ওয়াদুদ ভূঁইয়া,খাগড়াছড়ি:- আমি আপনাদেরই সহজন। সাড়ে পনেরো বছরের দুর্বৃত্তায়নের বলয় ভাঙ্গার এখনো চারমাস অতিবাহিত হয়নি। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে মাত্র তিন মাসের বেশি কিছু সময় হলো। এরই মধ্যে একেরপর এক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা এঁকে চলেছে পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা। বিদেশের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন শয়তানি ছক একে চলেছে সে।
গত সাড়ে তিনমাসে আপনারা দেখেছেন জুডিসিয়াল কু’র চেষ্টা, আনসার বিদ্রোহের নামে, আইনজীবীদের বিদ্রোহের নামে, রিক্সা চালকদের বিদ্রোহের নামে, পল্লি বিদ্যুৎ বিদ্রোহের চেষ্টা কিংবা পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা। আপনারা দেখে আসছেন, বাংলাদেশের সাধারণ সনাতনী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতি ও আবেগকে পূঁজি করে বারবার সংঘাত বাঁধানোর অপচেষ্টা।
সবশেষ গত দুইদিনে হাসিনা-মুজিবের প্রভু দেশের ইশারায় কলেজ ছাত্রদের দাঙ্গা ও হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা লাগিয়ে বাংলাদেশকে চরম অস্থিতিশীলতায় ফেলে পুনরায় ক্ষমতার মসনদে বসবার দুঃস্বপ্ন দেখছে পলাতক স্বৈরাচারী। হাসিনা আর একটি বিদেশি রাষ্ট্রের এই অপচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
আপনারা দেখেছেন এর আগেও চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আবেগ অনুভূতির সুযোগ নিয়ে পুরো বাংলাদেশে সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগের পালিয়ে থাকা নেতারা। আর একটি বিদেশি রাষ্ট্রের পেসক্রিপশানে হাসিনার নির্দেশে ধর্মীয় নেতার লেবাস ধরে একজন তথাকথিত ধর্মীয় গুরু গত তিনমাস ধরে একেরপর এক উস্কানি দিয়ে আসছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা থাকা সত্ত্বেও তিনি সভা-সমাবেশ করে বেড়াচ্ছিলেন এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করে আসছিলেন। তার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হিসেবে উপস্থাপন করা। আর হাসিনার নির্দেশে তার পালিয়ে থাকা দোসররা মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে, হত্যা ও হামলার মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত লাগানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন, গত দুইদিনে সারাদেশে সনাতনী সম্প্রদায়ের কারোই প্রাণহানী ঘটেনি। তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সজাগ থাকায় কোনো সংঘাতের ঘটনা এবং প্রাণহানী ঘটানোর সুযোগ পায়নি তারা। অথচ আওয়ামী দোসররা, সংঘাত লাগানোর অপচেষ্টাকারীরা গত দুই দিনেও সাতজন ছাত্র নিহত ও বহু সনাতনী নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়েছে। চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে প্রকাশ্যে হত্যা করে ঘটনাপ্রবাহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী ডাইনি হাসিনা।
পাহাড়সহ সারাদেশের মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ সকল শান্তিকামী দেশপ্রেমী নাগরিকদের সবিনয়ে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি। আপনারা ধৈর্য্য ধারণ করুন। এখনও আমাদের কাঙ্খিত বিজয় অর্জিত হয়নি। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কোনো ভাইয়ের সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়াবেন না, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। ভিনদেশী চক্রান্তে পা দেবেন না। আমাদের বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কোনোভাবেই আমাদের এই সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
আইনজীবী আলিফের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জোর দাবী জানাই আমরাও। আমরা নিশ্চিত যে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এর বিচার নিশ্চিত করতেই হবে। কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলে সেই সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা সকল মতভেদ ভুলে একযোগে কাজ করতে চাই। সেইসাথে আমরা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সকল সম্প্রদায় জাত-ভেদ ভুলে বাংলাদেশি হয়ে থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন। সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখুন। লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।