শিরোনাম
শিক্ষার্থীদের পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব বৈঠক ডিসেম্বরে, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হবে কি এবার মারা গেলেন পরীমণির প্রথম সিনেমার পরিচালক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ, বদিউল বললেন, ‘বিবেচনায় রয়েছে’ বান্দরবানে নৌকা বাইচ দিয়ে ক্রীড়া মেলা শুরু রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যাকে উষ্ণ সংবর্ধনা পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলার প্রস্তুতি শেখ মুজিব দেশে ফ্যাসিবাদের জনক : মির্জা ফখরুল অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে পিটুনি

নির্বাচন ২০২৪ : মাহফুজ আনামের মন্তব্য এক দলীয় শাসন থেকে এক ব্যক্তির শাসন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৬০ দেখা হয়েছে

মোবায়েদুর রহমান:- অবশেষে দ্বাদশ সংসদের নির্বাচন শেষ হলো। নির্বাচনটি কেমন হলো সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু স্টেটমেন্ট অব ফ্যাক্ট হলো, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বাধাহীনভাবে শেষ হয়েছে। ১০ জানুয়ারি নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। ১১ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী নিয়ে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে। একই দিন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর র‌্যাঙ্ক, স্ট্যাটাস এবং বেতন নিয়ে ৬ জন উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছেন। একই দিন অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ৩৭ মন্ত্রীর দফতর (পোর্ট ফোলিও) ঘোষিত হয়েছে। অর্থাৎ কোন্ মন্ত্রী কোন্ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন সেটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এক কথায়, সবকিছু ছক বাধা অবস্থায় ছিল। সবকিছু ইলেকশনের অনেক আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। এবং পূর্ব নির্ধারিত ছক অনুযায়ী সবকিছু সুনিপুনভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই যে সবকিছু পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সুনিপুনভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেটির নেপথ্য কারিগর কে? নেপথ্য কারিগর হলেন আওয়ামী লীগ প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের এই কথা আরো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন ডেইলি স্টারের মালিক সম্পাদক জনাব মাহফুজ আনাম, ১২ জানুয়ারি শুক্রবার তার পত্রিকায় একটি বিশাল উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে। নিবন্ধটির শিরোনাম, From one party to one person/ What was de facto is now de jure. অর্থাৎ একদল থেকে এক ব্যক্তি/ যেটি ছিল অলিখিত এখন সেটি লিখিত। বর্তমান সিনারিওর এটিই হলো সঠিক চিত্রায়ন। ২০১৪ সাল থেকে এক ব্যক্তির শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে ছক আঁকা শুরু হয়েছিল সেটি ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ফুল সার্কেলে বা পূর্ণ বৃত্তে পরিণত হলো। মাহফুজ আনাম তার কলামে যা বলেছেন তার নির্যাস হলো, জুতা সেলাই থেকে শুরু করে চন্ডি পাঠ— সবকিছুই প্রধানমন্ত্রীই করছেন। অথবা একটু ঘুরিয়ে বলা যায় যে জুতা সেলাই থেকে চন্ডি পাঠ— সবকিছুই প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলনে হয়েছে। ব্যাপারটি মাহফুজ আনামের দৃষ্টিতে পলিসি থেকে প্ল্যান, প্রজেক্ট থেকে তার বাস্তবায়ন, ব্যষ্টিক (Micro) থেকে সমষ্টিক (Macro), ফ্লাই