ডেস্ক রির্পোট:- পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে একে-৪৭, একে-৫৬, একে-২২, এম-১৬, মার্ক-২ রাইফেল, এম-৪ কার্বাইন, ৪০ এমএম গ্রেনেড লঞ্চার, চায়না রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, এসএলআর, এসএমজি, এলজি, বিমানবিধ্বংসী রিমোট কন্ট্রোল বোমা, গ্রেনেড, হেভি মেশিনগান, জি-৩ রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল। এ ছাড়াও রয়েছে রকেট লঞ্চার, বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, হাতবোমা, শক্তিশালী ওয়াকিটকি, দেশি পিস্তল, বন্দুক এবং মর্টার। আছে ড্রোন, সিগন্যাল জ্যামারসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন সরঞ্জাম। এসব অত্যাধুনিক প্রাণঘাতী অস্ত্রের মজুত রয়েছে দেশের তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে থাকা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে। এসব অস্ত্রের জন্য খাগড়াছড়ির মণিপুরের তারাবন এলাকায় রয়েছে অস্ত্রগুদাম। খুন, গুম, চাঁদাবাজি, অপহরণ আর আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব অস্ত্র। অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের মজুত, চাঁদাবাজি আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীরা এখন স্বপ্ন দেখছে তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার। তিন পার্বত্য জেলায় কাজ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এসব তথ্য জানান। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তারা বলেন, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও বিবৃতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের দাবিদাওয়ার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি ‘জুম্মল্যান্ড’ গঠনের অন্তর্নিহিত ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানচিত্র যোগ করে কল্পিত ‘জুম্মল্যান্ড’-এর মানচিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। তারা জানান, ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের লক্ষ্যে অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে পাহাড়কে অশান্ত করে তুলেছে সন্ত্রাসীদের আঞ্চলিক চারটি সংগঠন। ওই চার সংগঠন হলো ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-প্রসিত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা বা মূল) ও জেএসএস (সংস্কার)। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে আসছে তারাই আধিপত্য বিস্তার ও নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিতে অস্ত্রের হুংকার দিচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে নৃশংস ঘটনা। পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে আরেক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সাম্প্রতিককালে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুত কমে যায়। ঘাটতি পূরণে তারা পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র থেকে অবৈধ পন্থায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনছে। চাঁদাবাজির বড় অংশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে ব্যয় করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন পার্বত্য জেলা থেকে বছরে চাঁদাবাজি হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে প্রতিবেশী দেশের পুলিশ বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে জড়ো করা অস্ত্র ও গোলাবারুদের বড় পাঁচটি চালান ধরা পড়ে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ৪০ এমএম গ্রেনেড লঞ্চার, দুটি এম-১৬ রাইফেল, তিনটি একে-৪৭ রাইফেল, ১০টি গ্রেনেড, ১০ হাজার ৫০ রাউন্ড অ্যামুনেশন এবং ১৩টি ম্যাগাজিন। ২১ জানুয়ারি একই দলের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে পাওয়া যায় একটি ৯ এমএম পিস্তল, তিন রাউন্ড অ্যামুনেশন, দুইটি মোবাইল, ২৫ হাজার টাকা এবং ভারতীয় ২ লাখ ১১ হাজার রুপি। পরের অভিযানে ২৩ জানুয়ারি ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীদের কাছে পাওয়া যায় একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুইটি ম্যাগজিন, ৪৫ রাউন্ড অ্যামুনেশন। ১২ ফেব্রুয়ারি জেএসএস (মূল) দলের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে পাওয়া যায় দুইটি একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল, পাঁচটি মার্কিন তৈরি এম-৪ কার্বাইন, ২০টি ম্যাগাজিন, ৫০৪ রাউন্ড ৭.৬২ মি.মি. অ্যামুনেশন ও ৪ হাজার ৬৭৫ রাউন্ড ৫.৫৬ মি.মি. অ্যামুনেশন। ২৩ মার্চ আরেক অভিযানে পাওয়া যায়-৬ হাজার ২০০ রাউন্ড ৭.৬২ মি.মি. একে সিরিজ রাইফেলের অ্যামুনেশন, ১ হাজার ৮০০ মিটার কর্ডেক্স বিস্ফোরক তার, ৬০০টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ডেটোনেটর, ২০ মিটার সেফটি ফিউজ ও বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম। তবে এটা কোন সন্ত্রাসী দলের, তা জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পার্বত্য শান্তিচুক্তি নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা জানান, চুক্তি বাস্তবায়নে ঘ খণ্ডের ১৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে জেএসএসের চুক্তি স্বাক্ষরের ৪৫ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমাদানের জন্য দিন, তারিখ ও স্থান নির্ধারণ এবং সদস্যদের তালিকা দাখিল করার কথা। এটি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি এবং জেএসএসের সব অস্ত্র সমর্পণ করা হয়নি। ফলে পাহাড়ে অস্থিরতা এবং শান্তি স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের নিয়মিত চাঁদাবাজি, হত্যা, গুম ও অপহরণের কারণে সাধারণ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শান্তিচুক্তির পর অস্ত্র সমর্পণ না হওয়ায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৪২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত ও ১১১ জন আহত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে চারটি আঞ্চলিক সংগঠনের সশস্ত্র গ্রুপের রয়েছে আর্ম ক্যাডার ও সেমি আর্ম ক্যাডার বাহিনী। এর মধ্যে আর্ম ক্যাডারের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। অন্যদিকে সেমি আর্ম ক্যাডারের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। সেমি আর্ম ক্যাডাররা অস্ত্রে প্রশিক্ষিত। তারা ভবিষ্যতে সংগঠনগুলোর জন্য কাজে লাগে। এসব সন্ত্রাসীর কাছে কয়েক হাজার আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এসব পরিপ্রেক্ষিতে তিন পার্বত্য জেলায় ১৯৭৭ সালের ৩০ জুন থেকে ৫টি অপারেশন পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রথম অপারেশন ছিল অপারেশন ডিগ আউট। এটা চলে এক বছর। দ্বিতীয় অপারেশন ট্রাইডেন্ট। ১৯৭৭ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে এটা চলে ১৯৭৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৯৮৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে অপারেশন পাঞ্চিং টাইগার। চতুর্থ অপারেশনের নাম অপারেশন দাবানল। ১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এটা শেষ হয় ২০০১ সালের ৩১ জুলাই। সবশেষ অপারেশন উত্তরণ শুরু হয় ২০০১ সালের ১ আগস্ট থেকে। এ অপারেশন চলছে।বাংলাদেশ প্রতিদিন