শিরোনাম
নাজমা আশরাফীকে রাঙ্গামাটির ডিসি নিয়োগসহ ১৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ গাজায় ধ্বংস প্রায় ৩ লাখ বাড়ি, তাঁবুতেই শীত কাটাচ্ছেন লাখো ফিলিস্তিনি আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস, দেশে ১ কোটি ৩৮ লাখ রোগীর চাপ হাসপাতালে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে মরিয়া মিয়ানমার জান্তা রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে ছাদ থেকে পড়ে শিক্ষিকার মর্মান্তিক মৃত্যু বান্দরবান ডায়াবেটিস হাসপাতালের কার্যক্রম সমপ্রসারণের উদ্যোগ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে রাঙ্গুনিয়ায় শ্রমিকদল নেতাকে গুলি করে হত্যা রাঙ্গামাটিতে আন্দোলনের মুখে ২১ নভেন্বর পরীক্ষার তারিখ নিধারন রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকে প্রমোদতরী চালুর বিষয়ে ভাবা হচ্ছে : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে মরিয়া মিয়ানমার জান্তা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- কয়েক বছর ধরেই কার্যত অবরুদ্ধ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। রাজ্যটির ৯০ শতাংশ আরাকান আর্মির দখলে। ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে কেবল সিত্তে, কিয়াকফিউ ও মানাউংয়ের নিয়ন্ত্রণ আছে সামরিক জান্তার।

কয়েক বছর ধরেই কার্যত অবরুদ্ধ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। রাজ্যটির ৯০ শতাংশ আরাকান আর্মির দখলে। ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে কেবল সিত্তে, কিয়াকফিউ ও মানাউংয়ের নিয়ন্ত্রণ আছে সামরিক জান্তার। সে নিয়ন্ত্রণও খুব একটা শক্তিশালী নয়। তবে সম্প্রতি চীনা কৌশলের কারণে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতিরোধ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। চীনের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি করেছে। ফলে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে জান্তা সেনাবাহিনী। তাদের প্রধান লক্ষ্য এখন রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনা। এজন্য আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযান শুরু করেছে দেশটির সরকারি সেনাবাহিনী। রাখাইনের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও বিমান হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এরই মধ্যে নিয়মিত বিমান হামলা চলছে রাখাইনের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয় সূত্র ও সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, জান্তা বর্তমানে বঙ্গোপসাগরীয় রুটে গোলাবারুদ ও সেনা পরিবহন জোরদার করেছে। দক্ষিণ রাখাইনের কিয়াকফিউ ঘাঁটি থেকে রামরি দ্বীপ হয়ে আন, থান্দওয়ে ও তাউংগুপ এলাকায় প্রবেশের কৌশল তারা নিয়েছে।

সাবেক জান্তা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জিন ইয়াউ বার্মা নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, ‘জান্তার প্রধান লক্ষ্য এখন আরাকান আর্মিকে দুর্বল করা। তারা নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বাড়িয়ে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ রাখাইন পুনর্দখল তাদের মূল কৌশল।’

কিয়াকফিউ শহরে চীনের বড় অবকাঠামো প্রকল্প থাকায় এ এলাকা অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে জান্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কিয়াকফিউয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর জান্তা সেখান থেকেই দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোর দিকে অভিযান জোরদার করবে।

অন্যদিকে আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিত্তে থেকেও জান্তা বাহিনী সীমান্তবর্তী পন্নাগিউন টাউনশিপে প্রবেশের চেষ্টা করছে। সেতু মেরামত শেষে তারা এখন ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। অগ্রসর হওয়ার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা সেনারা, যাতে সামরিক বহর নিরাপদে সামনে এগোতে পারে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, পন্নাগিউনে প্রতিদিনের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ মূলত একটি স্থল অভিযানের পূর্বপ্রস্তুতি। যদি জান্তা পন্নাগিউন পুনর্দখল করতে সক্ষম হয়, তাহলে তারা সিত্তে শহরের নিয়ন্ত্রণ আরো দৃঢ় করতে পারবে। পরবর্তী ধাপে বুথিডং, মংডু ও রাথেডংয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাবে। ক্যাপ্টেন জিন ইয়াউয়ের মতে, দক্ষিণে আক্রমণ ব্যর্থ হলেও উত্তরে জান্তা সমান্তরাল চাপ তৈরি করছে, যাতে বিকল্পভাবে অগ্রগতি বজায় থাকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মংডু ও থান্দওয়ে উপকূলে জান্তার নৌ-চলাচল বেড়েছে, যা সম্ভবত ভবিষ্যৎ অভিযানের অংশ। তবে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং স্থলপথে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বড় ধরনের সাফল্য পাওয়া তাদের জন্য কঠিন।

অল আরাকান স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইয়ুথস কংগ্রেসের সাবেক সম্পাদক কো তাইন উ বলেন, ‘জান্তা যে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিচ্ছে তা বাস্তবে টেকসই নয়। আরাকান আর্মি এখন বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের প্রতিরক্ষাক্ষমতা অনেক বেশি।’

মাটিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও আরাকান আর্মির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। এ সুযোগে সামরিক জান্তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে বিমান হামলা। এসব হামলায় অনেক বেসামরিক নাগরিক নিহত হচ্ছে। জান্তা দাবি করছে, তারা ‘সন্ত্রাসী অবস্থানে’ আঘাত হানছে। কিন্তু স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, নিহতদের বড় অংশই নারী ও শিশু। স্কুল, মসজিদ, শরণার্থী শিবির, এমনকি বৌদ্ধ মঠ পর্যন্ত বিমান হামলার শিকার হচ্ছে। ৭ নভেম্বর জান্তার বিমান বাহিনী পকতাউ টাউনশিপের দুটি গ্রামে বোমা বর্ষণ করে। এতে পাঁচজন নিহত ও নয়জন আহত হয়।

প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যকে দীর্ঘদিন ধরেই অবরুদ্ধ করে রেখেছে সামরিক জান্তা। খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বন্ধ। একই সঙ্গে কৃষিপণ্য ও সামুদ্রিক মাছ রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। মাগওয়ে, বাগো ও ওয়েওয়াদ্দি অঞ্চল থেকে আসা সড়ক ও নদীপথ বন্ধ থাকায় মানুষ এখন বিকল্প ও বিপজ্জনক পথে সীমিত পরিসরে পণ্য আনা-নেয়া করছে। অবরোধের কারণে পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, আর কর্মসংস্থান প্রায় নেই বললেই চলে। কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না, অন্যদিকে স্থানীয় ক্রয়ক্ষমতা এতটাই কমে গেছে যে উৎপাদনের দামও পড়ে গেছে। সাধারণ মানুষ খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে।

আরাকান আর্মি যদিও প্রশাসনিকভাবে বেশির ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, কিন্তু তাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় সীমান্ত দিয়ে স্বাভাবিক পণ্য আমদানি সম্ভব নয়। সীমিত পরিসরে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পালেতাও সীমান্ত হয়ে চাল ও তেল আসে। কিন্তু খরচ ও পরিবহন ব্যয় এত বেশি যে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। জান্তা নিয়ন্ত্রিত সিত্তেতে খাদ্য ও জ্বালানি প্রবেশও কোটাভিত্তিক। সেনাবাহিনী নিজেই রেশনিংয়ের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ করছে। সামনের দিনগুলোতে সামরিক জান্তা সমন্বিত জোরদার হামলা চালালে রাখাইনে আরো বিপুল পরিমাণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি রাখাইনের বিভিন্ন অংশ পুনর্দখল করে নিতে পারে, তাহলে কেবল মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দৃশ্যপটই বদল হবে না—এ অঞ্চলীয় ভূরাজনীতিতেও পরিবর্তন আসবে। তবে সামরিক জান্তার স্থল যোগাযোগ ও জনসমর্থনের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া আরাকান আর্মির বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ পেরিয়ে রাখাইন পুনর্দখল করা সামরিক জান্তার জন্য অনেক কঠিন বলে মত বিশ্লেষকদের।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions