ডেস্ক রির্পোট:- ব্রিটিশ, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই চার আমলের প্রায় ১৫০ বছর ধরে চলা ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমারগুলো নানা কারণে বর্তমানে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন থেকে বিরত রয়েছে। একসময় পিএস ফ্ল্যামিঙ্গো, লালি, সান্দ্রা, মেকলাগাড়ো, কিউই, ইমু, ফ্লোরিকান, মোহামেন্দ, বার্মা, মাজবি, শেরপা, পাঠান, ইরানি, সিল ইত্যাদি নামের অনেক প্যাডেল স্টিমার ছিল। যেগুলো কালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ন নামের মাত্র চারটি প্যাডেল স্টিমার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পিএস অস্ট্রিচ একটি বেসরকারি ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে ও পিএস লেপচা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসির মাধ্যমে নৌ পর্যটনে পরিচালিত হচ্ছে। অপর দুটি প্যাডেল স্টিমারকে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে সংরক্ষণ করার পথে এগোচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি।
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মহাত্মা গান্ধী, যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটো এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভ্রমণের স্মৃতিবিজড়িত প্যাডেল স্টিমার পিএস লেপচা।
বর্তমানে সারা বিশ্বে হাতেগোনা যে কয়টি প্যাডেল স্টিমারের অস্তিত্ব রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশেই আছে চারটি। পিএস মাহসুদ (নির্মাণ কাল: ১৯২৮), পিএস অস্ট্রিচ (১৯২৯), পিএস লেপচা (১৯৩৮) এবং পিএস টার্ন (১৯৫০)। এগুলো নির্মাণ করে কলকাতার গার্ডেন রিচ ডকইয়ার্ড। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এ নৌযানগুলো পরিকল্পিতভাবে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ‘পর্যটন কৌশল উন্নয়ন গাইডলাইনে’ নতুন পর্যটন পরিকল্পনা হিসেবে প্যাডেল স্টিমারের মাধ্যমে রিভারাইন ট্যুরিজম সম্প্রসারণের পরিকল্পনাসহ জাতীয় পর্যটন নীতিমালা ২০১০ এ সুপরিকল্পিত পর্যটন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য ও পরিকল্পনা মোতাবেক আন্তরিকতাপূর্ণ কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হলে প্যাডেল স্টিমারগুলোর মাধ্যমে নৌ পর্যটন সেক্টর সমৃদ্ধ হবে।
পৃথিবীর বুকে টিকে থাকা প্যাডেল স্টিমারের মধ্যে ভারতের ‘পিএস ভোপাল’ ও ‘দ্য বেঙ্গল প্যাডেল’ এবং স্কটল্যান্ডের ‘দ্য ওয়েভারলি’ আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। এ স্টিমারগুলো সে দেশের পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় রূপে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কটল্যান্ড থেকে টেমস, ব্রিস্টল চ্যানেল এবং দক্ষিণ উপকূলে আনন্দ ভ্রমণে ‘দ্য ওয়েভারলি’ বর্তমানে সে দেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর ভারতে ‘পিএস ভোপাল’ ও ‘দ্য বেঙ্গল প্যাডেল’কে হেরিটেজ ক্রুজ ও রিভারাইন মিউজিয়াম হিসেবে পর্যটকদের হৃদয় জয় করেছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে এ সম্ভাবনা আরও হাতের মুঠোয়। চলাচলে সক্ষম বিশ্ব শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমারগুলো কাজে লাগিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকার চারিদিকে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদী বেষ্টিত বৃত্তাকার নৌপথ ব্যবহার করে নদীর মোহনা, বালুচর, নদী প্রকৃতি, নদী তীরবর্তী রূপসী বাংলার রূপ সুষমা অবগাহনের মাধ্যমে রিভার ট্যুরিজমের সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্ত উন্মোচন হতে পারে। চলাচলে অনুপযুক্ত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক প্যাডেল স্টিমারগুলো রিভারাইন মিউজিয়াম বা হেরিটেজ ক্রুজ হিসেবে উপস্থাপন করা গেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে।
কেউ চাইলে ভাড়া নিয়ে স্বল্প বা দীর্ঘ দূরত্বে নৌ বিহার, পিকনিক, মিলনমেলা ও আনন্দ ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন প্যাডেল স্টিমার পিএস লেপচা। সেজন্য বাংলামোটরে অবস্থিত বিআইডব্লিউটিসির প্রধান কার্যালয়, ২৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে এসে সরাসরি রকেট রিজার্ভেশন ইউনিটে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-বাণিজ্য ব্যবস্থাপক (যাত্রী)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। ফোন: ০২-৯৬৬৯৪৭৮ (অফিস সময়ে)।খবরের কাগজ