ডেস্ক রির্পোট:- গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৭৩ শতাংশ প্রার্থী তাদের জামানত রক্ষার ন্যূনতম ভোট পাননি। এতে জামানত বাজেয়াপ্ত খাতে এবার ইসির আয় হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ভোটে অংশ নেওয়া ১৯৬৯ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ১৪৫৪ জনই। ন্যূনতম ভোট না পাওয়ায় প্রার্থীদের জামানত হারানোর ঘটনা এটাই সর্বোচ্চ।
সংসদ নির্বাচনের আইন অনুযায়ী, কোনো আসনের নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম ভোট পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। ইসির নির্বাচন শাখার তথ্য অনুযায়ী, এই নির্বাচনে ১ হাজার ৪৫৪ জন প্রার্থী তার আসনের প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোটও না পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীকে ২৫ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়। সেই হিসাবে এসব প্রার্থীর জামানত ছিল ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
জামানত কী এবং সেই টাকা কোথায় যায়?
জামানত হলো নির্বাচনি নিরাপত্তাজনিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ, যা প্রার্থীকে আবেদনের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। টাকা জমা করার প্রমাণস্বরূপ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রেজারি চালান বা কোনো তফসিলি ব্যাংকের পে-অর্ডার বা পোস্টাল অর্ডার করতে হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের আবেদনের সময় জামানত দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০ হাজার, উপজেলা নির্বাচনে ১০ হাজার, আর পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার সংখ্যার অনুপাতে মেয়র পদে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫ হাজার টাকা করে জামানতের টাকার ব্যাংক স্লিপ ইসিতে জমা দিতে হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে অনধিক ২৫ হাজার ভোটারের এলাকায় ১৫ হাজার টাকা, ২৫ হাজার ১ হতে ৫০ হাজার ভোটারের এলাকায় ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ভোটারের এলাকার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং ১ লাখের বেশি ভোটারের এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা জামানত জমা রাখতে হয় নির্বাচন কমিশনে। সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য জামানত ৫ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, ‘নির্বাচন শেষে নিজ আসনের প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট না পাওয়া প্রার্থীদের আমরা তালিকা করি। সেই তালিকা অনুযায়ী বাতিল হওয়া প্রার্থীদের জামানতের টাকা অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অফিসের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়। আর বাকি প্রার্থীরা ইসিতে আবেদন করে জামানতের টাকা তুলে নেন।’
জামানত হারাল কতটি দল?
গত ৭ জানুয়ারি দেশের ২৯৯টি আসনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ২৮টি রাজনৈতিক দল থেকে এবং স্বতন্ত্র হিসেবে মোট ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্য থেকে ২০টি রাজনৈতিক দলের সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তারা নির্বাচনে নিজ আসনে প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট পাননি।
নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিগত দুই সংসদে বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির ২৬৩ প্রার্থীর মধ্যে ২৩৬ জন জামানত হারিয়েছেন, যা শতাংশের হিসাবে ৯০ ভাগ। এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া- ৭ আসনেও জামানত হারিয়েছেন জাপার প্রার্থীরা। আসনগুলো হলো- নীলফামারী-৩, রংপুর-১, বগুড়া-৩, পিরোজপুর-৩, ঢাকা-১৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও চট্টগ্রাম-৮। ৫ হাজারের কম ভোট পান ১৯৫ জন, ১ হাজারের কম ভোট পান ৮৮ জন। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাপার ১৭৮ প্রার্থীর মধ্যে ১৪৫ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছিলেন।
এবারের সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপি। কিন্তু কোনো আসনে জয় না পাওয়ায় দলটির শীর্ষ নেতারাসহ সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
একই অবস্থা আরেক নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম)। ৫৩ আসনে প্রার্থী দিয়েও কোনো আসনেই জিততে পারেননি দলটির প্রার্থীরা।
জামানত হারানো আলোচিত প্রার্থী
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন আলোচিত অনেক প্রার্থী। তারা হলেন- তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী, মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার ও নির্বাহী সভাপতি অন্তরা সেলিমা হুদা। চট্টগ্রাম-২ আসনে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, সিলেট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান, নেত্রকোনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনএমের মহাসচিব ড. মোহাম্মদ শাহজাহান, ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টির শেরিফা কাদের, পাবনা-২ আসনে বিএনএম–এর প্রার্থী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী, রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, বগুড়া-৪ আসনে আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
জামানত হারানোর অতীত ইতিহাস
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুযায়ী- ২০১৮ সালে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৮৬১ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারান ১ হাজার ৪৪০ জন প্রার্থী। সে বছর এই খাতে ইসির আয় হয় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ৩৯০ প্রার্থীর মধ্যে ১৬৩ জন জামানত হারান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১৫৫৭ প্রার্থীর মধ্যে ৯৪১ জন, ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৯৩৯ প্রার্থীর মধ্যে ১২৫৯ জন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ২৫৭৪ প্রার্থীর মধ্যে ১৭৬০ জন এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২৭৮৭ প্রার্থীর মধ্যে ১৯৩৪ জন এমপি প্রার্থী জামানত হারান। খবরের কাগজ