কর্ণফুলী টানেলে এক বছরে লোকসান ১শ কোটি টাকা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
  • ২৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, উদ্বোধনের এক বছরের মাথায় কর্ণফুলী টানেল দিয়ে দৈনিক ১৮ হাজার ৪৮৫টি গাড়ি চলাচল করবে। কিন্তু ২০২৪ পার হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, টানেলে প্রতিদিন গাড়ি চলছে ৩ হাজার ৯১০টি। এই সংখ্যা সমীক্ষা বা প্রত্যাশার মাত্র এক চতুর্থাংশ। অপরদিকে যে গাড়িগুলো চলছে তার বেশিরভাগই ছোট গাড়ি। ফলে প্রত্যাশিত টোলের কাছেও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

গত এক বছরের বেশি সময়ে আদায়কৃত টোলের চেয়ে একশ কোটির বেশি টাকা পরিচালন ব্যয় হিসেবে খরচ হয়েছে। এই খরচ ক্রমাগত বাড়ছে। মাস্টার রোল ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগসহ টানেলের নানা খাতে বেশ কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এতে ব্যয় আরো বাড়ছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হয়। কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়কে মূল শহরের সাথে যুক্ত করাই টানেল নির্মাণের অন্যতম লক্ষ্য। চীনের ঋণ সুবিধায় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় টানেল। চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) টানেলটি নির্মাণ করে। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলের সাথে মোট সড়ক নির্মিত হয়েছে ৯.৩৯ কিলোমিটার। মূল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টিউব দুটি সমান্তরালভাবে নদীর তলদেশ থেকে ১৮ মিটার থেকে ৩১ মিটার গভীর (পানির লেভেল থেকে ৪১ মিটার) দিয়ে পতেঙ্গা ও আনোয়ারাকে যুক্ত করেছে। একটি টিউব থেকে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটার। তবে টিউব দুটিতে যাতায়াতের চারটি পথ রয়েছে। ৩৫.৪ ফুট চওড়া ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলের একটি টিউবের দুই লেনে একমুখী গাড়ি চলাচল করে। অর্থাৎ একটি টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারার দিকে গাড়ি যায়, অপরটি দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গায় আসে।

নির্মাণের আগে বলা হয়েছিল, টানেল দক্ষিণ চট্টগ্রামকে শুধু নয়, বাংলাদেশকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কঙবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্পায়ন, আবাসন এবং পর্যটনে এই টানেল প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে। কঙবাজার–চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেওয়া ছাড়াও টানেলের মাধ্যমে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা–চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এই টানেল দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.১৬৬ শতাংশ বাড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

টানেল নিয়ে পরিচালিত সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, প্রতিদিন ১৮ হাজার ৪৮৫টি গাড়ি টানেল ব্যবহার করে চলাচল করবে। বছরে চলাচল করবে প্রায় ৭৬ লাখ গাড়ি। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর টানেল চালু হয়। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পরে এসে টানেলের হিসাব মিলেনি। সমীক্ষার সাথে বাস্তবতায় বড় ধরনের ফারাক পরিলক্ষিত হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে প্রতিদিন। সেতু কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে।

সূত্র বলেছে, কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে উন্নয়নের যে লক্ষ্য নিয়ে টানেল নির্মাণ করা হয়েছিল তা হয়ে উঠেনি। ওপারে হয়নি আবাসন ও শিল্পায়নের মতো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। ফলে টানেল দেখার আগ্রহ নিয়ে কিছু মানুষ যাতায়াত করলেও কঙবাজার বা দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ টানেল ব্যবহার করছেন না। টানেলের অনেক আগে শাহ আমানত সেতু হয়ে পটিয়া বা আনোয়ারা যাতায়াত করা যায় মূল শহর থেকে। ফলে টানেলে গাড়ি চলাচল বাড়ার পরিবর্তে কমে আসছে।

বছরে ৭৬ লাখ গাড়ি চলাচলের প্রত্যাশা এবং সমীক্ষা রিপোর্ট থাকলেও বাস্তবে টানেল চালু হওয়ার পর থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ১৫ লাখের মতো গাড়ি চলাচল করেছে। এসব গাড়ির মধ্যে প্রায় ৭৭ শতাংশ প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস। বাসের পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশ, ট্রাকের পরিমাণ ১২ শতাংশ। অন্য কোনো গাড়ি টানেলে চলাচল করেনি বললেই চলে। ছোট গাড়ির টোল কম হওয়ায় টানেলের আয়ও কম হয়। প্রতিদিন সাড়ে ১০ লাখ টাকার মতো টোল আদায় হয় টানেলে। অথচ প্রতিদিন খরচ হয় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। টানেলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে কৃত্রিম অঙিজেন প্রবাহ এবং দিনের মতো আলো রাখা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, টোল আদায়সহ টানেল পরিচালন ও আলো সরবরাহ, সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন এই টাকা ব্যয় হয়। সাম্প্রতিক হিসাবে বিগত এক বছরে টোল আদায় হয়েছে ৩৮ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। অথচ পরিচালন ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা। বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান দেওয়া টানেল কবে নাগাদ প্রত্যাশা পূরণ করবে তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। আনোয়ারা, পটিয়া, বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন এবং নগরায়ন না হলে এই টানেল পুরোদমে চালু হওয়ার আশা ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেন তারা।আজাদী

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions