খাগড়াছড়ি:- দেশের অন্য জেলার মতো খাগড়াছড়িতেও সরকারি বেঁধে দেওয়া পণ্য বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, খাগড়াছড়িতে ব্যবসা করতে গেলে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনকে চাঁদা দিতে হয়ে। সে জন্য ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরে হাড়সহ প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হতো ৭০০ টাকায়। তবে সরকারিভাবে কেজিপ্রতি ৬৬৪ দশমিক ৩৯ টাকা মূল্য বেঁধে দেওয়ার পর কয়েকদিন গোশত বিক্রি বন্ধ রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে কয়েকদিন বন্ধ রাখার পর দাম আগের চেয়ে আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার হাটের দিন খাগড়াছড়ি শহরে গরুর গোশত বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া আগে খাগড়াছড়ি বাজারে খাসির গোশত বিক্রি হতো ৯০০ টাকা কেজি। তবে সরকার খাসির গোশত ১০০৩ দশমিক ৫৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দেওয়ার পর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০০ টাকা বেড়ে এক কেজি খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
শুধু গরু কিংবা খাসির গোশত নয় বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। সরকারিভাবে যৌক্তিক মূল্য ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে খাগড়াছড়ি বাজারে কোনো ব্যবসায়ীকে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে দেখা যায়নি। বর্তমানে কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ দশমিক ৩০ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। আর সোনালি মুরগির দর ২৬২ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়।
কাতাল মাছ কেজিপ্রতি ৩৫৩ দশমিক ৫৯ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা, আমদানি করা ছোলা ৯৮ দশমিক ৩০ টাকার পরিবর্তে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬৫ দশমিক ৪০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা এবং চায়না পেঁয়াজ ৮০ টাকা, চিড়া ৬০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা, মুগডাল ১৬৫ দশমিক ৪১ টাকার পরিবর্তে ১৮০ টাকা, খেসারির ডাল ৯২ দশমিক ৬১ টাকার পরিবর্তে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, শুকনো মরিচ ৩২৭ দশমকি ৩৪ টাকার পরিবর্তে ৪২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ দশমিক ২০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, টমেটো ৪০ দশমিক ২০ টাকার পরিবর্তে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৩ দশমিক ৩৮ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা, সাগর কলা প্রতি হালি ২৯ দশমিক ৭৮ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা এবং জাহিদি খেজুর ১৮৫ দশমিক ৭ টাকার পরিবর্তে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
কিছু খুচরা বিক্রেতা দাবি তারা সরকার নির্ধারিত দামের কথা জানতেন না। অন্যরা বলছেন, নিত্যপণ্যের সরবরাহ না বাড়লে এই উদ্যোগ কাজে দেবে না। আবার অনেকে বলছেন, পাইকাররা বেশি দর আদায় করায় তারা দাম কমাতে পারছেন না।
কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস (সিআরবি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি এ টি এম রাশেদ উদ্দিন বলেন, ‘শুধু দাম নির্ধারণ করে দিলেই ভোক্তাদের কোনো লাভ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন বাজার মনিটরিং এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।’
আগের চেয়েও দাম বেশি বাড়ার কারণ জানতে চাইলে গরুর গোশত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কালু সওদাগর বলেন, ‘এখানে কয়েকটি পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। তাদের কাছ থেকে বাৎসরিক চাঁদার টোকেন কাটতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলা থেকে গরু আনতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে টোল দিতে হয়। ফলে ৬৫০ কিংবা ৭০০ টাকায় কেজি গরুর গোশত বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে পণ্য বিক্রি করতে জেলা প্রশাসনের কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। নয়তো এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীরা আমাদের কোনো কথাই শুনছেন না।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চাইতে বেশি দরে পণ্য বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো ব্যবসায়ী তা অম্যান্য করেন তবে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হবে।’
রোজা শুরু হতেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে রমজানে অতিরিক্ত খরচের চাপে পড়েন সাধারণ ভোক্তারা। এমন প্রেক্ষাপটে উৎপাদন খরচ বিবেচনায় ২৯টি নিত্যপণ্যের ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। মাছ, গোশত, ডিম, ডাল ও সবজিসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের সর্বোচ্চ বিক্রয় দর বেঁধে দেয়। খবরের কাগজ