শিরোনাম
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি’র ১৩তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে প্রহসনমূলক বিচারে মাইকেল চাকমাকে দণ্ডাদেশ প্রদান নিষ্ঠুর পরিহাস, মেনে নেয়া যায় না : ইউপিডিএফ কঠিন চীবর দানোৎসবের মাধ্যমে সম্প্রীতির বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে: পার্বত্য উপদেষ্টা ২৫ বছরের দণ্ডে দণ্ডিত ইউপিডিএফ সশস্ত্র কমান্ডার মাইকেল চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় শাসন বাতিল করে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন বাস্তবায়নের দাবি সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দান উদযাপন রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে নৌকা ডুবি, সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সকল যাত্রী নিরাপদে উদ্ধার সাত রুটে অস্ত্র ঢুকছে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তিন পার্বত্য জেলার সন্ত্রাসীদের আস্তানায় রাঙ্গামাটির কাপ্তাই বজ্রপাতে জেলের মৃত্যু, আহত ৪ রাঙ্গামাটিতে কঠিন চীবর দান উপলক্ষে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

পাহাড়ে আন্দোলনের মুখোশ খুলছে,ব্যানারে জুম্ম ছাত্র-জনতা নেপথ্যে ইউপিডিএফ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫১ দেখা হয়েছে

খাগড়াছড়ি:- আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এলে মনে হয় পাহাড়ে এই বুঝি কিছু একটা হতে যাচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার ক্ষত না শুকাতেই এই মাসে ঘটে আরেকটি সহিংস আন্দোলন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা সদরের সীঙ্গিনালা এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মারমা সম্প্রদায়ের এক স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাকে (মামলার আর্জি মতে) কেন্দ্র করে বিচার দাবিতে সহিংস আন্দোলনে নামে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে একটি সংগঠন। ইতোমধ্যে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ ব্যানারের মুখোশ খুলতে শুরু করেছে। এদিকে ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে রিপোর্ট দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এই ব্যানারটি ব্যবহার করছে, যার সঙ্গে সাধারণ ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র সম্পৃক্ততা নেই। এটা ইউপিডিএফের চালবাজি। এমনকি ‘মারমা উন্নয়ন সংসদ’ ও ‘বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ’ও বলেছে তারা কোনোভাবেই এই সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। মূলত দেশকে অস্থিতিশীল করতে ও পাহাড়কে অশান্ত করতে ইউপিডিএফ এই খেলায় মেতেছে। এর সঙ্গে রয়েছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সহিংস আন্দোলনের বিষয়টি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বসে তদারকি করছেন দীঘিনালার এক কথিত বৌদ্ধ ভিক্ষু। এদিকে, আট দফা দাবি পূরণে প্রশাসনের আশ্বাস ও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়িতে চলমান সড়ক অবরোধ চার দিন পর স্থগিত করেছে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’। মঙ্গলবার রাতে এক প্রেস বিবৃতিতে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করার ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। এর পর থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে খাগড়াছড়ি।

জানা যায়, সাম্প্রতিক আন্দোলনটি মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও মহাসমাবেশের মতো কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীতে তা হয়ে ওঠে সহিংস, দেশবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালনের সময় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যদের ওপর একাধিকবার হামলা করে। তাদের হামলার মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা দেয় উত্তেজনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধৈর্যসহকারে পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা নিরসনে কঠোরভাবে কাজ করে। খাগড়াছড়ি পৌরসভা, উপজেলা সদর ও গুইমারা উপজেলায় জারি করে ১৪৪ ধারা। এরপরও ঘটে যায় বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা। ২৮ সেপ্টেম্বর ৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তারা বিভিন্ন মন্দিরে হামলার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পেরে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা আন্দোলন থেকে কিছুটা পিছু হটে সড়ক অবরোধ শিথিল করে। সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে।

মারমা ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা প্রশাসনের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে ধর্ষণে সন্দেহভাজন যুবক নয়ন শীলকে আটক করা হয়। আদালত আসামির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজন বাঙালি যুবক, একজন মারমা যুবক ও দুজন চাকমা যুবক এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছে। প্রশাসন তাদের ধরতে কাজ করছে। কিন্তু কথিত ভুক্তভোগী ছাত্রীর মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি চিকিৎসকরা।

বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার পরও ছাত্র আন্দোলনটি খাগড়াছড়ির সীমা পেরিয়ে যখন তিন পার্বত্য জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে, তখন জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারের মুখোশ খুলতে শুরু করেছে। ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখা যায় আসলে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারটি পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) চালবাজি। এই চালবাজির আলামত পেয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় দুটি সংগঠন বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ মারমা উন্নয়ন সংসদ যৌথ বিবৃতি দেয়। তারা ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর যে সংঘাত ও সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা লিখিত বিবৃতিতে বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই-শান্তিপ্রিয় মারমা জনগোষ্ঠী কিংবা আমাদের দুই সংগঠন ‘মারমা উন্নয়ন সংসদ’ ও ‘বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ’ কোনোভাবেই এই সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। সাম্প্রদায়িক সংঘাতকে আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। মূলত, ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’-এর ব্যানারের আড়ালে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল পাহাড়ি জনগণকে ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিয়ে আমরা মারমা জনগোষ্ঠীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি সব নাগরিককে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র পক্ষ থেকে ৬ জন আন্দোলনকারী বৈঠকে বসেন। সেখানে তারা স্বীকার করেন, তারা ৬ জনই ইউপিডিএফের সক্রিয় কর্মী। উপদেষ্টার বরাত দিয়ে কথাটি মিডিয়ায় প্রচারিত হলে এবং মারমা সম্প্রদায়ের যৌথ বিবৃতির ফলে আন্দোলনকারীরা এই ব্যানারে আন্দোলন করার ক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। তারই ধারাবাহিকতায় ৫ম দিন থেকে আন্দোলনে নেমে আসে শিথিলতা।

জানা গেছে, পাহাড় অশান্ত করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে। চলছে বিশেষ মহলেরও তৎপরতা। তারা ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেশি-বিদেশি সব পক্ষকে একই পতাকায় নিতে কাজ করছে। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছে ভারত। যার মধ্যস্থতায় আছেন প্রতিবেশী দেশটির রাজধানী দিল্লিতে বসবাসরত দিঘিনালার এক কথিত বৌদ্ধ ভিক্ষু বা ধর্মগুরু। তারা চাইছে যে কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিতে। যাতে বিদেশে ফোকাস পায়। বাংলাদেশ সরকারকে যাতে চাপে ফেলা যায়। আন্দোলনকারীরা ধর্ষণের ঘটনাকে সামনে এনে আন্দোলন শুরু করলেও এখন অযাচিতভাবে টেনে আনা হচ্ছে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীকে টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে। তাদের প্রতিবাদের স্লোগানে ধর্ষণের বিচারের পরিবর্তে উচ্চারিত হচ্ছে ‘পাহাড় থেকে সেনা হঠাও’। ইউপিডিএফের পার্বত্য চট্টগ্রামবিরোধী কর্মসূচি প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে খুব কৌশলে মোকাবিলা করতে না পারলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠবে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দিন বলেন, প্রশাসনের সব শাখা পার্বত্য এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এরপরও একটি মহল নতুন নতুন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

৫ দিন পর স্বাভাবিক হচ্ছে খাগড়াছড়ি :খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’। এর পর থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে খাগড়াছড়ি। ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকলেও চার দিন পর খুলেছে দোকানপাট। শহরে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে শহরের পরিবেশ। অবরোধ তুলে নেওয়ায় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ছুটি থাকায় পর্যটকরাও বেড়াতে এসেছেন। অনেকে সাজেকেও যাচ্ছেন। বুধবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটিসহ সব সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। জেলা সদর ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকলেও দোকানপাট খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।যুগান্ত

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions