জুলাই সনদ বাস্তবায়ন,গণভোটের সময় নিয়ে দলগুলোর মতবিরোধ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:-জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোটের সময় ও কাঠামো নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে পঞ্চম দিনের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে দিনভর আলোচনা হলেও একক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিলেও, কেউ কেউ চাইছে-নির্বাচনের আগে আলাদা করে গণভোট হওয়াই যুক্তিযুক্ত।

বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি গণভোটের আয়োজন করতে হবে। আজকে আমাদের লক্ষ্য ছিলো গণভোট কি কাঠামোর মধ্যে হতে পারে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে। এসব বিষয়ে আলোচনা করে এক জায়গায় আসা যায় কিনা।

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা যে জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে যেসব উপায় বলেছেন- এক, একটি আদেশ জারি করতে হবে, দ্বিতীয় সেই আদেশের মাধ্যমে গণভোটের আয়োজন করতে হব, তৃতীয় গণভোটে দুটি আলাদা প্রশ্ন থাকতে হবে। বৃহত্তর ঐকমত্য আসে সেসব বিষয়ে একটি, নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে আরেকটি, চতুর্থত. নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ সংসদ গঠিত হবে, পঞ্চম সেই আদেশের মধ্যদিয়ে গণভোটের অনুমোদন সাপেক্ষে সংবিধান সংশ্লিষ্ট মৌলিক বিষয়ে সংস্কার সমূহ সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের কাছে থেকে আমরা এসব পরামর্শ পেয়েছি।

আলী রীয়াজ বলেন, সারাদিনের আলোচনায় নানা রকম মত এসেছে। নির্বাচনের দিন কয়েকটি দল, কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই গণভোটের কথা বলেছেন। দল ও জোটগুলোর মতামত বিবেচনা করে সুস্পষ্ট মতামত সরকারকে দেবে কমিশন। আজকের যে মতামত সেগুলোকে সন্নিবেশিত করে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আরো আলোচনা করে সরকারকে পরামর্শ দেবে। যারা সহযোগিতা করেছেন সকল সেসব বিষয়ে অবহিত করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ মূহুর্তে গণভোটের প্রস্তাব নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়াস। কারণ নির্বাচনের দিন গণভোটে যে ফলাফল আসবে, তার আগে করলেও তাই হবে। তাই এ দাবি পরিহার করতে হবে।

তিনি বলেন, অধিকাংশ দল ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের পক্ষে। বিএনপিও এ বিষয়ে একমত। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে হাতে আছে এক থেকে দেড় মাস। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এর আগে গণভোট আয়োজন করা কী সম্ভব? এটি জাতীয় নির্বাচনের মতোই কর্মযজ্ঞ। ফলে এখন গণভোট করলে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার প্রয়াস হিসেবেই দেখি।

সালাহউদ্দিন বলেন, জুলাই সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়া ইট ইজ ওভার, ইট ইজ ক্লোজড চ্যাপ্টার। এটা আমরা যে যেভাবে সম্মত হয়েছি, সেটা আমরা আলোচনায় আসি, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এখানেই থাকি, আদারওয়াইজ আমাদের জন্য একটু অসুবিধা হতে পারে।

তিনি বলেন, জুলাই সনদে এখানে এগ্রিড হয়েছি উইথ নোট অফ ডিসেন্ট ইন সার্টেন পয়েন্ট এবং সেখানে বর্ণিত আছে কি, কীভাবে নোট অফ ডিসেন্ট বাস্তবায়ন হবে। আমরা বলেছি, আমরা যে যেভাবে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছি, সেটা বিবৃতি থাকতে হবে এবং অঙ্গীকারনামায় একটা দফাযুক্ত থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে সেগুলো উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয়, তারা সে মতে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। জুলাই সনদ এটা একটা টোটাল প্যাকেজ। এই প্যাকেজ ইন টোটালিটি জুলাই সনদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং গণভোটের জন্য যাবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদ আদেশটা প্রজ্ঞাপন আকারে গ্যাজেট নোটিফিকেশনে যাবে এবং সেই প্রজ্ঞাপনের সূত্র ধরে যে গণভোটের আইনটা হবে, সেই গণভোটের আইনটা সেভাবে উল্লেখ থাকবে যে- এই বিষয়ে, এই প্রজ্ঞাপনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নেয়া প্রয়োজন বিধায়, যেহেতু অংশে সেটা দিয়ে সেহেতু এই গণভোট অধ্যাদেশ জারি করা হলো এবং এই গণভোটটা কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটার জন্য বিধিবিধান বিদ্যমান গণভোট আইন থেকে নেয়া যায়, আরপিও থেকে নেয়া যায়। যেভাবে নির্বাচন কমিশনে ভোট পরিচালনা করে সে সমস্ত বিধিবিধানগুলো প্রয়োজনে সরকার ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সেখানে দেয়া হবে এবং সেই আদেশের মধ্যে জুলাই সনদ আদেশ যেটা প্রজ্ঞাপনের মধ্যে করবেন, সেখানেও গণভোটের বিধান কথাটা উল্লেখ থাকা শ্রেয় হবে। যে প্রজ্ঞাপন এই আদেশটা বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের আয়োজন করা হবে, সেটাও আদেশের মধ্যে সংযুক্ত করতে পারেন।

তিনি বলেন, যদি আমরা ধরে নেই তাহলে পরে সেই গণভোটটা আগে হলো। যে ফলাফল একই দিনে হলেও, সে একই ফলাফল দুটোই বাইন্ডিং ক্ষমতা থাকছে, সার্বভৌম ক্ষমতার অনুবলে পার্লামেন্টের উপরে। তাহলে আগে আরেকটা নির্বাচনের আয়োজন করা এই জাতির পক্ষে এ সময়ের মধ্যে কি সম্ভব? অথবা প্রয়োজন কি আছে? এই দুই প্রশ্নের একটা হচ্ছে- সম্ভাবনা আমরা দেখি না। কারণ এই সময়ের মধ্যে আরেকটা মহাযোগ্য জাতীয় সংসদের মত একই আয়োজনটা করতে হবে, শুধু ওইখানে প্রার্থী থাকবে না, সনদেই হবে প্রার্থী।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গণভোটও সুষ্ঠু হবে না। তাই গণভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। গণভোটের বিষয়ে সবাই একমত। নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটটা আলাদাভাবে হয়ে যাওয়া দরকার। কিছু বিষয়ে আমাদের মতভিন্নতা থাকলেও গণভোট নিয়ে এখন আর কোনো বিরোধ নেই। জুলাই চার্টারের যে সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে, সেটি গণভোটের মাধ্যমেই গৃহীত বা বাতিল হবে।

তিনি বলেন, অনেকেই বলেছেন, গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একসাথে হয় বা একসাথে হলে ভালো হয়। আমরা বলেছি না, গণভোট একটি আলাদা বিষয়, জাতীয় নির্বাচন একটি আলাদা বিষয় এবং দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গণভোটটি হবে আমাদের সমস্ত সংস্কার- জুলাই সনদ হিসেবে যেটাকে আমরা একটি প্যাকেজ হিসেবে বিবেচনা করছি। সেটাকে নিয়ে গণভোট হবে। সুতরাং গণভোটটা আগেই হয়ে যাওয়া দরকার। জনগণ যদি গ্রহণ করে, সেই গণভোটের ভিত্তিতেই পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো হবে, নির্বাচন হবে। আর জনগণ যদি বাতিল করে দেয় তাহলে তো সেটা এখানে শেষ হয়ে যাবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions