ডেস্ক রির্পোট:- ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি সিনেটের ডেমোক্র্যাটিক নেতার তীব্র সমালোচনা করেন।
সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাট দলের নেতা চার্লস শুমার (ডি-এনওয়াই.) নেতানিয়াহুকে শায়েস্তা করার এবং ইসরাইলে একটি নতুন নির্বাচনের আহŸান জানানোর এক সপ্তাহ পরে এবং গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মধ্যে, কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা নেতানিয়াহুর প্রতি শর্তহীন আনুগত্য বাড়াতে চাইছে। এই ধাক্কাটি আসে যখন রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সপ্তাহে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, আমেরিকান ইহুদিরা যারা ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেয় তারা তাদের ধর্মকে ‘ঘৃণা করে’। ডেমোক্র্যাট এবং কিছু রিপাবলিকান ট্রাম্পের মন্তব্যে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন, যা তারা বলেছে যে, ধর্মীয় তাস খেলা হয়েছে। নেতানিয়াহু বুধবার রিপাবলিকান সিনেটরদের যুদ্ধের অবস্থা সম্পর্কে আপডেট করেছেন এবং শুমারের সমালোচনা করেছেন, কারণ একাধিক আইন প্রণেতা তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তারা শুমারের সমালোচনার সাথে দৃঢ়ভাবে একমত নন। শুমার একই দিনে ডেমোক্র্যাট সিনেটরদের মধ্যাহ্নভোজের সময় কথা বলার জন্য নেতানিয়াহুর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে পার্টি-নির্দিষ্ট উপস্থাপনা এই ধারণা দেবে যে ঘনিষ্ঠ মার্কিন মিত্রকে সমর্থন করা নীতির পরিবর্তে রাজনীতির বিষয়। ‘আমি ইসরাইল এবং এর দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যত সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করি ‘ শুমার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যখন আপনি ইস্যুটিকে পক্ষপাতমূলক করেন, আপনি ইসরাইলকে সাহায্য করার কারণকে আঘাত করেন।’
অতীতে, রাষ্ট্রীয় নেতারা সাধারণত সব সিনেটরকে একসাথে সম্বোধন করেছেন, যেমন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ডিসেম্বরে ক্যাপিটল কমপ্লেক্সের একটি সুরক্ষিত ঘরে ভিডিওর মাধ্যমে সব সিনেটরদের সাথে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার বিপরীতে যেয়ে নেতানিয়াহু শুধুমাত্র একটি নির্দ্দিষ্ট দলের সিনেটরদের সঙ্গে আলোচনা করলেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নেতানিয়াহুকে গাজার দক্ষিণতম শহর রাফাতে স্থল আক্রমণ না করার আহŸান জানিয়েছেন যেখানে ওই অঞ্চলের ২০ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই আশ্রয় চেয়েছেন এবং যেখানে নেতানিয়াহু দাবি করছেন হামাস যোদ্ধারা রয়ে গেছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে নেতানিয়াহুর দুরত্ব বাড়ছে। ফলে তিনি বিরোধী দলের সমর্থন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এদিকে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস হামলায় ২৪ ঘন্টায় আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে অবরুদ্ধ ওই উপত্যকায় প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার ছুঁই ছুঁই। এছাড়া দীর্ঘ পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনে আরও ৭৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। গতকাল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নতুন মৃতদের নিয়ে গত পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৯৮৮ জনে। আর আহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ১৮৮ জন। খবরে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া অনেকে ভবনের ধ্বংসস্ত‚পের নিচে আটকে আছেন। তাদের কাছে উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারেননি। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ১২শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে। ওই দিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরাইলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইলি হামলায় পুরো গাজা ভ‚খÐ প্রায় ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে।
কঠোর অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যে থাকা গাজাবাসীরা অনাহারে ভুগতে ভুগতে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে চলে গেছে। ইতোমধ্যেই অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা লোকজন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। ইসরাইলি বাহিনীর এমন আচরণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের বদলে গত রোববার মিশরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে স্থল অভিযানের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যেখানে হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলের অভিযানে চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে, যেখানে কয়েক ডজন নিহত হয়েছেন। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটরদের বলেছেন ইসরাইল হামাসকে পরাজিত করার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, আল জাজিরা।