাছে গম পেকে উঠছে। খুব অল্প দিন পরেই তাঁর ফসল কাটা যাবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সোহরাব হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এই পাহাড়ি জনপদের মাটি ও জলবায়ু গম চাষের উপযোগী।ফলে পরীক্ষামূলক উপজেলায় চারজনকে রাজস্ব খাতে এবং একজনকে প্রণোদনার আওতায় গমের প্রদর্শনী দিয়েছি। সবখানে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে সক্ষম হওয়ায় খেতে ফসলের চমক দেখছি। নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন পর বীজ সংগ্রহের কারণে জমিতে ফসল আসতে এবং পাকতে একটু দেরি হচ্ছে।’আজকের পত্রিকা