ওভার বা উড়াল সেতু থেকে কাঁচা মরিচ সংরক্ষণ— এই সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির প্রয়োজন হয়। ডেইলি স্টার সম্পাদক ব্যঙ্গ করে একটি গল্প বলেছেন। গল্পে বলা হয়, আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত একটি দমকল বাহিনী। টেলিভিশন চিত্রে দমকল বাহিনীর প্রধান বলছেন, আগুন নেভানোর কাজের প্রতিটি পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল। সেই নির্দেশনা তিনি পালন করেছেন বলেই আগুন নেভানো সক্ষম হয়েছে।
এক ব্যক্তির হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার সর্বশেষ এবং সুনির্দিষ্ট ঘটনা হলো বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন এবং তার পরবর্তী ৪ দিনের ঘটনাবলী। ঘটনা হলো এই যে নির্বাচনের দিন সরকারের তরফ থেকে হস্তক্ষেপ খুব কমই করা হয়েছিল। কারণ ইলেকশনের আগেই সবকিছু ছবির মতো সাজানো ছিল। আজ আমরা ভূ—রাজনীতির আলোচনায় যাবো না। তবে অতি সংক্ষেপে এটুকু বলা অতিরঞ্জন হবে না যে চীন এবং ভারতের মতো দুটি সম্পূর্ণ পরষ্পর বিরোধী এবং সাংঘর্ষিক দেশ বাংলাদেশের রাজনীতি এবং নির্বাচন সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় অবস্থান করছিল (On the same page), এটি একটি সাধারণ ঘটনা নয়। ইলেকশনটি কেমন হবে সেটি সকলের আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্তু জানা থাকলেও যেভাবে দাবা খেলার বোর্ড (Chess Board) যেভাবে সাজানো থাকে সেভাবেই ২৯৮ টি আসনের ভাগাভাগিটা সাজানো ছিল।

নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২ টি আসন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬২ টি আসন। এদের মধ্যে ৫৮ জনকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগ হাই কমান্ড থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এই ৫৮ জন আওয়ামী লীগের আজীবন সদস্য। আওয়ামী লীগের আশির্বাদের হাত যে ১১ জনের মাথার ওপর ছিল, জাতীয় পার্টির ২৬ জনের মধ্যে সেই ১১ জন নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট ১৫ জন নৌকা প্রতীক নিয়ে ইলেকশন করলেও হাই কমান্ডের আশির্বাদের হাত মাথায় ছিল না বলে জাতীয় পার্টির ওরা নির্বাচিত হতে পারেননি। তাই দেখা যাচ্ছে যে ২৯৮ টি আসনের মধ্যে যারা সরাসরি নৌকার তারা এবং যাদের মাথার ওপর হাইকমান্ডের আশির্বাদের হাত ছিল সেই ২৯৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য কথায় বলা যায় যে ৩০০ আসন বিশিষ্ট জাতীয় সংসদের ২৯৩ জন সদস্যই আওয়ামী লীগার অথবা আওয়ামী লীগের প্রতি লয়াল। এরপর নির্বাচিত হবেন ৫০ টি সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্যদের নির্বাচন। বিধি অনুযায়ী আওয়ামী লীগ পাবে আরো ৪৫ টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। তাহলে আওয়ামী লীগের অথবা তার অনুগত সদস্য সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৩৮। জাতীয় সংসদে ৩৫০ টি আসনের মধ্যে ৩৩৮ টি আসনই আওয়ামী লীগার অথবা আওয়ামী লীগ লয়ালরা। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে এবারের সংসদে ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে ৯৬ শতাংশই আওয়ামী লীগার বা আওয়ামী লীগের প্রতি লয়াল। সুতরাং এই চিত্র দেখার পর যদি বলা হয় যে দেশে একদলীয় শাসন নয়, এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাহলে কি অন্যায় বলা হবে? এই নির্বাচন বা নির্বাচন পরবর্তী দৃশ্যপট গণতন্ত্রের জন্য কি সুখকর কোনো বিষয়? নাকি গণতন্ত্রের সূর্য লাল হয়ে ক্রমশ পশ্চিম আকাশে ডুবে যাচ্ছে, তারই সুস্পষ্ট নিদর্শন?
এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো কেন? এটি করতে আওয়ামী লীগের আয়রন ফিস্ট (Iron fist) বা লৌহ মুষ্টির শাসন প্রধানত দায়ী। কিন্তু সেই সাথে বিরোধী দল সমূহকে বিশেষ করে তাদের নেতা বিএনপিকে কি সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত বলা যায়? আজ স্থান সংকুলান হলে এ ব্যাপারে বিএনপির নীতি ও কৌশল নির্ধারণে কোথায় কোথায় কোথায় ঘাটতি ছিল সেটি আলোচনা করবো। আর স্থান সংকুলান না হলে অন্য কোনো দিন আলোচনা করবো। আসুন, আওয়ামী লীগের তথা সরকারের লৌহ মুষ্টির চেহারাটা একটু দেখা যাক।
একটু পেছনে গেলে দেখা যাবে যে নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসে তার কিছুদির পূর্ব থেকেই আওয়ামী লীগকে ভগ্নাংশে পরিণত করার (Decimate) প্রক্রিয়া শুরু হয়। বস্তুত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতের ভোটের পর থেকেই বিএনপিকে সাইজ করার কাজ শুরু হয়। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে ২০১৪ সালের নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্ব থেকেই বিএনপিকে মার্জিনালাইজ (Marginalize) করা শুরু হয়। সেই ১০ বছর আগে থেকেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে ঘরের বাইরে প্রকারান্তরে বন্দি করা হয়। অর্থাৎ তাদেরকে ঘরের বাইরে বের হতেই দেওয়া হচ্ছিল না। এই অবস্থা চলতে থাকে ২০১৮ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত। ২০১৮ সালে বিএনপি এবং তার মিত্ররা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় তখন বিএনপিকে সভা সমিতি ও মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতের ভোটের পর আবার বিএনপিকে কোন্ঠাসা করা হয়।
এই অবস্থা চলতে থাকে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাবের সিনিয়র ৭ জন অফিসার এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‌্যাব টার্গেটেড স্যাংশনে পড়ে গেলে বিএনপিকে আবার কিছু শর্ত সাপেক্ষে মাঠে নামতে দেওয়া হয়। বিএনপি মাঠে নামার পর এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সকলের অজান্তে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তলানীতে ঠেকেছে এবং বিএনপির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে। আরও দেখা যায় যে জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তাও তাদের নেতৃবৃন্দের ফাঁসি হওয়া সত্বেও অনেক বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের জন্য এটি অশুভ সংকেত বিবেচনা করে ২৮ অক্টোবর বিএনপির ওপর নেমে আসে নির্মম ক্র্যাকডাউন। তারপর থেকে ইলেকশনের আগের দিন পর্যন্ত বিএনপির ২৭ হাজার কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে বিএনপির দাবি। বিএনপির দাবি মোতাবেক বিগত ১০ বছরে বিএনপির ৪৮ লাখ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কর্মীদের বেল দেওয়া হচ্ছে না। বিএনপির দাবি মোতাবেক, ২৮ অক্টোবরের পর নিম্ন ও উচ্চ আদালতে দিনের শুরু থেকে শুরু করে রাত ৮ টা ৯ টা পর্যন্ত শুনানী করে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মাত্র ২ মাস ৭ দিনের মধ্যে ১ হাজার ৬০০ নেতাকর্মীকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ এখনও বিএনপি নেতাকর্মীদের হাজার হাজার সদস্য কারাগারে রয়েছেন। এভাবে বিএনপি সহ বিরোধী দল সমূহকে নিস্পেষিত করে যে ইলেকশন হয়েছে সেটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এক নায়কতন্ত্রের দিক থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন অথবা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

ডেইলি স্টারের ঐ কলাম মোতাবেক, রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহত করার জন্য আমলাতন্ত্রকে দলীয়করণ করা হয়েছে, পুলিশ সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় করণ করা হয়েছে, বিচার বিভাগে প্রাক্তন ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগ বসিয়ে এসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান করায়ত্ত করা হয়েছে। এভাবে পলিটিক্যাল পার্টি সমূহকে ক্রাশ করে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে দলীয়করণ করে এবং বিচার বিভাগকে কব্জা করে এবার যে সংসদ বানানো হলো তার ফলে এক ব্যক্তির হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চলে গেছে। এর পরিণতি কি? সেটা পরে বলবো। এখন আজকের মতো এক কথায় বলা যায় যে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে বিশ^ রাজনীতির তীক্ষ্ম মেরুকরণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে চীন, ভারত ও রাশিয়া। অন্যপক্ষে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭ টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট।
এক ব্যক্তির শাসনের চূড়ান্ত পরিণতি কোনো দিন শুভ হয় না। ইংরেজিতে একটি কথা খুব চালু আছে। সেটি হলো, Power corrupts, absolute power corrupts absolutely. অর্থাৎ ক্ষমতা মানুষ বা দলকে দুর্নীতি পরায়ন করে। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশভাবে মানুষ বা দলকে দুর্নীতি পরায়ন করে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions