শিরোনাম
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব নির্বাচন চান সম্পাদকরা রাজপথে পরিকল্পিত নৈরাজ্য,হাসিনার ষড়যন্ত্রে একের পর এক অস্থিরতার চেষ্টা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হারাচ্ছেন বড় গ্রুপের প্রভাবশালীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘুষের সিন্ডিকেট,বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে দেনদরবারেও জড়িত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠকের প্রস্তুতি, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে-টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: জাগপা নেতা রহমত নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের নাম ছিল বিএনপির তালিকায় নাসির উদ্দীনকে সিইসি করে নির্বাচন কমিশন গঠন

৫ কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আ.লীগের ‘ইউটার্ন’

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৯৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রিরোট:- স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হতো নির্দলীয়ভাবে। কিন্তু আইন পরিবর্তন করার পর গত দুই দফায় এই নির্বাচন হয়েছে দলীয় প্রতীকে। এবার অতীতের সেই নির্দলীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে আট বছরের মাথায় দলটি কেন ‘ইউটার্ন’ নিলো, সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে রাজনৈতিক মহলে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানত পাঁচটি কারণে দলীয় প্রতীকের বদলে ফের নির্দলীয়তে ফিরে যেতে চায় দলটি। এর মাধ্যমে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করার আশা করা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করায় আগের চেয়ে গত দুই দফায় নির্বাচনি সহিংসতা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে, যার দায় পড়েছে কার্যত আওয়ামী লীগের ওপর। এর বড় কারণ হলো— সরকারি দল করা প্রার্থীদের অনুসারীরাই সহিংসতায় শীর্ষে ছিল। সে কারণে এবার নির্বাচনি সহিংসতা কমিয়ে আনা এবং এর দায় এড়াতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

দ্বিতীয়ত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করে ভোটের আমেজ আনতে দলীয় প্রার্থীর বাইরেও দলের নেতাদের স্বতস্ত্র প্রার্থিতা ‘উন্মুক্ত’ রাখার কৌশল নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এই কৌশল কাজে দিয়েছে। একই কৌশল এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রয়োগ করা হবে।

তৃতীয়ত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিভেদ কমানো সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে নেতাকেন্দ্রিক নানা গ্রুপে বিভক্ত স্থানীয় নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হবেন।

চতুর্থত, নেতাদের যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাওয়ায়— যোগ্য ও জনসম্পৃক্ত নেতারা ভোটে বিজয়ী হয়ে আসবেন। তাদের স্বাগত জানাবে আওয়ামী লীগ। এতে করে কালো টাকা ও পেশি শক্তিওয়ালাদের বিপরীতে জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের সামনে আনার সুযোগ তৈরি হবে।

পঞ্চমত, আগামীতে কেন্দ্রের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় বিএনপিসহ বিরোধীদের চাপে রাখা সম্ভব হবে। এর রাজনৈতিক সুবিধা পাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের দুই জন সদস্য এবং তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও সহিংসতা ঠেকাতে দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে বিএনপি নির্বাচনি মাঠে না থাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকারের ভোট হলে অনেক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, ভোটার উপস্থিতি বাড়বে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং ভোট উৎসবমুখর হবে, নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরাও সক্রিয় হবে, সর্বোপরি তৃণমূলে অতীতে বিএনপি শক্ত অবস্থানে থাকতে পারলেও তাদের এবার চাপে রাখা যাবে।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখা অধিকাংশ সদস্যের দাবির আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে সভাসূত্র। এই সিদ্ধান্তের খবর গণমাধ্যমে আসার পর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নেওয়ার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার নিয়ম চালু করেছিল আওয়ামী লীগ। আট বছরের ব্যবধানে সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে ক্ষমতাসীন দলটি। আইনগতভাবে না হলেও এখন দলীয়ভাবে দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা। গত আট বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল এবং সহিংসতা আগের চেয়ে বেড়েছে, যা ভোটের সময় বিপুল প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলে তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতা কমে আসবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনও উন্মুক্ত থাকলে দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন অনেকে। নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনের কাজ করার এই প্র্যাকটিস চলতে থাকলে সেটি আলটিমেটলি ভালো হবে না। এ ছাড়া আরও অনেক কারণ আছে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার ভোট না করার সিদ্ধান্তের পেছনে।

ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, যশোর ও দিনাজপুর জেলার একাধিক থানা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মী খুশি। বিশেষ করে পোড়খাওয়া, জনপ্রিয় এবং পেশি শক্তির দাপটে কোণঠাসা নেতারা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন। তাদের মতে, নৌকা প্রতীক পেলেই বিজয় নিশ্চিত—এমন যে ধারণা তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে, তার ইতি ঘটবে। অজনপ্রিয়দের জনপ্রতিনিধি বনে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। নেতাদের জনসম্পৃক্ততা বাড়বে, ভালো রাজনীতিকরা নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাবেন। দলে হাইব্রিডদের দৌরাত্ম্য হ্রাস এবং ত্যাগীদের মূল্যায়ন বাড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের কারণে অনেক সময় নৌকার যারা সমর্থক তারাও নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দেয়, এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোট না করা এটা একটা কারণ। আবার নিজেদের মধ্যে সহিংসতাও বাড়ে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তো আমরা ছাড় দেই। তখন তো নৌকার বিপক্ষে কাজ করে স্থানীয় পর্যায়ের অনেকে। এ ছাড়াও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখাসহ বিভিন্ন বিষয় চিন্তা করে আমরা দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

দলীয় সূত্রমতে, অতীতের নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে প্রার্থী হলে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। এমনকি দল থেকে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হতো তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নেতাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে অনেকে দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে জিতেও এসেছেন। তাদের আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নৌকার প্রার্থীরাও হেরেছেন অনেক আসনে। এমন প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ বা নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নয় বরং প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক, সেটাই চাইছে ক্ষমতাসীন দলটি।

২২ জানুয়ারির বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারকার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার অভিমত দিয়েছে কার্যনির্বাহী কমিটি। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় জানানো হবে।

তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির পাঁচ জন সদস্য বলেন, শুধু উপজেলা নয়, আগামীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনও পর্যায়ে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী মার্চ মাসে অনুষ্ঠিতব্য ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। দুই-একদিনের মধ্যে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন একাধিক নেতা।

স্থানীয় সরকারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে চেয়ারম্যান এবং মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট করার বিধান আছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান তিন পদেই দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বিধান রয়েছে।

২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের বিধান চালুর সময় থেকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নানা সমালোচনা করা হয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এর কঠোর সমালোচনা করেন। তবে ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থানে অনড় থাকে। ওই সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল—নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অহংকারের বিষয়। নির্বাচনি মাঠে নৌকা প্রতীক থাকলে বিদ্রোহী প্রার্থী কম হবে। তবে বাস্তবে আওয়ামী লীগের এই ধারণা উল্টো হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় তৃণমূল আওয়ামী লীগে নানা দ্বন্দ্ব-কোন্দল দেখা দেয়। সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এদিকে স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বেশ কিছু ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়। এছাড়া বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেবল চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় প্রতীকে রেখে ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে এই তিনটি পদও মুক্ত রাখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিলেও দলের কেউ স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হলে তাতে কোনও বাধা দেয়নি। এতে দেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২৫টির মতো আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৬২ জন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।বাংলা ট্রিবিউন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions