ডেস্ক রির্পোট:- রাশিয়া সরকারের কাছ থেকে সরকারিভাবে (জিটুজি) তিন লাখ টন গম আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি টন গমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮৮ ডলার। অথচ এর পাঁচদিন আগে একই দেশ থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে প্রতি টন ২৭৯ ডলার ৮৫ সেন্ট দরে গম কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ৫০ হাজার টন গম কেনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি টন গমের দাম ৮ ডলার কম ছিল। সে হিসাবে জিটুজি পদ্ধতিতে ৩ লাখ টন গম কিনতে সরকারকে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ২৪ লাখ ডলার। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ কোটি টাকার ওপরে।
মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে একই দেশের একই পণ্যের দামে এত বড় হেরফের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার অবশ্য দাবি করেছেন, রাশিয়া থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে কেনা গমের দাম কম রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি গত সোমবার নিজ দপ্তরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের এ দামে কিনতে হচ্ছে। দুই দিনে সাত ঘণ্টা সমঝোতা বৈঠকের পর রাশিয়া প্রতি টন গম ২৮৮ ডলারে দিতে রাজি হয়েছে। আমাদের বন্দরে পৌঁছানো ও লাইটার জাহাজ ভাড়াসহ এ দাম পড়বে। কমিটির প্রত্যেক সদস্য এ বিষয়ে একমত ছিল। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে।’
এর মাত্র ৫ দিন আগে কীভাবে কম দামে রাশিয়ার গম পাওয়া গিয়েছিল জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে একটি নতুন কোম্পানি ২৭৯ দশমিক ৮৫ ডলারে গম দিতে রাজি হয়েছে সত্য। কিন্তু এ দামে গম পাওয়া সো টাফ (খুবই কঠিন)। দেখা যাক, তারা কী ধরনের গম দেয়! নিম্নমানের গম হলে আমরা নেব না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খাদ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি ৫০ হাজার টন গম কিনতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। তাতে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় রাশিয়ার কোম্পানি গ্রেইন ফ্লাওয়ার। তাদের সঙ্গে গত ২২ ফেব্রুয়ারি চুক্তি হয়। ওই কোম্পানি প্রতি টন গমের দাম নিতে রাজি হয় ২৭৯ ডলার ৮৫ সেন্ট। এর ৫ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে ৩ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতি টন গমের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৮৮ ডলার।
জিটুজি পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা থাকেন।
মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে টনপ্রতি ৮ ডলার বেশি দামে গম কেনার বিষয়টি জানাজানি হলে খাদ্য বিভাগে কানাঘুষা শুরু হয়। কেউ কেউ বলছেন, তুলনামূলক কম দামে গম পাওয়ায় জিটুজিতে না কিনে দরপত্রের মাধ্যমে আরও বেশি গম কেনা যেত। এতে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হতো।
১৪ মার্চ জিটুজি পদ্ধতিতে রাশিয়া থেকে তিন লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করেছে। কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া থেকে ৯৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি টনের দাম পড়ছে ২৮৮ ডলার। আগে এ দাম ছিল ৩০৩ ডলার ১৯ সেন্ট। তিনি আরও বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দুবাইভিত্তিক রাশিয়ান কোম্পানি গ্রেইন ফ্লাওয়ারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। প্রতি টনের দাম পড়েছে ২৭৯ ডলার ৯৫ সেন্ট। আগে দাম ছিল ৩০৩ ডলার। দাম অনেক কমেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট খরচ হচ্ছে ১৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা তো পরিষ্কারভাবেই প্রশ্নবোধক বিষয়। সরকার নিশ্চয় একই মানের গম কেনার শর্ত দিয়েছে। যদি গমের গুণগত মান একই হয়, তাহলে দামে এত তারতম্য হবে কেন? এক ডলার হয়তো এদিক-ওদিক হতে পারে।
জিটুজি পদ্ধতিতে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি কাজ করে থাকে। তারা থাকতে এত বড় অপচয় হবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশেষ সুবিধা নিতে এটা করা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা দরকার। সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থ। বেলা শেষে কিন্তু জনগণের টাকাই যাচ্ছে। সুতরাং বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।’