শিরোনাম
রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের অভিযান খাগড়াছড়ির বর্মাছড়িতে ইউপিডিএফ এর নাশকতামূলক কর্মকান্ডের পরিকল্পনা এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড প্রসঙ্গে যুদ্ধবিরতির পরও থামছে না ইসরায়েল, বাড়ছে মানবিক বিপর্যয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী ঠেকাতে কঠোর বিএনপি সালমান শাহ হত্যা মামলা: আসামিরা কে কোথায়? ২৮২ কিমি বেগে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’, আঘাত হানতে পারে যেখানে রাউজান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সাত সন্ত্রাসী বাহিনী সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের আত্মপ্রকাশ: বহুজাতিসত্তার প্রতিনিধিত্বে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ থেকে সেই হাতি শাবকের মরদেহ ৬ দিন পর উদ্ধার খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের শিকার চাকমা শিক্ষিকা পুলিশকে লোমহর্ষক ধর্ষণের বর্ণনা দিলেন

যুদ্ধবিরতির পরও থামছে না ইসরায়েল, বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ফিলিস্তিনের গাজায় বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের হামলা থামেনি। গাজা, পশ্চিম তীর, সিরিয়া ও লেবানন—প্রায় পুরো অঞ্চলজুড়েই এখনো চলছে তেল আবিবের সামরিক অভিযান। একদিকে যুদ্ধবিরতির নামে মানবিক স্বস্তির আশা, অন্যদিকে আকাশ থেকে বোমা ও মাটিতে গুলির গর্জন—এই দ্বন্দ্বই যেন নতুন করে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে।

গত ১০ অক্টোবর ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আল জাজিরার সোমবারের (২৭ অক্টোবর) প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল তার সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গাজা, পশ্চিম তীর, সিরিয়া ও লেবাননের ভেতরে প্রায় প্রতিদিনই বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও ড্রোন আক্রমণের খবর মিলছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নীরব সমর্থনেই ইসরায়েল এতটা নির্ভয়ে আঞ্চলিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতি শুধু ফিলিস্তিন নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যকেই বিপজ্জনক অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গাজার যুদ্ধবিরতির ছায়া পড়েনি পশ্চিম তীরে। বরং সেখানে ইসরায়েলি সেনারা নতুন করে দমন অভিযান শুরু করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরেই ১,০০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইসরায়েল এই অঞ্চলে তার দখল আরও পাকাপোক্ত করতে চায়। জলপাই সংগ্রহের মৌসুমেও ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের বাধা দিচ্ছে, মারধর করছে এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার করছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ তার সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, যেন তিনি পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। স্মোটরিচের ভাষায়, “পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করতে হবে, যাতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিপজ্জনক ধারণা চিরতরে রোধ করা যায়।”
ইসরায়েলের আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিক এখন সিরিয়া। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি অনুপ্রবেশ ঘটছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করে সাময়িক চেকপোস্ট স্থাপন করছে।
গত রোববার দক্ষিণ সিরিয়ার কুনেইত্রা প্রদেশের আল-রাজানিয়া ও সাইদা আল-হানুত গ্রামে এমনই একটি অভিযানে ইসরায়েলি সৈন্যরা ঢুকে পড়ে। সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, তারা স্থানীয় এক রুটি সরবরাহকারীকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকেই সিরিয়ার সামরিক স্থাপনায় নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘে সিরিয়ার প্রতিনিধি ইব্রাহিম ওলাবি ২৪ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে স্পষ্টভাবে বলেন, “ইসরায়েলকে অবশ্যই সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং গোলান মালভূমিসহ সব দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যেতে হবে।”

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলের বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও, বাস্তবে ইসরায়েল প্রতিদিনই সেখানে বিমান ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) জানিয়েছে, সোমবার তাদের টহল দলের কাছে ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। জবাবে শান্তিরক্ষীরা একটি ইসরায়েলি ড্রোন গুলি করে নামায়। এরপর ইসরায়েলি ট্যাংক শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, যদিও হতাহতের খবর মেলেনি।

এছাড়া বালবাকের নবি চিত ও নাকুরা এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক বোমা হামলাগুলোর মধ্যে বেশ কিছুতে সাধারণ নাগরিকও প্রাণ হারিয়েছেন। এমনকি পুনর্গঠন কার্যক্রমে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের দাবি, হিজবুল্লাহর পুনর্গঠন ঠেকাতেই এসব অভিযান চালানো হচ্ছে।
তবে লেবানন সরকার বলছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে এমন কোনো শর্ত ছিল না। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে, ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের দায়ে জবাবদিহির আওতায় আনতে। কিন্তু মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাক এখনো ইসরায়েলকে থামাতে পারেননি, ফলে দেশজুড়ে ফের শঙ্কার আবহ তৈরি হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও গাজায় শান্তি ফেরেনি। আল-আউদা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাতে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নিহত ও চারজন আহত হন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এর পাশাপাশি, রাফাহ সীমান্ত দিয়ে অসুস্থ ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি তৃতীয় পর্যায়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকেও চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যদিও বলেছেন, “যুদ্ধবিরতি প্রত্যাশার চেয়েও ভালোভাবে চলছে,” কিন্তু বাস্তব চিত্র তার উল্টো—গাজার আকাশে এখনো ইসরায়েলি ড্রোনের গর্জন শোনা যায়।

ইসরায়েলের এই বহুমুখী সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। ট্রাম্প প্রশাসন একদিকে গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসন রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমনকি মার্কিন কূটনীতিকেরা সম্প্রতি তেল আবিব সফর করলেও, তারা ইসরায়েলকে দমননীতি থেকে বিরত থাকতে বলেননি। ফলে আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই “নীরবতা”ই ইসরায়েলকে আরও সাহস জোগাচ্ছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions