ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তৈরি হয়েছে চাপা উত্তেজনাও। পূর্ব ঘোষিত ১৯ এপ্রিল আর নির্বাচনটি হচ্ছে না। তারিখ পরিবর্তন করে আগামী ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার খসরু। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে জল ততই ঘোলা হচ্ছে। এক দল বলছে এই নির্বাচন দিয়ে কিছু হয় না, অন্য দল বলছে সংগঠনগুলোর পদ-পদবিই যেন শিল্পীদের আলোচনায় থাকার শেষ খড়কুটো। ইতিপূর্বেও তেমন প্রমাণ মিলেছে। কারণ পদধারী শিল্পীদের হাতে নেই সিনেমার কাজ। এ ছাড়া তারা সিনেমার উন্নয়নের চেয়ে ব্যক্তিগত উন্নয়নে সমিতিকে একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।
এর আগে এই নির্বাচন ঘিরে হামলা, মামলা সবই হয়েছে। এবার কী হবে তা দেখার জন্য অপেক্ষমাণ ঢাকাই সিনেমার দর্শক। এ যেন সিনেমার ভেতর সিনেমা। সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সদস্য পদ বাতিল করেছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার। শিল্পী সমিতির বনভোজনের দিনে এক রকম আয়োজন করেই জায়েদের সদস্যপদ বাতিল করেছেন নিপুণ। এজন্য নিপুণকে অবৈধ বলেছেন জায়েদ। পদ বাতিলই শেষ নয়, বনভোজনের আমন্ত্রণও পাননি জায়েদ খান।
গেল নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন নিপুণ ও চিত্রনায়ক জায়েদ। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, জায়েদ খান যদি আবারও নিপুণের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন তবে জটিলতা আরও বেশি তৈরি হবে। এ জন্যই কৌশলে জায়েদের সদস্যপদ বাতিল করেছেন নিপুণ।
এদিকে এবারের নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চনকে আর পাশে পাচ্ছেন না নিপুণ। এক রকম আক্ষেপ নিয়েই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আর নির্বাচন করবেন না ইলিয়াস কাঞ্চন। শিল্পী সমিতির বনভোজনে গিয়ে খ্যাতিমান এই অভিনেতা বলেছেন, ‘নির্বাচনের পর থেকেই সমিতির একটা পদ (জায়েদ-নিপুণ) নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা কত কিছু করেছেন। কিন্তু শিল্পী সমিতি ও শিল্পীদের স্বার্থ তো আলাদা জিনিস। এ বিষয়টাই কেউ বুঝতে চাইল না। আপনারা শিল্পীদের স্বার্থ কী করে ভুলে যান? যেখানে ইলিয়াস কাঞ্চন সভাপতি, সেখানে কাঞ্চনের পাশে আপনারা দাঁড়ান না। এই দুঃখটা নিয়ে সমিতি থেকে বিদায় নিচ্ছি। আজকে আমাকে যদি অসম্মান করেন, তাহলে সেই অসম্মান কিন্তু আমার একার নয়। সেই অসম্মান পুরো শিল্পী সমাজের, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির।’
এত কিছুর পরও শিল্পী সমিতির আসন্ন নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে নাটকীয়তা। ইলিয়াস কাঞ্চন সরে যাওয়ায় একরকম বিপাকেই পড়েছেন নিপুণ। এই অভিনেত্রী তার প্যানেল গোছাতে পারছেন না শতচেষ্টায়ও। একদিকে গড়ে আবার অন্যদিকে যেন ভাঙে। সভাপতিকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন এই নায়িকা। কে হবেন নিপুণের সভাপতি? এই নিয়ে চলছে কানাঘুষা। নিপুণ অনেককেই প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন ‘না’ শব্দ। কেউ সভাপতি হতে রাজি হননি তার প্রস্তাবে।
জানা গেছে, প্রথমে শাকিব খানকে কয়েক দফা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এই নায়িকা। কিন্তু সমিতি নিয়ে আগ্রহী নন এই নায়ক। তাই নিপুণকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিপুণ এবার প্রযোজক ও নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরু, প্রযোজক পরিচালক মোহাম্মদ ইকবালসহ আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনন্ত জলিলের দরজায়। সবাই মিলে অনন্তকে সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিলেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনন্ত জলিল। এ কারণে আরও বেশি বিপাকে পড়েছেন নিপুণ।
৪ মার্চ সাংবাদিকদের অনন্ত জলিল বলেছেন, ‘আমার সমস্যা হলো সময়। চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি, সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে, সবার বিপদে আমি পাশে থাকব। কিন্তু নির্বাচন করার মতো সময় আমার হাতে নেই।’
এদিকে শাকিব-অনন্তের পর নিপুণ নাকি অভিনেতা অমিত হাসানের সঙ্গেও আলাপ করেছেন। তবে কি তিনিই হবেন নিপুণের সভাপতি? এ প্রশ্নের বিপরীতে অমিত হাসানের জবাব, ‘নির্বাচন করার পরিকল্পনা আছে। তবে কোন পদে করব, সেটা এখনই বলতে পারছি না। তবে আমি নিপুণের সঙ্গেই আছি। আমার বিশ্বাস আছে, নির্বাচনে দাঁড়ালে অবশ্যই শিল্পীদের ভালোবাসা পাব।’
নিপুণ অবশ্য কৌশলে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সময় হলেই জানাব সভাপতি কে।’
এদিকে নিপুণের বিপরীত মিশা সওদাগর ও ডিপজল মিলে একটি প্যানেল তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। যেখানে মিশা সওদাগর সভাপতি ও ডিপজল সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লড়বেন। এদিকে আগামী ৩০ মার্চ মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হবে। মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে ২ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৪ মার্চ ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৮ মার্চ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৭ এপ্রিল। একই দিনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
অন্য প্যানেল যখন নির্বাচনের মাঠে মৃদু প্রচারণায় ব্যস্ত তখনো নিপুণ আক্তার হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন তার সভাপতিকে।