কক্সবাজার:- গর্ভজনিত প্রসব বেদনা নিয়ে ২০২২ সালের ২২ আগস্ট ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীর অধীনে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন মাফিয়া বেগম নামের এক নারী। ওইদিনই সিজার অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি করান চিকিৎসক। তবে অপারেশন শেষে পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রেখেই সেলাই করে দেন ওই নারী চিকিৎসক।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, অপারেশনের পর থেকে প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা করে তার। বেশ কয়েকবার ওই চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি স্বাভাবিক ব্যাথা বলে কিছু মেডিসিন দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর অসহ্য ব্যাথা নিয়ে দীর্ঘ ১ বছর ৫ দিন অতিক্রম করার পর বিভিন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা নীরিক্ষা করেও কোন সমাধান না পেয়ে এক প্রকার নিজেই জোর করে একটি ল্যাবে গিয়ে এক্স-রে করলে পেটের মধ্যে ধরা পড়ে একটি স্টিলের কাঁচি।
কক্সবাজার শহরের একটি বেসরকারি হসপিটালে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নী।
ভুক্তভোগী মাফিয়া বেগম (৩৮) কক্সবাজার শহরের পেসকার পাড়া এলাকার মোঃ ইউসুফের স্ত্রী। তারা দীর্ঘবছর ধরে সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায়।
মাফিয়া বেগম জানান, ২০২২ সালের ২২ আগস্ট প্রচণ্ড প্রসব বেদনা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র যেতে বলেন।
তখন তিনি তাৎক্ষণিক কোন উপায় দেখে ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীর শরণাপন্ন হন। ডাঃ জরুরীভাবে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি করেন। তিনদিন পর রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে যাওয়ার একদি পর পেট ব্যাথা শুরু হলে খাইরুন্নেছা মুন্নীর কাছে যান। তখন তিনি মাফিয়াকে সিজারের পর একটু ব্যাথা হয় বলে সান্তনা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
দিনের পর দিন যখন ব্যাথার তীব্রতা বেড়ে যায় ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ বাগিয়ে দেয় তারা। এর বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা ও আলট্রাসোনোগ্রাফি করেও রিপোর্টে কিছু না পেয়ে রোগীকে রেস্ট করতে বলেন ওই ডাক্তার।
এভাবে দিনের পর দিন ব্যাথার তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনায় বিভিন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন মাফিয়া। প্রতিটি ডাক্তার পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে স্বাভাবিক আছে বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
সর্বশেষ ১ বছর ৫দিন পর ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ২৭ তারিখ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখান তিনি।
ডাক্তারকে এক্স-রে ও আলট্রাসোনোগ্রাফি করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। ডাক্তার তার অনুরোধে বিরক্ত হয়ে বলেন, ডাক্তার আমি নাকি তুমি.? কি পরীক্ষা দিতে হবে না দিতে তা আমি বুঝব বলে তাড়িয়ে দেন। পরদিন আবার টিকেট কেটে অন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনুরোধ করে এক্স-রে করেন তিনি। এক্স-রের রিপোর্ট দেখে টেকনিশিয়ান ও রোগীর পরিবারের স্বজনদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রিপোর্টে দেখা যায় আস্ত একটা কাঁচি তার পেটের ভিতর।
ভুক্তভোগী মাফিয়া বেগমের স্বামী মোঃ ইউসুফ জানান, হাসপাতালের ল্যাবের টেকনিশিয়ানের কাছ রিপোর্ট চাইলে তিনি ডাক্তারের কাছ থেকে সিজার করিয়েছি জানতে চান। পরে ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীর নাম বললে তাদের অপেক্ষা করতে বলে একটি সিএনজিতে করে খাইরুন্নেছা মুন্নীর কাছে নিয়ে যান।
সেখানে গেলে ডাঃ তাদেরকে কোন কিছু না জানিয়ে রোগীর কাছে কাকুতি মিনতি করে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় অপারেশনের মাধ্যমে কাঁচি বের করে দিবে বলে সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেয়।
পরে স্বজনদের সাথে আলোচনা করতে হবে জানিয়ে বাড়ি চলে যান তারা। এর তিনতিন পর ভয়ে খাইরুন্নেছা মুন্নীর মাধ্যমে অপারেশন করবে না বলে জানিয়ে দেন তারা৷ পরে খাইরুন্নেছা মুন্নী সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাঃ সেলিম উল্লাহ নবাবের মাধ্যমে অপারেশন করে কাঁচি বের করে নেন। এবং পেটের ভিতর কাঁচির বিষয়টি গোপন রাখার জন্য রোগীর চিকিৎসা বাবদ ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিবে বলে ওয়াদা করেন খাইরুন্নেছা মুন্নী।
মোঃ ইউসুফ বলেন, ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীর ওয়াদা মতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলেও বাকী টাকা তিনি দিচ্ছেন না। এদিকে রোগীর অবস্থা দিনদিন বড় আকার ধারণ করছে। রোগী এখন অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। ঠিকমত কাজ করতে পারে না।
হাটাচলা করতে পারে না। শরীর দিনদিন অবস হয়ে যাচ্ছে। এ মুহুর্তে ডাক্তারের কাছে টাকা চাইলে দিচ্ছে না। চিকিৎসার খরচ চালাতে নিজের কাপড়ের ব্যাবসা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে তার। খাইরুন্নেছা মুন্নীর বিষয়টি মিডিয়া ও বাইরে জানাজানি করে দিবে বললে উল্টো প্রাণে মারার হুমকিসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
ইউসুফ জানান, তার স্ত্রী মাফিয়ার চিকিৎসার খরচ চালাতে তার কাপড়ের ব্যাবসা বাণিজ্য বন্ধ করে এখন ফুটপাতে হকারের ব্যাবসা করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছেন। খাইরুন্নেছা মুন্নীর ভয়ে আদালত বা প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ দিতে যেতে পারছেন না।
তবে আনীত অভিযোগ ষড়যন্ত্রের অংশ বলে জানালেন ডাক্তার খাইরুন্নেছা মুন্নী।