শিরোনাম
১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব নির্বাচন চান সম্পাদকরা রাজপথে পরিকল্পিত নৈরাজ্য,হাসিনার ষড়যন্ত্রে একের পর এক অস্থিরতার চেষ্টা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হারাচ্ছেন বড় গ্রুপের প্রভাবশালীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘুষের সিন্ডিকেট,বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে দেনদরবারেও জড়িত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠনের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠকের প্রস্তুতি, হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে-টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: জাগপা নেতা রহমত নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের নাম ছিল বিএনপির তালিকায়

কেওক্রাডং আখ্যান

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ২৮৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রিরোট:- আমাদের গন্তব্য ছিল বান্দরবানের রুমা উপজেলা। সঙ্গে আরও দুই বন্ধু সোমেন আর জয়নাল ভাই। রাতের বাসে রওনা হয়ে পরদিন দুপুরের কিছু আগে পৌঁছলাম রুমা শহরে। দেখেই থাকার স্থানটি বেশ লাগল। সাঙ্গু নদীর তীরঘেঁষে বাঁশের তৈরি কটেজগুলো দারুণ মনকাড়া। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে শহর ঘুরতে বের হলাম। বাজারের অলিগলি চষে ফেললাম। সন্ধ্যায় কটেজে ফিরে চায়ের আড্ডায় সিদ্ধান্ত হলো বগা লেক, কেওক্রাডং ঘুরে দার্জিলিংপাড়ায় রাত্রি যাপন করব।

পরদিন সকালে জিপ আর গাইড মুন থাং বমকে নিয়ে ছুটলাম। রুমা বাজার থেকে চাঁদের গাড়িতে দুই ঘণ্টায় বগা লেক। দেখেই চোখ ছানাবড়া। এরকম স্বচ্ছ নীলাভ পানি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ফুট উপরে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির হ্রদ। বাংলাদেশের ভূতত্ত্ববিদরা মনে করেন বগা লেক মূলত মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ।

পাহাড়, মেঘ, বগা লেকের লোককথা সবকিছু মিলিয়ে বগা লেকের পরিবেশ একেবারেই অপার্থিব। গাইড মুনের তাড়ায় এবার ছুটলাম কেওক্রাডং-এর পথে।

মেঠো পথ শুরু হতে মুনকে দেখলাম গামছা দিয়ে চোখ, মুখ আর মাথা ঢাকছে। বাতাস আর গাড়ির গতির কারণে অনেক পরিমাণ ধুলা উড়ছে। তার ওপর একটি চাঁদের গাড়িতে আমরা মাত্র পাঁচজন। আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু পথে ভীষণ ঝাঁকুনি। শক্ত করে রড ধরেও ঝাঁকুনি থেকে রক্ষা পাচ্ছিলাম না।

ঘণ্টা দেড়েক চলার পর একটি পেছনের রাস্তায় এসে জিপ থামল। সামনে হেঁটে গিয়ে দেখলাম গোটা কতক সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হবে। চলে গেলাম কেওক্রাডংয়ের সবচেয়ে উঁচু চূড়ার অংশটিতে। সেখানে পাথরে খোদাই করে এর উচ্চতা লেখা আছে। এর উচ্চতা নিয়ে অনেক মতবিরোধ থাকলেও বর্তমানে এটি উচ্চতার হিসাবে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ চূড়া। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী যার উচ্চতা ৩ হাজার ২৩৫ ফুট।

এইতো সবুজের স্বর্গরাজ্য। সামনে তাকিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিলাম। সেই জায়গা থেকে কিছু দূর হেঁটে গেলেই পাওয়া যায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিংপাড়া। তবে পর্যটকদের জন্য সেখানে যাওয়া নিষেধ।

মাইকে ঘোষণা করা হলো, কেওক্রাডংয়ের হেলিপ্যাডে এসে সব পর্যটক যেন জমা হয় সুর্যাস্তের কিছু আগে। সেখানে আর্মিদের পক্ষ থেকে সবাইকে ব্রিফিং দেওয়া হবে এখানে রাত্রি যাপনের নিয়ম, সাবধানতা অবলম্বন ও বিধিনিষেধের ওপর। পাহাড়ের আশপাশে ছোট ছোট কটেজে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আগ থেকেই বুকিং দিতে হবে।

দারুণ সুন্দর করে সেখানকার কর্তব্যরত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আমাদের স্বাগত জানালেন, অভয় দিলেন ও পর্যটকদের কর্তব্য সম্পর্কে বিশদ তুলে ধরলেন। কথা বলতে বলতে দেখছিলাম সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ছে। নিজ দেশে এরকম মায়াময় সন্ধ্যা অনেক দিন দেখিনি। মুন আবারও তাড়া দিল, যেতে হবে হেঁটে।

