ডেস্ক রির্পোট:- চন্দনাইশের দোহাজারী পৌর সদরে চট্টগ্রামমুখী পূরবী পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস একটি ব্যাটারি রিকশাকে চাপা দিলে দুই স্কুল শিক্ষার্থী ও রিকশা চালক প্রাণ হারিয়েছেন। তারা হল ওয়াকার উদ্দীন আদিল (১২), তার বোন উম্মে হাবিবা রিজভী (১৫) ও রিকশা চালক রুহুল আমিন (৪৮)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রুহুল আমিনের রিকশায় আরেক স্কুল শিক্ষার্থীসহ দুই ভাই–বোন দোহাজারী পাঠশালা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় ঐ স্কুল শিক্ষার্থীও।
এদিকে রাঙ্গাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়ায় ট্রাক–সিএনজি টেক্সির মুখোমুখি সংঘর্ষে চিনগ্ধী চাকমা (৫৫) এক নারী প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে লোহাগাড়ায় বাসের সাথে একটি কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে দুই গাড়ির চালক ও এক সহকারী আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের দুর্ঘটনার হটস্পট নামে পরিচিত জাঙ্গালিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ দোহাজারী পৌর সদরে চট্টগ্রামমুখী পূরবী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহত দুই শিক্ষার্থী ওয়াকার উদ্দীন আদিল (১২) ও উম্মে হাবিবা রিজভী (১৫) দোহাজারী জামিজুরি গ্রামের মো. জসিম উদ্দিনের সন্তান। নিহত অপরজন হলেন রিকশা চালক রুহুল আমিন (৪৮)। এ ঘটনায় রিকশাতে থাকা ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজী ফাহমিদা ওয়াশিমা তুশিন (১৫) গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপর বিক্ষুব্ধ জনতা চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে স্থানীয়দের সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, দোহাজারী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড জামিজুরী গ্রাম থেকে রিকশা চালক রুহুল আমিন সকাল ৮টার দিকে ওয়াকার উদ্দীন আদিল, উম্মে হাবিবা রিজভী এবং একই এলাকার কাজী ফাহমিদা ওয়াশিমা তুশিনকে কোচিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পার্শ্ব সড়ক থেকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে উঠে। এসময় চট্টগ্রামগামী পূরবী পরিবহনের একটি দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাস পেছন থেকে রিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় ওয়াকার উদ্দীন আদিল ও রিকশা চালক রুহুল আমিন। ঘটনার পর পর নিহত ২ জনসহ গুরুতর আহত উম্মে হাবিবা রিজভী ও কাজী ফাহমিদা ওয়াশিমা তুশিনকে উদ্ধার করে দোহাজারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উম্মে হাবিবা রিজভী ও কাজী ফাহমিদা ওয়াশিমা তুশিনকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নেয়ার পথে উম্মে হাবিবা রিজভী মারা যায়। নিহত আদিল ও রিজভী জামিজুরী ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জসিম উদ্দীনের সন্তান। হাজবি (৪) নামে জসিম উদ্দীনের আরেকটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আদিল দোহাজারী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্র এবং রিজভী দোহাজারী জামিজুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। জসিম উদ্দীনের বড় কন্যা রিজভী পড়ালেখায় ছিল খুবই মেধাবী। সে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছে এবং বৃত্তি পেয়েছে। মেয়ে ডাক্তার হয়ে গ্রামে সপ্তাহে একদিন অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা করাবে এ ছিল স্বপ্ন। জসিম ও শাপলা দম্পতি এ কারণে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করে মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। বুক ভাঙা কান্নায় কথাগুলো বলছিলেন হতভাগা পিতা মো. জসিম উদ্দীন। মেয়ে পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় দিয়েছিলেন দোহাজারী পাঠশালা স্কুল এন্ড কলেজের কোচিংয়ে। কিন্তু সন্তানদের নিয়ে তার সমস্ত স্বপ্ন মুহূর্তেই ছুরমার হয়ে গেল। ঘাতক বাস কেড়ে নিলো জসিমের দুই কলিজার টুকরা ছেলে আদিল ও মেয়ে রিজভীকে।
রিকশা চালক রুহুল আমিন একই এলাকার মৃত আমানত উল্লাহর ছেলে। তার ৬টি কন্যা সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে আহত তুশিন একই এলাকার প্রবাসী কাজী আবদুল্লাহর মেয়ে। সে দোহাজারী পাঠশালা স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। তার চাচাতো ভাই কাজী হাসান বলেন, তুশিনকে চমেক থেকে বর্তমানে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূরবী বাসটি রিকশাকে পেছন থেকে চাপা দিলে রিকশাটি সামনে থাকা ঈগল পরিবহনের অপর একটি যাত্রীবাহী বাসের পেছনে ধাক্কা খায়। এতে রিকশাটি দুই বাসের মাঝখানে পড়ে চাপা পড়ে যান যাত্রী, চালকসহ সবাই। আর এক মিনিট সময় পেলেই তারা কোচিংয়ে ঢুকে যেতে পারতো।
এদিকে ঘটনার পরপর শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে গতিরোধক স্থাপনের দাবিতে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। দোহাজারীতে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, বাজার, স্কুল ও হসপিটাল পয়েন্টে আধুনিক গতিরোধক ব্যবস্থা স্থাপনের দাবি জানান তারা। একই সাথে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দোহাজারী পৌরসভায় নিজস্ব কমিউনিটি পুলিশ ব্যবস্থা এবং সড়কের উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করারও দাবি জানান। বিশেষ করে একটি গতিরোধক থাকলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতো না বলেও মনে করেন স্থানীয়রা।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, এ ঘটনায় ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং ঘাতক বাস চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়ায় ট্রাক–সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ডাকবাংলো এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নারীর নাম চিনগ্ধী চাকমা (৫৫)। তিনি রাঙ্গামাটির জুড়াছড়ির এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় তার স্বামী সুরেশ চাকমাকেও গুরুতর আহত অবস্থায় চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালে নেয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ফেরিঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি সিএনজি টেক্সির সঙ্গে রাজস্থলী থেকে আসা খুলনা মেট্রো–শ ১১–০৩৪৭ নম্বরের ট্রাকটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় সিএনজিতে থাকা চিনগ্ধী চাকমা ও সুরেশ চাকমা গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে চন্দ্রঘোনা হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওই নারী মারা যান। অন্যদিকে আহত সিএনজি টেক্সি চালককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বান্দরবান পাঠানো হয়েছে।
চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. রাজীব জানান, হাসপাতালের আনার আগেই নারীর মৃত্যু হয়। তার স্বামীও গুরুতর আহত হয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) ইমরুল আহমেদ জানান, ট্রাকসহ চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
অপরদিকে লোহাগাড়ায় বাসের সাথে কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও সহকারীসহ ৩ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের দক্ষিণ বুনিয়া এলাকার মৃত নজির আহমদের পুত্র বাস চালক সৈয়দ আমিন (৫৫), মাগুরা জেলার শালিকা তালগড়ি সীমাখালি এলাকার মোস্তফা কামালের পুত্র কাভার্ডভ্যান চালক সংগ্রাম (৩২) ও একই এলাকার শরিফুল ইসলামের পুত্র চালক সহকারী আল আমিন (২২)।
প্রত্যক্ষদশীরা জানান, ঘটনাস্থলে কক্সবাজারমুখী ঈগল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীতমুখী কাভার্ডভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুই চালক ও এক সহকারী গুরতর আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা সদরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। দুর্ঘটনায় উভয় গাড়ির সম্মুখভাগ দুমড়ে মুচড়ে গেছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি ২টি উদ্ধার করে হাইওয়ে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।আজাদী