ডেস্ক রির্পোট:- সরকারি কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করে অ্যাকাডেমিক মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবে জেলার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরুতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট (অনার্স) কোর্স চালু না করে সরকারি কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নেবে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কবে নাগাদ পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শিক্ষামন্ত্রী সরকারি কলেজগুলোকে মনিটরিংয়ের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তাব করেছেন। এ নিয়ম আগে ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন হওয়ার পর থেকে সরাসরি তারাই করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে এ দায়িত্ব পালন করতে হলে বিধি সংশোধন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও পরামর্শ বাস্তবায়নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনুরোধ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন হলে সরকার তা করবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আগ্রহী বলেও জানান।
বৈঠকে উপাচার্যদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল— বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে সাইড কোর্স- অ্যাডিশনাল কোর্স, ভোকেশনাল কোর্স, টেকনিক্যাল কোর্স করাতে হবে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে আপনাদের (উপাচার্যদের) আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করবো।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, নিজ জেলার সরকারি কলেজগুলোর অ্যাকাডেমিক মনিটরিংয়ের কাজটা তারা করবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (উপাচার্য) মহোদয় এখানে রয়েছেন। তার সঙ্গে এ নিয়ে আমার আগেও আলোচনা হয়েছে। তাকে নিয়ে আমরা এগোবো।
প্রসঙ্গত, দেশের সরকারি ও বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স স্তরের কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শুধু সরকারি সাত কলেজ।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালের একটি নির্দেশনা আছে, সুনির্দিষ্টভাবে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে জানতে চেয়েছেন যে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় যেগুলো হচ্ছে, সেগুলো কেন শুরুতেই আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সগুলো করাচ্ছে। সেই জেলায় ইতোমধ্যে সরকারি কলেজ থাকতে পারে বা আছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থানীয় কলেজগুলোর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সগুলো মনিটরিং করুক। তারা কলেজগুলোর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সগুলো মনিটরিং করবে আর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কোর্স বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে করাবে।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর সময়টা অনেক চ্যালেঞ্জিং। একটি ফুল সেটআপ নিয়ে সেখান থেকে আমরা রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের দিকে যাই। প্রধানমন্ত্রীর কথা ছিল ২০১৪ সালে আমি বলে দেওয়ার পরও কেন— ওইসব কলেজ বা শতবর্ষী কলেজ যেগুলো আছে সেগুলোর দায়িত্ব রেসপেক্টিভ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিচ্ছে না। এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে ছিল না। আমি বলেছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় যারা রয়েছেন- এজন্য তাদের সহযোগিতা লাগবে।
উপাচার্যদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কলেজগুলোর অ্যাকাডেমিক মনিটরিংয়ের কাজটা সারা দেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় করছে না, করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন চট্টগ্রাম জেলার কলেজগুলোর অ্যাকাডেমিক মনিটরিংয়ের কাজ করতে পারবে না। এক সময় তারা তা করতো। আগে যদি করার ক্যাপাসিটি থেকে থাকে তাহলে এখন সেই সিস্টেম আরও বাড়ার কথা।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন তো চলমান একটি টিচিং প্রসেস আছে, স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে আমরা শিক্ষক নিয়েছি। যদি তারা মনে করেন, অ্যাকাডেমিক স্ট্যান্ডার্ড, অনার্স স্ট্যান্ডার্ড ইজ নট গুড— তাহলে সেখানে আমাকে কমাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নিজে উদ্যোগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেখানেও হয়তো চ্যালেঞ্জ আছে। সেই চ্যালেঞ্জটা আমরা অতিক্রম করছি। এটা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাস্তা বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু, আমরা নড়িনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি অ্যাকাডেমিক স্ট্যান্ডার্ড মনিটরিংয়ে কাজ করতে পারে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন করতে পারবে না।