ডেস্ক রির্পোট:- জাতীয় নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরও রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কোনো অবস্থায়ই মাঠ ছাড়বে না দলটি। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপির সমমনা জোট ও দলগুলো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পরও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তারা একমত। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিলের দাবিও যুক্ত হচ্ছে এবারের আন্দোলনে। চলতি মাসে শুরু করার কথা ঢাকাসহ বিএনপির নয়টি বিভাগীয় সমাবেশ। অন্যদিকে আগামী উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেও অটল রয়েছে রাজপথের এই বিরোধী দল। কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্ত করতে তারা চালিয়ে যাবে আইনি লড়াই। দলের নীতিনির্ধারক মহল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ভোট ও আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে মূল্যায়নের ফলাফলে সাম্প্রতিক ‘আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও’ ভোট বর্জনের ডাকে সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়াকে অভূতপূর্ব সফলতা হিসেবে দেখছে বিএনপি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আন্দোলন জারি রাখার সিদ্ধান্ত। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নয়টি সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশের পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির নিজস্ব কর্মসূচির পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগেই যুগপৎ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলছে। গণতান্ত্রিক এ আন্দোলন চলতেই থাকবে যতক্ষণ না দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা ফিরিয়ে দিতে না পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’ তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি আর চলবে না। এ সরকার গায়ের জোরে এবং বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতায় আছে। শুধু আমরা নই, বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া এবং রাষ্ট্র প্রহসনের এ নির্বাচন সম্পর্কে অবগত।’
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে বিশাল ‘শোডাউন’ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ এ সমাবেশে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আশপাশ জেলার নেতাদেরও প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে ঢাকা ছাড়াও নয়টি সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগেই ঢাকাসহ অন্তত দু-তিনটি বিভাগে এ সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। পরদিন শুক্রবার সব সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল সভা করেন স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য। এতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে তাঁদের পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। আগের দিনের স্থায়ী কমিটির সভায় ‘৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের ডাকে সাড়া দেওয়া’য় সর্বস্তরের মানুষকে আবারও ধন্যবাদ জানানো হয়। এ সময় আবারও মাঠের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। সভায় নানা ধরনের কর্মসূচির প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও সমাবেশই এ মুহূর্তে (সময়ে) কার্যকর কর্মসূচি হিসেবে গৃহীত হয়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন বেশির ভাগ সদস্য।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরদিন শুক্রবার সব সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য। বিভাগওয়ারি জেলাগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক এ বৈঠকে সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরাও অংশ নেন। বৈঠকে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সর্বোচ্চসংখ্যক নেতা-কর্মী জমায়েত করার বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর এর আগেই অন্তত তিন থেকে চারটি বিভাগে সমাবেশ হতে পারে। আজকালের মধ্যেই তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র জানান, ঢাকা অথবা রাজশাহী থেকে এ সমাবেশ শুরু করা হতে পারে। তবে যেখান থেকেই প্রথম শুরু করা হোক না কেন, রাজধানী ঢাকার সমাবেশের দিকেই মূল ফোকাস থাকবে বিএনপির।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকারের পদত্যাগের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি মাঠ ছাড়বে না। আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন, বিএনপির সাম্প্রতিক আন্দোলন শতভাগ সফল হয়েছে। আবারও মাঠে নেমে তাঁরা দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক সব কর্মসূচি পালন করবেন। পাশাপাশি গণতন্ত্রকামী আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপও রয়েছে। সবকিছু মিলে এ অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিতে থাকতে পারবে না।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, জনগণ ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে- তারা বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গেই আছে। তাঁর ভাষায়, অবৈধ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগেই কর্মসূচি শুরুর মাধ্যমে জনগণকে তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হবে।
উপজেলা নির্বাচনে যাবে না বিএনপি : বিএনপি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। জাতীয়, স্থানীয়সহ সব ধরনের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি ইতঃপূর্বে নিয়েছে, এখনো সেই একই সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে দলটি। দলের পরিচয়ে কেউ এ নির্বাচনে অংশও নেবে না। তবে কোনো এলাকার কোনো নেতা যদি ব্যক্তিগতভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, সে ক্ষেত্রে দল থেকে বড়জোর তাকে (অফিশিয়ালি) বহিষ্কার করা হতে পারে। এর চেয়ে বেশি কঠোর সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থাও তার বিরুদ্ধে এবার নেওয়া হবে না। তবে স্থানীয় পর্যায়ের ‘এ নির্বাচনে বিএনপি দলগতভাবে যাবে কিংবা যাবে না’, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বাংলাদেশ প্রতিদিন