রাঙ্গামাটি:- পাহাড়ে শান্তি নিকেতন হিসেবে পরিচিত ও ১৩টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষা প্রসারের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাঙ্গামাটির মোনঘরের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব দু’দিনের নানান আয়োজনে পালিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে নবীন-প্রবীণদের মিলন মেলায় রূপ নেয়। সকালে মনোঘর বিদ্যালয় থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে রাঙাপানি সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙাপানি মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে রাঙাপানি মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় মোনঘর কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি গৈরিকা চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)। বিশেষ অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, মং সার্কেল চিফ সাচিং প্রু চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পারটাজ, মোনঘরের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ শ্রদ্ধালঙ্কার মহাথের, প্রতিষ্ঠাতার সহধর্মিনী রাখি দেওয়ানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এসময় বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছরে প্রতিষ্ঠানটি পাহাড়ে অন্যতম বিদ্যাপিঠ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলের পিছিয়ে থাকা হতদরিদ্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের আলোকিত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পার্বত্য আঞ্চলের বুকে স্মরণীয় হয়ে থকাবে। যারা মনোঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের স্মরণ রাখতে হবে। যারা এখনো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং এই পর্যন্ত নিয়ে আসার জন্য যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে তাদের সকলকে কৃতজ্ঞাতা জানাই।
তিনি বলেন, শুধু প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিলে হবে না, নিজেদের আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তার জন্য কাজ করতে হবে। এখন থেকে বের হয়ে অনেকেই রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে পাহাড়ের বুকে মানুষকে নিরাপদহীনভাবে বসবাস করতে হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে ১৩ ভাষাভাষি সহ ১৪টি ভাসাভাষির বসবাস করছে। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি দীর্ঘ দিনেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজকে পাহাড়ের মানুষ বদ্ধ পরিবেশে জীবনযাপন করছে। যা কোনওভাবেই কাম্য না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রামে মনোঘর শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরো নানান আয়োজনে শনিবার বিকারে দু’দিনের আনুষ্ঠানিকতার ইতি ঘটবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে রাঙ্গামাটি শহরের অদুরে রাঙ্গাপানি এলাকায় চার একর জমিতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী জ্ঞানশ্রী মহাস্থবিরের কয়েকজন শিষ্য বিমল তিয্যে ভিক্ষু, প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু ও শ্রদ্ধালংকার ভিক্ষুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেন মোনঘর শিশু সদন। সুবর্ণ জয়ন্তী দুই দিনব্যাপি নানা অনুষ্ঠান মালা আয়োজন করা হয়েছে।