রাঙ্গামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে যে কোনো চাষাবাদই লাভজনক হয়। এমন উর্বর ভূমিতে দার্জিলিং এবং চায়না জাতের কমলা চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার তৈচাকমা মৌজার হেডম্যান সুদত্ত চাকমা।
চাকমা সার্কেলের হেডম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কৃষির প্রতি আগ্রহ ছিল তার। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও কৃষি নিয়ে কিছু করার ভাবনা তাকে জেঁকে ধরে। সময়, সুযোগ করে নিত্যসঙ্গী স্মার্টফোন খুলে কৃষির ওপর ভিডিও দেখতে থাকেন। হঠাৎ নজরে আসে চুয়াডাঙ্গা জেলার সফল কৃষক রফিকুলের কমলা বাগানের ভিডিও। সিদ্ধান্ত নেন, তিনিও কমলা বাগান করবেন। যেই চিন্তা সেই কাজ। শুরু করে দিলেন কমলা বাগান গড়ে তোলার।
আজ থেকে চার বছর আগে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পাশে তৈচাকমা দোসর পাড়ায় পরিত্যক্ত জমিতে সহস্রাধিক কমলা চারা রোপণ করেছিলেন। এবার সেই বাগানে শতাধিক গাছে এসেছে সবুজ, হলুদ রঙের কমলা। আকারে খানিকটা বড় আর বর্ণিলসব কমলার এই বাগান প্রথম দেখায় যে কেউ চমকিত হতে পারেন, এমন বাগান বিদেশের মাটিতে কি না।
প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এ বাগানে আসছেন কমলা কিনতে। পাশাপাশি অনেকে ছবিও তুলছেন। নিচ্ছেন চাষবাষের খোঁজখবর। স্থানীয় থেকে শুরু করে আগত ক্রেতারা বাগানের এমন ভালো ফলন দেখে মালিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। হেডম্যানের বাগান দেখে স্থানীয় অনেক বেকার তরুণ স্বপ্ন বুনছেন কমলা বাগান করার।
বাগানে আসা মো. মিজানুর রহমান বলেন, এমন বাগান দেখে যে কারও ভালো লাগবে। এত ভালো ফলন দেখে আমারও খুব ভালো লেগেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাদের সুযোগ-সুবিধা আরও সহজ করলে এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এখানে অনেক সফল কৃষকের আবির্ভাব হবে।
পাশ্ববর্তী খাগড়াছড়ি জেলা থেকে বাগান দেখতে আসা খোকা চাকমা এবং ইগো চাকমা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমলার বাগানের ভিডিও দেখে ছুটে আসেছি। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে নিজেদের পতিত জায়গায় এ ধরনের বাগান গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নিচ্ছি।
কমলার ক্রেতা শান্তিপ্রিয় চাকমা বলেন, হেডম্যান সুদত্ত চাকমা থেকে চার লাখ টাকার কমলা কিনেছি। বিক্রি করেছি সাত লাখ টাকায়। তিন লাখ টাকা প্রথম সিজনে লাভ করে ফেলেছি। প্রতিকেজি কমলা আকার ভেদে ২০০-৩০০ টাকায় বিকিকিনি করা হচ্ছে।
বাগান মালিক হেডম্যান সুদত্ত চাকমা বলেন, ছোটকাল থেকে কৃষির প্রতি দুর্বলতা ছিল। বাবা-দাদারা কৃষির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই দেখায় আমিও সুযোগ খুঁজছিলাম কৃষি নিয়ে কিছু করবো।
তিনি আরও বলেন, প্রথম মৌসুমে বাগানে উৎপাদিত কমলা বিক্রি করেছি চার লাখ টাকায়। এবার কমলার কলম চারার ব্যাপক অর্ডার পেয়েছি। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
এমন আয়ে বেজায় খুশি সদুত্ত চাকমা বেকারদের ঘরে বসে না থেকে নিজেদের পতিত জমিতে চাষাবাদ শুরু করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
কৃষি বিভাগের সাম্প্রতিক জরিপ থেকে জানা গেছে, গত তিন বছরে তিন পার্বত্য জেলায় দার্জিলিং ও চায়না জাতের প্রায় ৪৯ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন কমলা উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার ২৩৪ কোটি টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) দার্জিলিং ও চায়না জাতের কমলার চাষ শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানীয় কমলার চাষও করা হয় এখানে। পাহাড়ে উৎপাদিত কমলার আকার বড় হওয়ায় বাজারমূল্য ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে এ ফসলটির চাষাবাদ পার্বত্যাঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। বাংলানিউজ