শিরোনাম
বান্দরবানে বম পার্টির প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে সেনা অভিযান, সরঞ্জাম উদ্ধার রাঙ্গামাটির সাজেকের জুমে ইঁদুরের উপদ্রব,২৩২ পরিবারের ফসলের ক্ষতি কঠোর অবস্থানে নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,নিরাপদ নন সাধারণ মানুষ আফগানিস্তানে আবারও ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প মব সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ দেশ, আক্রান্ত ব্যক্তিই হচ্ছেন আসামি সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর বিএনপি,কোন্দল ষড়যন্ত্রে ত্যাগীরা বিপাকে সংসদের ৪৬ আসনের সীমানায় পরিবর্ত,ইসির তালিকা চূড়ান্তন জুলাই জাতীয় সনদ,পটভূমি ও অঙ্গীকারনামায় পরিবর্তন আসছে বিএনপি বিরোধী জোটের নানা তৎপরতা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে পুলিশকে দুদকের চিঠি

চট্টগ্রামে ভোরের আগুনে প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৯০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন বলুয়ার দিঘির পশ্চিম পাড়ে জাফর সওদাগর কলোনিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এক দম্পতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আগুনে এই পরিবারের ছেলে–মেয়েসহ ৩ জন মারাত্মক ভাবে দগ্ধ হয়ে চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গতকাল সোমবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে জাফর সওদাগর কলোনিতে সবুর সওদাগরের বস্তির ৫টি পরিবারের সব কিছু পুড়ে যায়। কলোনির টিনশেড ঘরে আগুন লাগলে ভোরে ঘুম থেকে উঠে মো. ইলিয়াস (৫৪) ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪৫) ছাড়াও তাদের ছেলে সোহান, মেয়ে শাহিনা এবং ইলিয়াসের ভাই ফয়সাল বাথরুমে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানে ধোঁয়ার মধ্যে আটকা পড়েন তারা। ওইখানেই মো. ইলিয়াস ও পারভীন আক্তার মারা যান। মো. ইলিয়াছ পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বলে জানান আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া কলোনির বাসিন্দা আমেনা বেগম। ছেলে সোহানও একই কাজ করেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, আগুনে অনেক ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়েছিল। আগুন নিভিয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থল ছাড়ার আগ মুহূর্তে জানা যায়, একটি সেমিপাকা ঘরের বাথরুমে পাঁচজন আটকা পড়েছেন। তখন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের উদ্ধার করেন। এসময় মো. ইলিয়াস ও পারভীন আক্তারকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের ছেলে সোহান, মেয়ে শাহিনা আক্তার এবং ইলিয়াছের ভাই ফয়সালকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ভর্তি করা হয়।

ভোরে যখন আগুন লাগে তখন বস্তির কেউ ঘুমে এবং কেউ সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন বলে জানান কলোনির বাসিন্দা সাইফুল্লাহ। ফায়ার সার্ভস জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তার আগে ওই কলোনির সবুরের মালিকানাধীন পাঁচটি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চন্দনপুরা ও নন্দনকানন স্টেশনের ৪টি ইউনিট সেখানে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় তারা সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে কলোনির পাঁচটি কাঁচা ঘর পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে স্বামী–স্ত্রী দুইজনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। এতে ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি ও ৩৫ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সিএমপি দক্ষিণের উপ কমিশনার শাকিলা সোলাতানা। এসময় সাথে ছিলেন কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার মাহফুজ ও কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল করিম।

অগ্নিদগ্ধ ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক : চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আশংকাজনকভাবে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন সোহান (১৮) ও শাহীনা আক্তার (২২) এবং ফয়সাল (১৯)। চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান মো. রফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, হতাহতদের শরীর পুড়ে যায়নি। তবে ধোঁয়ায় তিনজনের শ্বাসনালি সম্পূর্ণ পড়ে গেছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। এছাড়া দুইজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। চিকিৎসাধীন তিনজনের অবস্থা আশংকা জনক।

খালার বাড়িতে থাকায় বেঁচে যায় ১৪ বছরের তাহসিনা : ইলিয়াছের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছোট মেয়ে ১৪ বছরের তাহসিনা আক্তার কয়েক দিন আগে কর্ণফুলী থানা এলাকায় খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। মা–বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাহসিনা খালার সাথে হাসপাতালে ছুটে এসে শোকে স্তব্দ হয়ে যায়।

তাহসিনা বলে, পাঁচ মাস আগে বলুয়ার দিঘির দক্ষিণ পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ের এই সেমিপাকা বাসায় আসে তারা। ভাড়া ৬ হাজার ৩০০ টাকা। মায়ের সঙ্গে দুই দিন আগে ফোনে তার শেষ কথা হয়। সকালে সে আগুন লাগার খবর পায়। চিকিৎসাধীন ভাই–বোন এখনো মা–বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানে না বলে জানায় তাহসিনা আক্তার। তাহসিনাকে আগলে বসে আছেন তাঁর ফুফু পারভিন বেগম। পারভিনের বাসাও তাহসিনাদের বাসার পাশে। সকালে আগুন লাগার পর তাঁরা ওই বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পারভিন বলেন, যখন আগুন লাগে, সবাই ঘুমে ছিল। আগুনের জন্য ভেতরে ঢোকা যাচ্ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভিয়ে একটা শৌচাগার থেকে পাঁচজনকে বের করে। ভাই আর ভাবি মারা গেছেন। আমার ভাই পো আর ভাইঝির অবস্থাও ভালো নয়।

সোহানের পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন মো. ফয়সাল। তিনি বালতি তৈরির কারখানায় চাকরি করেন। হাসপাতালে ফয়সালের মা রুশনা বলেন, ‘ভোরে আগুন দেখতে পেয়ে আমার ছেলে ফয়সাল চিৎকার করে তাদের (সোহানদের) ঘুম থেকে ডাকতে গিয়েছিল। তখন আগুন আরও ছড়িয়ে যায়। তারা সবাই তখন বাথরুমে আশ্রয় নেয়। এসময় আমার ছেলে আগুনে দগ্ধ হয়ে যায়। এখন আমার ছেলের অবস্থা খুব খারাপ। শ্বাস নিতে পারছে না।’

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ–সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, যে ঘরগুলোতে আগুন লেগেছে, তার বিপরীতে আরেকটি ঘরের বাথরুম থেকে আহতদের উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের ধারণা আগুন থেকে বাঁচতে তারা বাথরুমে ঢুকেছিল এবং ধোঁয়ায় সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

জাফর সওদাগর কলোনিতে যে ৫টি ঘরে আগুন লেগেছে সেই পাঁচটি ঘর হল সবুর সওদারগরের। তিনি বলেন, আগুনে একই পরিবারের স্বামী–স্ত্রী মারা গেলেন, তাদের দুই ছেলে–মেয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার কলোনিতে যারা থাকেন তারা খুবই গরিব মানুষ। তাদের সব পুড়ে গেছে। এখন আমি তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি।আজাদী

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions