ডেস্ক রির্পোট:- চট্টগ্রাম ওয়াসায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ওয়াসার প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো সংবাদপত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমডি খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে পরপর তিন দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তিন দফায় মোট ৪৫ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগে শর্ত জটিলতার কারণে অনেক যোগ্য প্রার্থী আবেদন করতে পারছেন না।
এর আগে ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে চট্টগ্রাম ওয়াসার তৎকালীন এমডি প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহকে অব্যাহতি দেয়। তিনি ২০০৯ সাল থেকে টানা আটবার নিয়োগ পেয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর এমডির দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ দায়িত্ব পালনকারী এমডি হিসেবে রেকর্ড হয়ে আছে। ফজলুল্লাহর বিদায়ের পর ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পান চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) আনোয়ার পাশা। তার পর বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন একই পদের মনোয়ারা বেগম।
চট্টগ্রাম ওয়াসায় এমডি নিয়োগের জন্য প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ। পরদিন ২৫ মার্চ এবং পরে ৭ এপ্রিল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করা হয়। তবে এ দুই দফায় প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় ২২ জুলাই আগের সব বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। জাতীয় দৈনিকগুলোতে এটি ছাপা হয় ২৩ ও ২৪ জুলাই। প্রতিবারই মন্ত্রণালয়ের গঠিত কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি শর্ত কিছুটা শিথিল করেছে। প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর অভিজ্ঞতা ২৫ বছর চাওয়া হলেও পরবর্তী ধাপে তা কমিয়ে ২০ বছর করা হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, এমডি পদের জন্য এ পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় আবেদন করেছেন ৩৩ জন প্রার্থী এবং তৃতীয় দফায় আবেদন করেছেন ১২ জন। সব মিলিয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, সমাজকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার প্রার্থী।
আবেদনকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা থাকলেও বয়সসীমার কারণে তাদের অনেকে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। আবার যারা এখনও চাকরিতে আছেন, তাদের স্থায়ী পদ ছেড়ে তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক পদে আসতে হচ্ছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই পিছপা হচ্ছেন। আবার অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে তখন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ওয়াসার এমডি করতে গেলে এ নিয়োগ বাতিল হতে পারে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এমডি পদে প্রার্থীর জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে– প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশি নাগরিক এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে, ন্যূনতম বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলা হয়। প্রার্থীর বয়সসীমা বলা হয়েছে অনূর্ধ্ব ৬০ বছর। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা সাবেক কর্মকর্তা হতে হবে এবং জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর ন্যূনপক্ষে তৃতীয় গ্রেড বা সমপর্যায়ের স্কেলধারী হতে হবে। তিন বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। তবে এই শর্তগুলোই এখন এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত সরকারি চাকরিজীবীরা ৫৯ বছর বয়সে অবসরে যান। এমডি পদের জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বছর। ফলে অবসরে যাওয়া অভিজ্ঞ অনেক কর্মকর্তা আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার যারা চাকরিতে আছেন, তারা স্থায়ী পদ ছেড়ে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক পদে আসতে ঝুঁকি নিচ্ছেন না। ফলে বিজ্ঞপ্তি দিলেও যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর ফলে প্রত্যাশিত সংখ্যক আবেদন আসেনি।
সব আবেদন ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জানা গেছে, প্রার্থীদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং চুয়েট থেকে একজন করে মোট তিন জন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটি আবেদনকারীদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করবে। এরপর মন্ত্রণালয় তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এমডি পদে নিয়োগের জন্য তিনবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ৪৫ জন আবেদন করেছেন। সব আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শুনেছি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। কবে নাগাদ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে, তা মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসায় এমডি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বেশি বয়স্ক লোক মানে অভিজ্ঞ, সেটা ঠিক নয়। কেননা তথ্য-প্রযুক্তির কারণে চাকরির ধরনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যাদের বর্তমান এ টেকনোলজি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান আছে তাদেরই এ পদে দায়িত্ব দিতে হবে। শুধু তাই নয়, ওয়াসার এমডি পদে দায়িত্ব পালনকারীদের অবশ্যই টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হবে। এজন্য আমরা প্রকৌশল শিক্ষায় শিক্ষিতদের নিয়োগের দাবি জানিয়েছি। তবে সব কিছু বিবেচনা করে যোগ্য ব্যক্তিকে দ্রুত এসডি পদে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। গত এক বছর ধরে ওয়াসা ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলছে। যে কারণে ওয়াসার কার্যক্রমে গতি কমেছে।’ট্রিবিউন