ডেস্ক রির্পোট:- দেশে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ভয়াবহ রূপ নেয়া করোনাভাইরাস ফের নতুন রূপে ফিরে আসছে। সম্প্রতি ভারতসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন উপধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশেও সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে। চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন একটি ধরন সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। নতুন এই ধরনটির সংক্রামিত করার ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও রোগেও তীব্রতা কম। তবে অসাবধানতা এবং অচেতনতায় ধরনটি যে কোনো সময় শক্তিশালীও হয়ে উঠতে পারে। রাজধানীসহ অনেক জেলা শহরেও পাওয়া যাচ্ছে রোগী। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মারাও যাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু আগের মতো এটি নিয়ন্ত্রণে নেই চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ। রাজধানীতেও কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। জেলা শহরে তো এর বালাই নেই। তাই আমাদের সবাইকেই যথেষ্ট সাবধান এবং সচেতন থাকতে হবে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫টি নির্দেশনা কঠোরভাবে প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩৬ জন। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২১টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যাওয়া চারজনই পুরুষ, বাকিজন নারী। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকা ও রাজশাহীতে একজন করে মারা যান। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬ জন। নতুন করে ৩৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৮ জনে। এছাড়া ৫ জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫১৫ জন।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনা আবার বাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর, পানিবাহিত সংক্রমণজনিত জ্বর (যেমন টাইফয়েড) ইত্যাদি চলমান রয়েছে। এগুলোর সাথে করোনা যুক্ত হওয়াতে ভোগান্তি ও জীবনহানির সম্ভাবনা বেড়ে গেল। পাশের দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। করোনা ওমিক্রন ধরনের কয়েকটি উপধরন দ্বারা এবার সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এই উপধরনগুলোর ছড়িয়ে পড়া বা মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা বেশি।
বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো ৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর দশ দিন পর, ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যু ঘটে। করোনা মহামারির সবচেয়ে ভয়াবহ সময় ছিল ২০২১ সালের আগস্ট মাস। ওই বছরের ৫ আগস্ট ও ১০ আগস্ট এই দুই দিনে সর্বোচ্চ প্রতিদিন ২৬৪ জন করে মৃত্যুবরণ করেন, যা ছিল দেশের করোনাকালের সর্বোচ্চ দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা।
চট্টগ্রামে দুইজনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্ত আরো দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত দুজন আগে থেকে কিডনি ও হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। চলতি মাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে শুরু হওয়ার পর জেলায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হল। তারা সবাই আগে থেকে বিভিন্ন প্রাণঘাতি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. এরশাদ (১৪) কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। শুক্রবার তার ডায়ালাইসিসও করা হয়। পরে তার দেহে কোভিড শনাক্ত হয়। তার হার্ট অ্যাটাকও হয়েছিল। এরপর থেকে ভেন্টিলেটরে ছিল। যখন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আনা হয় তখন শারীরিক অবস্থা গুরুতর ছিল। গতকাল তার মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত নিহত অন্য জন হলেন চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার (৪৫)। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি কার্ডিওজেনিক সেপটিক শকে ছিলেন।
২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, উনাকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তার আগে থেকেই অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন। পরে করোনা শনাক্ত হলে এখানে আনা হয়। তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর ছিল। গতকাল তিনি মারা যান।
এই রোগীরা শুধুমাত্র করোনার কারণে মারা গেছেন, তেমন নয়। তারা আগে থেকেই প্রাণঘাতি রোগে গুরুতর অবস্থায় ছিলেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মোট চারজনের মৃত্যু হল।
এরআগে শুক্রবার নগরীর বাকলিয়ার বাসিন্দা ফজিলাতুন্নেছা (৭১) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড আইসিইউ ওয়ার্ডে মারা যান। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।
তার আগে ১৬ জুন মীরসরাই উপজেলার জোররাগঞ্জের বাসিন্দা শফিউল ইসলামের (৭৫) মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। তিনি পোস্ট অপারেটিভ জটিলতা ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
এদিকে রোববার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জন নগরীর বাসিন্দা। সরকারি-বেসরকারি ১২টি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে ২৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয় গত ২৪ ঘণ্টায়। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৭৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৬ জনই নগরীর। বাকি ৮ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
এরআগে গত ১০ জুন প্রথম চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানানো হয়। সেদিন একজনের শরীরে এবং তার তিনদিন আগে আরো দু’জনের শরীরে করোনভাইরাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছিল জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ, ৩৪ জন নারী এবং একজন শিশু। নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ, দুজন নারী ও একজন শিশু। কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর জেলার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে এই রোগের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়। শুরুতে সেখানে আইসিইউ বেড থাকলেও ভেন্টিলেটর না থাকায় সেই সেবা ছিল। পরে জেনারেল হাসপাতালে তিনটি ভেন্টিলেটর সংযুক্ত করে ৫ শয্যার আইসিইউ সেবা চালু করা হয় কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য।