বান্দরবান:- বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইটি এক্সরে মেশিন দীর্ঘ ২ বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আকস্মিক ভাবে পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে এক্সরে মেশিন দুইটি অচল হয়ে যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে এক্সরে মেশিন দুটি মেরামত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখায় বার বার পত্র দেওয়ার পরও এক্সরে মেশিন মেরামতের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। কবে নাগাদ এই অচল এক্সরে মেশিন দুটি মেরামত করে সচল করা হবে তা কেউ জানাতে পারছে না।
গত ২০২২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিবিএল এন্ড এএসপি এর মাধ্যমে ফুজি কোম্পানির একটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করেন। ২০২৩ সালের আগষ্ট মাসে অতি বর্ষনে সৃষ্ট পাহাড়ী বন্যায় লামা হাসপাতালসহ লামা শহর তলিয়ে যায়।
এই পাহাড়ী ঢলে হাসপাতালের টিবিএল এর সরবরাহ কৃত এক্সরে মেশিনসহ দুইটি এক্সরে মেশিনই নিমজ্জিত হয়ে অচল হয়ে যায়। এক্সরে মেশিন দুটি মেরামত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট লাইন ডাইরেক্টর বরাবরে অনেকবার পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই পত্র প্রেরণের পর টিবিএল ব্রাক অফিসের মাধ্যমে একটি প্রতিনিধি দল এক্সরে মেশিন মেরামতের জন্য চেষ্টা করেন।
ব্রাকের প্রতিনিধি দল লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানায়, নষ্ট মেশিন মেরামতের জন্য জাপান থেকে যন্ত্রাংশ আনতে হবে। কবে নাগাদ যন্ত্রাংশ আনা হবে বা এক্সরে মেশিন মেরামত করতে কতদিন সময় লাগবে তার সুনির্দিষ্ট সময় ব্রাকের প্রতিনিধি দল জানাতে পারে নি।
বান্দরবান জেলার অর্ধেক জনসংখ্যার বসবাস লামা উপজেলায়। পার্শ্ববর্তী আলীকদমের চৈক্ষ্যং ও চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের জনসাধারণ লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে থাকে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ন্যস্থ হওয়া সত্বেও লামা স্বাস্থ্য বিভাগের এই সমস্যা নিরসনে বিগত দিনে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ জেলা পরিষদ গ্রহণ করে নাই।
লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগে ও আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। সঠিক রোগ নির্নয় করতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় বেশিরভাগ রোগীকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অন্যত্র চিকিৎসা গ্রহনের পরামর্শ নিয়ে ফিরে যেতে হয়।
হাসপাতালে আঘাত নিয়ে ভর্তি রোগী পৌরসভার সাবেক বিলছড়ি এলাকার বাসিন্দা ধাইচিং খই (৫৬) জানান, ‘আঘাতজনিত কারণে চিকিৎসা নিতে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ডাক্তার তাকে এক্সরে করার পরামর্শ দিয়েছে। টাকা না থাকায় লামার বাহিরে গিয়ে এক্সরে করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এক্সরে করতে না পারার কারণে চিকিৎসা না নিয়েই তাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে বলে জানিয়েছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এখিং মারমা জানান, ‘হাসপাতালের অচল এক্সরে মেশিন দুটি মেরামত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর বরাবরে অসংখ্যবার পত্র দেওয়া হয়েছে। মেরামত করবে বলে অধিদপ্তর থেকে আশ্বস্থ করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘আইসিডিডিআরবি পোর্টেবল এক্সরে দিয়ে সপ্তাহে একদিন লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর রোগীদের এক্সরে করাতেন। বর্তমানে গত একমাস ধরে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।