ডেস্ক রির্পোট:- মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি। শিগগির দুটি অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হবে। এতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে। নেতৃত্ব চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে ত্যাগী ও পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ব্যর্থ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক অ্যাকশন শুরু করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গত ১ মার্চ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছে। কারণ, সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব আন্দোলনের মাঠে হাইকমান্ডের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী জানান, গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজধানী ঢাকায় আন্দোলন জমাতে পারেনি বিএনপি। লাগাতার হরতাল-অবরোধে মাঠে দেখা যায়নি দুই মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। অনেক নেতাকর্মী কারাবন্দি থাকলেও যেসব নেতা বাইরে ছিলেন, তারাও মাঠে নামেনি। বরং আত্মগোপনে চলে যান। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখলেও, কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকে মাঠে দেখা যায়নি। আন্দোলনের মাঠে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুই অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলও প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেনি।
সূত্র জানায়, আবারও নতুনভাবে আন্দোলনের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এখন দলের সংস্কার ও সংগঠন গোছাতেই বেশি তৎপর দলটির নীতিনির্ধারকরা। সরকারের পদত্যাগসহ একদফার আন্দোলনে কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ার কারণ হিসেবে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করেন তারা। আগামীর আন্দোলনে সফলতা পেতে ও সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে মূল সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠক করে মতামত নিচ্ছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, মহিলা দল, কৃষক দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠন করবে বিএনপি। এসব সংগঠনেও সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে আপাতত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের চিন্তা মাথায় নেই। বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
যুবদলের পরিবর্তন শিগগির ২০২২ সালের ২৭ মে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে সভাপতি ও আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় (আংশিক) কমিটি দেওয়া হয়। প্রায় ১১ মাস পর গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলেও তা নিয়ে বিতর্ক ওঠে। এমন কিছু ব্যক্তি পদ পেয়েছেন, যারা বিগত দিনে কোনো কর্মসূচিতে ‘সক্রিয়’ ছিলেন না। আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে তাদের পদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ছাত্রদলের সাবেক বেশ কয়েকজন ত্যাগী নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে না রাখায় কমিটি বাতিলের দাবিতে তারা বিক্ষোভ-সমাবেশ ও বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে নালিশ করেছেন। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, যুবদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের অনুসারীদেরই কমিটিতে প্রাধান্য দিয়েছেন। একদফার আন্দোলনে সংগঠনের হাতে গোনা কিছু নেতাকর্মী এবং মহানগর দক্ষিণ যুবদল বিক্ষিপ্তভাবে সক্রিয় থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই ছিলেন লাপাত্তা।
সূত্রের দাবি, আন্দোলনের মাঠে কেন্দ্রীয় যুবদলের ভূমিকায় নাখোশ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এক্ষেত্রে যুবদলের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার কথা শোনা যাচ্ছে। খুব শিগগির যুবদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। কেননা, একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল দেশের বিভিন্ন বিভাগে তারুণ্যের সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কিন্তু গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের
আগে-পরে সংগঠনগুলোর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ড। কেননা, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে এখন পর্যন্ত মাঠের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না ১১ মাস কারাগারে থাকায় তার ভূমিকা নিয়ে দলে প্রশ্ন নেই। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি কারামুক্ত হন মুন্না। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার অনুসারীরা নানাভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট বিএনপির হাইকমান্ড।
জানা গেছে, যুবদলের নতুন কমিটিতে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকতে চান। এর বাইরে শীর্ষ দুই বা পাঁচটি পদের জন্য জোরালোভাবে আলোচনায় আছেন সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, যুগ্ম সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহাম্মেদ, সাঈদ ইকবাল টিটু, সহ-সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হাসান সোহান, যুবদলের কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন। যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজপথে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগের মতোই প্রস্তুত আছি।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি যে কোনো সময়
২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এসএম জিলানীকে সভাপতি ও রাজিব আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় (আংশিক) কমিটি হয়। পরে ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও এখনো ৩৭টি পদ শূন্য। একই দিনে সংগঠনের ঢাকা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার আংশিক কমিটি দিলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এর মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঢাকা উত্তরের কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। চলমান আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতারা শুরুতে মাঠে সক্রিয় থাকলেও ২৮ অক্টোবরের পর সভাপতি-সেক্রেটারিসহ অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। এখনো তাদের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশল হিসেবেই শীর্ষ নেতারা ভার্চুয়ালি তৃণমূলে সমন্বয় করে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
তবে সংগঠনের সহসভাপতি ইয়াছিন আলী, ফখরুল ইসলাম রবিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, দক্ষিণের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিনসহ বেশকিছু নেতাকে প্রত্যেক কর্মসূচিতেই সক্রিয় দেখা গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চান গতিশীল ও চাঙ্গা সংগঠন। এজন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি যেকোনো সময় ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। নতুন কমিটি হলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান আবারও থাকতে চান। এ ছাড়া শীর্ষ পাঁচটি পদের জন্য আলোচনায় আছেন বিএনপি নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সহসভাপতি ইয়াছিন আলী, সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, ড. মফিদুল আলম খান, সরদার মো. নূরুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটু, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মেহেদী তালুকদার ও ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, তারা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। কৌশলগত কারণে কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসেননি।