বান্দরবান :- বান্দরবান জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শিখরে রয়েছে রোয়াংছড়ি উপজেলার রোমাঞ্চকর পর্যটন স্পট দেবতাখুম। এটিকে এক কথায় বলা হয় অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের তীর্থস্থান।
খুম অর্থ হলো জলাধার। এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও বড় খুম হলো দেবতাখুম। অন্যতম জনপ্রিয় রোমাঞ্চকর দেবতাখুমে ভ্রমণপিপাসুদের এখন ভিড় জমেছে। এই প্রকৃতি মনোরম সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসুরা শেষ মৌসুমে ছুঁটে আসছে এই খুমে।
বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেবতাখুম। এটি রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় রোমাঞ্চকর এই দেবতাখুমের অবস্থান। এটি মূলত তারাছা খালের একটি অংশ।
দু’পাশ সবুজ বাঁশ গাছের পাহাড়ে ঘেরা এবং পাথর ভেদ করে বয়ে যাওয়া গভীর জংগল পাড়ি দিয়েছে পানিধারাটি। যে খুমের গভীরতা রয়েছে ৫০-৭০ ফুট। বিশালাকার পাথরের ঢালের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝরনা নদীর দৃশ্য যেন এক কল্পনা।
দেবতাখুমে যাওয়ার আগেই পড়বে ছোট্ট এক খুম। যার নাম ‘পং সু আং খুম। তাছাড়া এই খুমে পৌছাতে পাড়ি দিতে হবে কখনো পাহাড় আবার খালের পাশ দিয়ে হেটে চলা হাইকিং মাধ্যম। এই খুমের ট্রেইল যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ঙ্করও বটে।
খাড়া পাহাড় কোথাও নিচু আবার কোথাও পাথরে দেশ। এই খুমে পৌছাতে হাটা লাগবে প্রায় দেড় ঘন্টা। নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে বড় বড় দুই পাহাড়ের মাঝখানে ভিন্ন এক পরিবেশ পাওয়া যায় এই দেবতাখুমে।
ঢাকা থেকে আবির, সাইমাসহ ছয়জনের দল নিয়ে বাড়াতে এসেছেন দেবতাখুমে। তারা জানিয়েছেন, এই দেবতাখুমে না আসলে বুঝা যাবে না আসলে কততা সুন্দর। চারদিকে পাহাড় আর পাথর। সবচেয়ে বেশী আনন্দ উপভোগ করা যায় ভেলা চড়িয়ে। এই প্রকৃতিতে না আসলে বোঝা যাবে না দেবতাখুম কত সুন্দর।
জার্নিং উইথ মি কটেন্ট ক্রিয়েটর উম্মে সুবাসুম বলেন, বাংলাদেশে এত জায়গা থাকলেও দেবতাখুমে মত এই সুন্দর দেখেনি। ভিডিওতে যা দেখেছি তার চেয়ে আরো অনেক সুন্দর। এই সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে হলে সকলকেই একবার হলেও ঘুরে যাওয়া উচিত।
বিশাল দুটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে চলে গেছে পথ, পথটি পায়ে হেঁটে ও ভেলায় করে পাড়ি দিতে হয়। যেখানে গেলে মিলবে ট্রেকিং, অ্যাডভেঞ্চার, রিস্ক, ভেলার কায়াকিং ও শব্দ হিসাবে নিজের প্রতিধ্বনি। সুনসান নীরবতা, পাখির কলরব, সান বাঁধানো পাথরের সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে স্বচ্ছ পানিধারা।
খালের পানির স্রোতে পাথরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধরনের নকশা দেবতাখুমের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে আরো কয়েকগুণ। এর পথে পথে রয়েছে রহস্যের সব হাতছানি। দু’পাশের সুউচ্চ পাথরের পাহাড়ের কারণে দেবতাখুমের ভিতরে সরাসরি সূর্যের আলো পৌঁছায় না।
তাই এর ভিতরে যতই যাওয়া হয় শীতল অনুভূত হয়। ঝর্ণার পানির শব্দ শান্ত কোলাহল মুক্ত দেবতাখুমের ভিতরে বাঁশের ভেলা বা ছোট্ট নৌকা প্রবেশের মুহুর্তটি দারুণ ভয়ঙ্কর আর রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয় ভ্রমণকারীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোয়াংছড়ি কচ্ছপতলী বাজারে দেবতাখুম সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে এসেছে ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ বাইক করে দলবেঁধে আবার কেউ এসেছেন চাদের গাড়ি করে পরিবার পরিজনদের সাথে নিয়ে। কেউ কেউ এই এডভেঞ্চার চ্যালেঞ্জিং নিতে যাওয়ার ব্যস্ততা সময় পাড় করছেন।
দেবতাখুমে পৌছাতে কখনো ঝুকি নিয়ে পাহাড় ট্রেকিং আবার হেটে যেতে উড়ন্ত পাহাড়ের হাইকিং। এরপর দেখা মিলে দেবতাখুমে মাইফলকটি। চারিদিকে পাহাড় বিস্তৃত সবুজের ঘেরা খালের উপর সাজিয়ে রাখা পাথরে চিত্র। এ যেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আকর্ষণ করে তোলে পাহাড় প্রকৃতি ঢেলে সাজিয়ে রাখা নৈসর্গিক ভরা সৌন্দর্য দেবতাখুম।
দেবতাখুমে নৌকা মাঝি অংশৈম্রা মারমা বলেন,দেবতাখুম খুলিয়ে আমি তারা খুব খুশি উইওয়ে। নৌকা চালাইকালে টিয়াও পাইয়ে সংসার ভালামত চলিয়ে।
ট্যুরিষ্ট গাইডের সভাপতি পলাশ তংচঙ্গ্যা বলেন, দেবতাখুম খুলে দেয়াতেই প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটকদের আগমণ ঘটেছে। ফলে এখানকার ট্যুরিষ্ট গাইড, নৌকা চালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে কিছুটা প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। তাই আমরা চাই দেবতাখুম সার্বক্ষনিক খোলা থাকুক।
দেবতাখুম পর্যটন স্পটে গাইড হিসেবে ৮২জন সদস্য রয়েছে। সকলেই পর্যটকদের সাথে গাইডের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। বাজার থেকে দেবতাখুম আবার দেবতাখুম থেকে বাজার পর্যন্ত গাইড দিয়ে পৌচ্ছে দিচ্ছেন। দেবতাখুমে নৌকা রয়েছে পাঁচটি ও বাশের ভেলা রয়েছে ২০টির অধিক।
সেখানও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য এপার থেকে ওপার করে পাড়ি দিচ্ছে দেবতাখুমে পর্যটন সদস্যরা। আবার কেউ কেউ নিজের মাধ্যমে বাশের ভেলায় চড়ে পানি উপর বেড়াচ্ছেন কেউ ছবি তুলে নিজেকে সাক্ষী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে প্রতিটি পর্যটকদের সাথে লাইভ জ্যাকেটও রয়েছে। তাই প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে উপভোগ করা যায় এই দেবতাখুমে।