কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে বোরো ধানের আবাদ শুরু

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৩৭১ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাশয় কাপ্তাই হ্রদ ঘেরা রাঙ্গামাটি জেলা। দেশের বৃহত্তম কৃত্তিম লেক কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে শুরু হয়েছে বোরো ধানের আবাদ। গত বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকায় পাহাড়ি ঘোনায় ভেসে ওঠা জমিতে চাষাবাদে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন প্রান্তিক চাষীরা।

শীত মৌসুমে এ হ্রদের পানি কমতে থাকলে পাহাড়ি ঘোনায় ভেসে উঠে চাষাবাদযোগ্য হাজার হাজার হেক্টর জমি। কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ার সাথে সাথে পলি ভরাট এসব জমিতে লাঙ্গল চাষ ছাড়াই ধান রোপণ করেন প্রান্তিক চাষীরা। এই বোরো আবাদে প্রাকৃতিকভাবে পালি জমে যাওয়ায় সারের প্রয়োগ কম লাগায় এই চাষে আগ্রহ কৃষকদের। প্রান্তিক কৃষকরা জুম চাষের পাশাপাশি জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদের ফলে তাদের বছরের চাল সংগ্রহ করে।

রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানায়, রাঙ্গামাটি জেলায় এবছর প্রায় সাড়ে ৭ হাজারের বেশী হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমি। কাপ্তাই হ্রদের ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জলেভাসা জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে।

এ বছর রাঙ্গামাটিতে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জলেভাসা জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে সেচ সঙ্কট আর কৃষি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জলেভাসা জমির চাষিরা এখন আর খরচ পোষাতে পারছে না।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের জলেভাসা জমিতে চারা রোপণ করা হবে।

রাঙ্গামাটি কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকদের জন্য একটি প্রনোদনা কর্মসূচী রয়েছে এর মধ্যে জেলার প্রত্যেক কৃষককে ২ কেজি করে মোট ১০ হাজার কৃষককে হাইব্রিড বীজ ধান প্রদান করা হয়েছে। রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলায় ২ হাজার কৃষককে ৫ কেজি করে বোরো ও উফশী ধান বীজ ধান এবং ১০ কেজি ডিএপিও ১০ এমএপি সারও বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জলেভাসা জমির কৃষকরাও পেয়েছেন।

কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদকারী সমর চাকমা বলেন, শীত মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমার সাথে সাথে ভেসে উঠে তখন আমাদের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়। আমরা বোরো ধানের চাষ শুরু করে দেই। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে জলেভাসা জমিতে ধান চাষ করে নিজেদের খাবারের চাল পেয়ে থাকি।

রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার কৃষক মোঃ সালাম জানান, কাপ্তাই হ্রদের বিশাল এলাকা জুড়ের লংগদুতে জলে ভাষা জমি ভেসে উঠে। তাই জলে ভাসা জমিতে আমরা চাষাবাদ করে থাকি। এই জলে ভাসাজমিতে চাষাবাদ করে আমার সংসারের চালের জোগান দেই। এই জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদে কোন লাঙ্গল লাগে না। জল কমার সাথে সাথে চারা রোপন করি।

রাঙ্গামাটি শহর এলাকার আরেক চাষী জোনাকী চাকমা বলেন, আগের তুলনায় আমাদের ধান চাষে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন জমিতে ধান চাষের জন্য একজন নারী শ্রমিককে ৩শ টাকা দিতে হয়। যা আগে দিতে হতো দেড়শ টাকা। একজন পুরুষ শ্রমিক নিলে আগে দিতে হতো ৩শ টাকা বর্তমানে দিতে হচ্ছে ৬শ টাকা। এখন তেলের দাম, দিনমজুরি সবকিছুর দাম বৃদ্ধি। ধানচাষে লাভ কমে গেছে।

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার একটি বৈচিত্রতা হলো বোরো মৌসুমে কিছু জলেভাসা জমি আছে যেগুলোতে কৃষকরা ধান চাষসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে থাকেন। তবে জলেভাসা জমিটা পুরোপুরি নির্ভর করে কাপ্তাই হ্রদের পানির ওঠানামার উপর।

তপন কুমার পাল বলেন, এছাড়াও এ বছর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদের ৪০ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions