রাঙ্গামাটি:- ২০০৮ সালে রাঙামাটিতে মিনি-চিড়িয়াখানা স্থাপনের পর সেখানে আনা হয় কয়েকটি ভাল্লুকছানা। বিগত প্রায় দুই দশকের কাছাকাছি সময়ে বন্যপ্রাণী ভাল্লুকগুলোর একটি ছাড়া বাকী সবগুলো মারা যায়। এরপর একটি ভাল্লুকের দিন-রাত পেরিয়েছে একাকীত্বেই। অবশেষে সেই একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতার অবসান হলো। নিঃসঙ্গ ভাল্লুকটিকে উদ্ধার করে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। একই সঙ্গে মিনি-চিড়িয়াখানাটির অন্য সব বুনো প্রাণীগুলোকেও উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের একটি দল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালিত মিনি-চিড়িয়াখানাতে গিয়ে বন্যপ্রাণীগুলো উদ্ধার করে। এরপর সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় দেশের প্রথম সাফারি পার্ক কক্সবাজারের চকরিয়ায় অবস্থিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। এর আগে অবশ্য, জেলা পরিষদই বন বিভাগের বিশেষ এই ইউনিটকে বন্যপ্রাণীগুলো হস্তান্তরের কথা জানায়।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ পরিচালিত মিনি-চিড়িয়াখানাটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন পায় ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট। যদিও অনুমোদন পাওয়ার আগে থেকেই সেখানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী আনতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে, খাবার সংকট ও যথাযথ পরিচর্যার অভাবে কিছু বন্যপ্রাণী মারা গিয়েছে। চিড়িয়াখানাটি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়বর্ধক প্রকল্প না হওয়ায় এটির প্রতি মনোযোগী ছিল না প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক বরাবর চিঠি লিখে মিনি-চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণীগুলো বন বিভাগকে হস্তান্তরের কথা জানায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। চিঠিতে তিনি জেলা পরিষদ বন বিভাগকে জানিয়েছেন, কিছু বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে ২০০৮ সালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ একটি মিনি-চিড়িয়াখানা স্থাপন করে জেলা পরিষদ। চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো বর্তমানে অভিজ্ঞ জনবলের অভাবের কারণে প্রতিপালন ও সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে বিধায়, বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটি।
জেলা পরিষদের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাঙ্গামাটি মিনি-চিড়িয়াখানাটিতে প্রাণীর সংখ্যা রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে একটি ভাল্লুক, ৫টি বন মোরগ, ৪টি বানর, একটি হরিণ, ৬টি কচ্ছপ, ও দুইটি সজারু রয়েছে। তবে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট জেলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী ১৯টি প্রাণীর মধ্যে দুইটি ব্যতিত ১৭টি প্রাণী উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করে প্রাণীগুলোর কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নেয়া হচ্ছে। সেখানে কোয়ারান্টাইন ও যথাযথ চিকিৎসা শেষে প্রাণীগুলো বনে অবমুক্ত করা হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, রাঙ্গামাটি জেলা শহরের এক প্রান্তে সুখীনীলগঞ্জ এলাকায় নিরিবিলি প্রাকৃতিক-পরিবেশের মধ্যেই চিড়িয়াখানা প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশে স্থাপন করা হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে উদ্যোগটি বিফলে গেছে। উল্টো বুনো প্রাণী ধরে এনে লোহার খাঁচায় বন্দি করা করায় খাবার ও অসুখে মারা গেছে প্রাণী।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালিত মিনি-চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী পালনকারী সোনাবী চাকমা বলেন, ‘এখানে বন বিড়াল, খরখোস, ভাল্লুক, হরিণ, গুঁইসাপ ছিল। কিছু কিছু প্রাণী মারা গেছে। আমি জান০প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছি প্রাণীগুলো যেন সুন্দরভাবে সারাজীবন থাকতে পারে। ভাল্লুকটাকে নিয়ে যাচ্ছে, এটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে। ছোট থেকে আমি পালন করছি। ডাক দিলেই সে আমাকে চেনে। কুকুরের ছানার মতো ছিল; এখন তো অনেক বড় হয়েছে।’
বন অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘বন্যপ্রাণীগুলোর মধ্যে ভাল্লুকের শারীরিক অবস্থা ভালো। হরিণের অবস্থা মোটামুটি, চামড়ায় কিছুটা সমস্যা আছে। বানরের চামড়ায় সমস্যা আছে। অন্যান্য প্রাণীগুলো মোটামুটি আছে। এগুলোকে আমরা সাফারি পার্কে নিয়ে যাব। আমি মূলত সাফারি পার্কেই দায়িত্বপ্রাপ্ত আছি, প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। সে কারণেই এখানে আসা। বন বিভাগের প্রাণী চিকিৎসক কম থাকায় আমাকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি সবখানেরই যেতে হয়।’
ভাল্লুকটির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘নিঃসঙ্গ থাকলে অবশ্যই ভাল্লুকটির মধ্যে মানসিক প্রভাব পড়বে। যদি ছোট অবস্থা থেকেই এখানে থাকে মানুষের সংস্পর্শে, তাহলে তার মনের মধ্যে প্রেসার কম পড়বে। পরিবেশ-প্রকৃতি বোঝার পর যদি প্রাণ কে আলাদা করা হয় তাহলে সে প্রাণীর মনের মধ্যে চাপটা বেশি আজাদী