মুন কোথা থেকে যেন চারটি লাঠি জোগাড় করে আনল আমাদের হাঁটার জন্য। তখনো সূর্যের লাল আভা আকাশে রয়েছে। সেই আলোতেই আমরা পাঁচজন হাঁটছি, পথে আর কেউ নেই। মিনিট ১৫ পর আমি কিছুটা জিরোবার জন্য থামলাম। চারদিকে ঘন জঙ্গল। একদম গা ছমছমে পরিবেশ। প্রায় ৪০ মিনিট পর আমরা দার্জিলিংপাড়ায় এসে পৌঁছালাম।

যে বাঁশের মাচায় আমরা রাত্রি যাপন করব সেখানে গোসল করার কোনো স্থান নেই। যেতে হবে কিছুটা দূরে। এক এক করে যেতে হবে। লেডিস ফার্স্ট নিয়মে সুবিধা পেলাম। মুনকে অনুসরণ করলাম। সে মোটামুটি খোলা আকাশের নিচে নিয়ে গেল আমাকে। বলল, ‘আপু আমি পাশেই আছি, কোনো ভয় নেই।’ সেখানে বড় দুটি বালতিতে পানি ধরা রয়েছে, পাশেই একটি চাপকল। কতক্ষণ চারদিক তাকিয়ে ভাবতে থাকলাম কী করব। অল্প সময়েই সিদ্ধান্ত নিলাম একজন ভ্রমণকারীর কী এত ভাবলে চলবে। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম তাড়াতাড়ি।

পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙতেই ভাবলাম পাড়াটি ঘুরে দেখি। বাকিদের ঘুমন্ত রেখে একাই বের হলাম। বান্দরবানের পরিপাটি এক ছোট্ট লোকালয়ের নাম দার্জিলিংপাড়া। ৩০-৩২ কাঠের বাড়ি নিয়ে পাড়াটি গড়ে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছে ১৯৬৬ সাল থেকে এখানে বসতি শুরু হয়েছে এবং প্রথম বসবাস শুরু করেন মাংকিপ যাহাও বম। সমুদ্র সমতল থেকে দুই হাজার ফুট উঁচুতে হওয়ার কারণে এখানে শীতকালে বেশ ঠান্ডা।

আমাদের গাইড মুন থাং বম বলেছে, এই সবেমাত্র পর্যটক থাকবার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই পাড়ায়। তাই ধীরে ধীরে সব গড়ে উঠছে রাত্রি যাপনের জন্য। নাগরিক অনেক সুবিধাই হয়তো নেই কিন্তু আশ্চর্য এক ভালো লাগা কাজ করছিল দার্জিলিংপাড়ায়।

দার্জিলিংপাড়ায় একটি খাবার দোকান রয়েছে। বাকিরা ঘুম থেকে ওঠার পর সেখানেই সকালের নাশতা করলাম। নাশতার পর আবার সবার সঙ্গে পাড়া বেড়াতে বের হলাম। পাড়ায় একটি আবক্ষ মূর্তি দেখতে পেলাম। লেখা রয়েছে ‘বম রাম গসপেল সেন্টেনারি’। এই শিরোনাম আমি রুমা বাজারে চা খাবার সময় ও কেওক্রাডংয়ের চূড়ায়ও দেখেছি একজন ইংরেজের আবক্ষ মূর্তি। শুধু তাই নয়, চাঁদের গাড়িতে যেতে যেতে রুমা শহরের কয়েকটি বাড়ির সামনে একটি আবক্ষ মূর্তি আর ওপরের লাইনটি লেখা দেখলাম।

পাড়া বেড়াতে বেড়াতে প্রায় সময় হয়ে এলো ফেরার। দুপুরে ব্যাম্বো চিকেন সবজি আর ডাল দিয়ে পেট পুরে খেয়ে রওনা হলাম রুমা শহরের উদ্দেশে। আবার কবে দেখা হবে জানি না। নিজেকে আমি পাহাড় প্রেমিক মনে করি না। তবে অপরিকল্পিত এই পাহাড় ভ্রমণ আমাকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লাইন কটি বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে।

‘অনেক দিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ। কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা আমি জানি না। যদি তার দেখা পেতাম, দামের জন্য আটকাতো না। আমার নিজস্ব একটা নদী আছে, সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।’ আমিও কি পাহাড়ের প্রেমে পড়লাম !!!

বান্দরবান যাওয়ার সময় জাতিয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না। বান্দরবান প্রবেশ থেকে শুরু রুমা, বগা লেক ও কেওক্রাডংয়ে বিভিন্ন চেকিং পয়েন্ট রয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions