কেন মোদির টুইটের প্রতিক্রিয়া জানাবে না বাংলাদেশ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১০১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ অর্জন তথা বিজয়কে ম্লান করে ১৬ই ডিসেম্বর কেবলমাত্র ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে টুইট বার্তা দিয়েছেন তার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ নিয়ে দেশটির ঢাকাস্থ দূতকে তলব বা কোনো প্রটেস্ট নোট পাঠানোর আপাতত চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা। এটাকে ‘মোদির রাজনৈতিক বক্তব্য’ ধরে নিয়ে ইগনর বা এড়িয়ে যাওয়ার নীতি নিয়েছে সেগুনবাগিচা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যেও তার ইঙ্গিত রয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে সেগুনবাগিচায় উপদেষ্টার মুখোমুখি হয়েছিলেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। মোদির টুইটের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি খোলাসা করে কিছু বলেননি। কূটনৈতিক জবাব দিয়েছেন। তার ভাষ্যটি ছিল এমন- ‘ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাই নেইম আমাকে বিজয় দিবসে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। উনি (নরেন্দ্র মোদি) তার মতো করে একটা জিনিস বলেছেন, আমরা আমাদের মতো করে বলবো।’ উল্লেখ্য, বিজয় দিবসের সকালেই নরেন্দ্র মোদির বার্তা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি লিখেন, “আজকের এই বিজয় দিবসে, সেইসব নির্ভীক সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে আমরা সম্মান জানাই, যারা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রেখেছিল। তাদের দৃঢ় সংকল্প ও নিঃস্বার্থ আত্মোৎসর্গ জাতিকে করেছে সুরক্ষিত এবং বয়ে এনেছে গৌরব। তাদের অসামান্য বীরত্ব ও অবিচল মনোবলের প্রতি সম্মান জানাতেই আজকের দিন। তাদের আত্মত্যাগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং ইতিহাসে লেখা থাকবে।” মোদির ওই বার্তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট করেছে বিবিসি বাংলা। সেখানে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদির এই বক্তব্যে কোথাও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। প্রতি বছরই ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিও পালিত হয় ভারতে। শুভেচ্ছা বার্তায় বরাবরই ১৯৭১ সালের নিহত ভারতীয় সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় এবং তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের কথা বলা হয়। সেখানে বাংলাদেশ বা মুক্তিযুদ্ধের কোনো উল্লেখ থাকে না। তবে সরাসরি ভারতের বিজয় বলেও বর্ণনা করা হয় না। ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা যায় ২০২১ সালের বিজয় দিবসকে। সেবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে বাংলাদেশ। ওই বছর নরেন্দ্র মোদি তার টুইটে ভারতীয় সেনাদের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের কথা লিখেছিলেন। সুবর্ণজয়ন্তীর অতিথি হিসেবে তৎকালীন ভারতীয় প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ তখন বাংলাদেশে। সেই সূত্রে ঢাকার কথা লিখেছিলেন মোদি।

বিজয় দিবস নিয়ে মোদির বার্তায় দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া: মহান বিজয় দিবসকে ১৯৭১ সালে ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’ বর্ণনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্ট্যাটাসের পর দেশ-বিদেশে থাকা ‘বাংলাদেশিদের’ মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ফেসবুকে তার পোস্টের নিচেই অনেক বাংলাদেশি ব্যবহারকারীকে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। মুজাহিদ শুভ নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেন, ‘ফ্যাব্রিকেটেড হিস্ট্রি’ (বানোয়াট ইতিহাস)। ফররুখ মাহমুদ নামে আরেকজন লিখেন, ‘ইট ওয়াজ আওয়ার ভিক্টোরি। উই আর বাংলাদেশি।’ (এটা আমাদের বিজয়। আমরা বাংলাদেশি।) সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ’র প্রতিক্রিয়ার পর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেন, ‘এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মোদি দাবি করেছেন, এটি শুধু ভারতের যুদ্ধ এবং তাদের অর্জন। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অস্তিত্বই উপেক্ষিত।’ নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি বলে মনে করেন মি. আব্দুল্লাহ। ‘যখন এই স্বাধীনতাকে ভারত নিজেদের অর্জন হিসেবে দাবি করে, তখন আমি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি। ভারতের এই হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও বিজয় দিবস নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বার্তার ‘তীব্র প্রতিবাদ’ জানান। তিনি লিখেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এই বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’

এ বিজয় কেউ আমাদের সোনার থালায় উপঢৌকন হিসেবে এনে দেয়নি: সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা দেশটির কারও নাম উল্লেখ না করে অনেকে এর প্রতিবাদ করেছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রশ্নে বরাবরই সরব সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারি। তিনি কারও নাম উল্লেখ না করেই লিখেন- “১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন-আমাদের বিজয় দিবস। এ বিজয় কেউ আমাদের কোনো সোনার থালায় উপঢৌকন হিসেবে এনে দেয়নি। আমাদের তা অর্জন করতে হয়েছে অসীম ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্যদিয়ে। আমাদের মুক্তির সংগ্রামে বিশ্বের অনেক দেশ ও সংস্থা পাশে দাঁড়িয়েছে। সহায়তা করেছে, জুগিয়েছে সাহস ও শক্তি। প্রতিবেশী ভারত মিত্র বাহিনী গঠনের মাধ্যমে আমাদের সহযোগী ছিল এবং অসংখ্য শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে, বাংলাদেশের বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়ার হিম্মত কারও নেই। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই বিজয় অন্য কোনো দেশের নিকট বর্গা দেয়া নয়। ফুলস্টপ।”

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions