বড় সাজ্জাদের নির্দেশে নিয়ন্ত্রণ করত চট্টগ্রামের অপরাধ জগৎ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
  • ১৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- নগরীর বায়েজিদ–চান্দগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলেই চাঁদা দাবি করতেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। কেউ চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে তার দিকে অস্ত্র তাক করে দিতেন হুমকি। সবাই তার ভয়ে তটস্থ থাকতেন। সম্প্রতি ফেইসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ওসিকে পেটানোর হুমকি দেন সাজ্জাদ। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে তাকে ধরতে নগদ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা দেওয়া হয়। অবশেষে গত শনিবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের গোয়েন্দা সহায়তায় তাকে ধরা হয়।

গতকাল রোববার দুপুরে নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার দিবাগত রাতে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার বসুন্ধরা সিটিতে ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন সাজ্জাদ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পালানোর চেষ্টা করলে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার বলেন, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১৫টি মামলা আছে। সে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চট্টগ্রামের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করত। দুবাইয়ে থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদ তাকে সবকিছু নির্দেশনা দেয়। ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভবন নির্মাণ ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে বিপুল অংকের চাঁদা দাবি করত। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাড়িতে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভাঙচুর ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করত।

হাসিব আজিজ বলেন, ছোট সাজ্জাদ রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকার ত্রাস। সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার আলোচিত ডাবল মার্ডার মামলার আসামি। চান্দগাঁও থানারও একটি খুনের মামলার আসামি সে। বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও মোহরাকেন্দ্রিক সব ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত সে। সে সরাসরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এসে আমাদের বায়েজিদ থানার ওসিকে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেয়। এরপর তাকে ধরিয়ে দিতে পারলে অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করি। তাকে ধরতে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের গোয়েন্দা দল আমাদের অভূতপূর্ব সহযোগিতা করেছে।

১৪ দিনের রিমান্ড : ছোট সাজ্জাদের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালত পৃথক দুটি মামলায় তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাজ্জাদকে আদালতে হাজির করা হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, চান্দগাঁওয়ের আফতাব উদ্দিন তাহসিন ও বায়েজিদের মোহাম্মদ আনিছ হত্যা মামলায় সাজ্জাদের ৭ দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিচারক। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানার আফতাব উদ্দিন তাহসিন হত্যা মামলায় ১৪ দিনের এবং বায়েজিদ থানার মো. আনিছ হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়।

আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী থানার অঙিজেন কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিছ নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর বিকালে চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া জাগরণী সংঘ সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমে স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। চান্দগাঁওয়ের অদুরপাড়া জাগরণী সংঘ সংলগ্ন চায়ের দোকানে ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসিনকে হত্যার ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় তাহসিনের বাবার করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাজ্জাদকে। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর অঙিজেন এলাকায় সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে গেলে পুলিশের ওপর গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান তিনি।

হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ নগরীর বায়েজিদ, অঙিজেন, চান্দগাঁও এলাকায় পরিচিত ছোট সাজ্জাদ বা বুড়ির নাতি হিসেবে। হুলিয়া নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের অনুসারী তিনি।

থাকত গহীন এলাকায় : এক প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল গ্রেপ্তার এড়াতে সাজ্জাদ রাউজান, রাঙ্গুনিয়ার গহিন এলাকায় অবস্থান করত। যেখানে অভিযান করাটা ছিল অনেক দুরূহ। মাঝে দুই–একবার শহরে এলেও অল্প সময়ের মধ্যেই চলে যেত। তাকে প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখার কারণে সে ধরা পড়েছে।

দুই যুগ আগে শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কে দিনের বেলায় আড়াআড়ি বাস রেখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীবাহী মাইক্রোবাস আটকে গুলি চালিয়ে আটজনকে হত্যার আসামি ছিলেন বড় সাজ্জাদ। তার অনুসারী হিসেবে তার পক্ষে বায়েজিদ ও চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি করেন ছোট সাজ্জাদ।আজাদী

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions