ডেস্ক রির্পোট:- বিভিন্ন পত্রিকার প্রধান খবর গুলো পাঠকেরজন্য তুলে ধরা হলো। দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘১৫ বছরে বিচার ছাড়াই ১৯২৬ জনকে হত্যা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অলিউল্লাহ মোল্লা ২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। তাঁর পরিবার বলছে, ওই দিন বিকেলে অলিউল্লাহকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা–কর্মী। পরদিন সকালে অলিউল্লাহর মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।
পুলিশ তখন দাবি করেছিল, ঘটনার দিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় টহলরত পুলিশ অলিউল্লাহকে থামার সংকেত দেয়। তিনি না থেমে উল্টো পুলিশের দিকে বোমা ও গুলি ছোড়েন। তখন পুলিশের পাল্টা গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশের নথিতে এ ঘটনাকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ উল্লেখ করে অলিউল্লাহর পরিচয় লেখা হয় ‘সন্ত্রাসী’।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এমন ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে অন্তত ১ হাজার ৯২৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার এই হিসাব বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)। তারা এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে।
এভাবে মানুষ মারার প্রতিটি ঘটনার পর সরকারের তরফ থেকে প্রায় একই রকম গল্প বলা হয়। এসব যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সেটা শেখ হাসিনা সরকার ও তাঁর প্রশাসন আগাগোড়াই অস্বীকার করে গেছে। তবে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরের ক্রসফায়ারের তথ্য সংরক্ষণ করেছে। এ–সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রথম আলোর হাতে এসেছে সম্প্রতি। এতে দেখা যায়, এই সাত বছরেই ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২৯৩ জন। দেশের এমন কোনো জেলা নেই যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেনি। এর মধ্যে অনেক রাজনৈতিক নেতা–কর্মীও রয়েছেন।
এসবির হিসাবে সাত বছরে ক্রসফায়ারে নিহতের যে সংখ্যা বলা হয়েছে, আসকের হিসাবে সেই সংখ্যা আরও ১২০ জন বেশি।
প্রতিটি ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্রসফায়ারের সাজানো বর্ণনা উল্লেখ করে মামলা দেওয়া হয়, তাতে নিহত ব্যক্তির সহযোগী হিসেবে আরও অনেককে আসামি করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিবারগুলো মামলা করার সাহস পেত না। কেউ কেউ আদালতে মামলা করার চেষ্টা করতে গিয়ে হয়রানি ও হুমকি–ধমকির শিকার হয়েছেন।
যুগান্তর
‘সংবিধান সংশোধন না পুনর্লিখন সিদ্ধান্ত আলোচনার পর’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধান সংশোধন, পুনর্বিন্যাস নাকি পুনর্লিখন হবে-তা রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে সংবিধান সংস্কার কমিশন। আগামী সপ্তাহে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু হচ্ছে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও প্রস্তাব নিতে আগামীকাল মঙ্গলবার ওয়েবসাইট খোলা হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবে না। অন্তর্বর্তী সরকার দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। পতিত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ এবং জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ও সমর্থনকারীদের সুপারিশ নেবে না কমিশন। রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।
কমিশনের প্রস্তাব বর্তমান সরকার নাকি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, আমি কমিশনের সদস্য হিসাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি না। তবে ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে বলতে পারি, অবশ্য অবশ্যই এই সরকার করে যাবে। কেন করবে না? এই সরকার ছাড়া আর কেউ করবে না।
তিনি বলেন, যেদিন অভ্যুত্থানের একদফা ঘোষণা করা হয়েছিল সেদিনই সংবিধানের প্রশ্নটা বাতিল হয়ে গেছে। সেখানে বলা হয়েছিল, পুরাতন রাজনীতির সেটেলমেন্ট খারিজ করছি। আমরা নতুন রাজনীতির বন্দোবস্ত চাই। নতুন রাজনীতি বন্দোবস্ত মানে নতুন সংবিধান। ওইটা শুনেই বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার বেশ কিছু বিষয়ে সংস্কারে কমিশন গঠন করেছে। এর একটি সংবিধান সংস্কার কমিশন। ওই কমিটির প্রধান ড. আলী রীয়াজ। কমিশন গঠনের পর রোববার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমিশনের সদস্যরা।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলের লক্ষ্যে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্লিখন সংস্কার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। অংশীজনদের কথা শোনার পর আমাদের পর্যালোচনায় যেটা প্রয়োজন হবে, সেটা সুপারিশ করতে কমিশন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি বলেন, আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করব। তার মধ্য দিয়ে আমরা চিহ্নিত করতে পারব কোন কোন জায়গা সুনির্দিষ্টভাবে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন অথবা পুনর্লিখন প্রয়োজন। আমরা পূর্বধারণা থেকে কিছুই শুরু করছি না।
কালের কণ্ঠ
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম ‘বিক্রি কমে ব্যবসা লাটে’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে দফায় দফায় সুদের হার বাড়িয়ে টাকার প্রবাহ কমানোর কৌশলে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত। ডলারের উচ্চমূল্য ঘি ঢেলেছে বাজারে। অথচ মানুষের আয় বাড়েনি, বরং জিনিসপত্রের বাড়তি দামে তারা প্রায় দিশাহারা।
উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতায় কাজ কমেছে সাধারণ মানুষের। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে জনজীবনে অস্থিরতা, আস্থাহীনতা। ছোট-বড় সব বিনিয়োগ বা ব্যবসা প্রসারে স্থবিরতা। নিত্য দিনযাপনে মানুষের মধ্যে অস্থিরতার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সর্বত্র।
এর ফলে একদিকে যেমন উৎপাদনশীলতায় স্থবিরতা চলছে, তেমনি মানুষেরও ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তারা সীমিত করছে কেনাকাটা, যার প্রভাবে বেচাবিক্রিও কমেছে ব্যবসায়। বিশেষ করে খুচরা বিক্রিতে মন্দা চলছে। ব্যবসার এই ভাটার টানে ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের ব্যাবসায়িক সক্ষমতা। তাঁরা আছেন উদ্বেগে।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই দেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে একদিকে কারখানায় উৎপাদন যেমন কমেছে তেমনি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্যার নেতিবাচক প্রভাব। এতে বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের চাহিদা কমেছে।
সমকাল
দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম ‘ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের খোলনলচে বদলের উদ্যোগ’। খবরে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ঘুরেফিরে একই মুখ। রাজনৈতিক পরিচয় ও আর্থিক লেনদেনে বদলি- পদোন্নতি ও নানা ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনায় গেল সাড়ে ১৫ বছর ধরে সমালোচিত পুলিশ। অপেশাদার আচরণ করে অনেকে বারবার পার পেয়েছেন। তাই পুলিশের অবস্থান ছিল জনআস্থার বিপরীতে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সর্বশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে অস্ত্র ব্যবহারের পর ফের সমালোচনার খাতা খোলে তারা। তাই দায়িত্ব নেওয়ার পরই পুলিশ সংস্কারে জোর দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটপ্রধানের পাশাপাশি বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার সঙ্গে কমিশনের একাধিক বৈঠকও হয়েছে। সেখানে নানা মত উঠে আসছে। বৈঠক-সংশ্লিষ্ট একাধিক
কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করা ও পুলিশের খোলনলচে বদলে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ বাহিনীর সামনে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের ভেতর থেকেও সংস্কারের দাবি-দাওয়া সামনে আসে। বলয়মুক্ত হয়ে বদলাতে চায় তারা। ১৮৬১ সালের ঔপনিবেশিক আইন বদলে তা যুগোপযোগী করার চিন্তাভাবনা চলছে। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের আলোকে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে ভলান্টিয়ার পুলিশিং ধারণার কথাও বলছেন কেউ কেউ, যারা নির্দিষ্ট সময়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পুলিশকে নানা কাজে সহযোগিতা করতে পারে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন সমকালকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য জনবান্ধব পুলিশ কীভাবে তৈরি হবে, তা নিশ্চিত করা। আমরা যেমন পুলিশের নিজেদের সমস্যার কথা শুনছি, একইভাবে পুলিশ নিয়ে জনগণের যে মতামত রয়েছে তা-ও শুনছি। সবার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করার কাজ চলছে। আইনকানুন বদলের প্রস্তাবও আসছে। সংস্কারকাজ অনেক চ্যালেঞ্জিং। সবার মতামত নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
ইত্তেফাক
‘আমলাতন্ত্রের পেশাগত কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছিল, অনেকের ছিল রাজনৈতিক অভিলাষ’-এটি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। রাজনীতির কাছে জিম্মি ছিল আমলাতন্ত্র। অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংযোগের কারণে দুর্নীতি হয়েছে। তবে আমলাদের মধ্যে কেউ কেউ সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এজন্য সেই আমলাদের পেশাগত ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল আগারগাঁওস্থ পরিকল্পনা কমিশনের একনেক সম্মেলনকক্ষে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে গঠিত জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গতকাল সরকারের ৮৫ জন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছে শ্বেতপত্র কমিটি। বৈঠকে ৩২ জন সচিব ও সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জ্যেষ্ঠ আমলারা দীর্ঘক্ষণ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, এটা অভূতপূর্ব। বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তারা বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যবচ্ছেদ করেছেন, এটাকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করেন তিনি। উন্নয়ন বয়ানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উন্নয়ন পরিস্থিতিটা পুরোটাই প্রশাসনের কাছে জিম্মি ছিল। বৈঠকে বক্তারা জানিয়েছেন, তারা পুরোটাই পরিস্থিতির শিকার ছিলেন। কেউ কেউ হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
দেবপ্রিয় বলেন, জবাবদিহির অভাবের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুর্বলতা ছিল। উন্নয়ন প্রশাসনের মধ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীদের প্রভাব ছিল। অনেক আমলা রাজনৈতিক অভিলাষের কারণে এই ধরনের কাজে জড়িত ছিলেন বলেও তারা জানিয়েছেন।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প নেওয়ার আগেই জমি ক্রয় করে বেশি দামে প্রকল্পের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তারা জেনে যেত, এখানে জমি কিনলে তিন গুণ দামে বিক্রি করা যাবে, এভাবে সরকারের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। প্রকল্পের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আনার জন্য যে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়াব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানেও দুর্নীতি করা হয়েছে। সেগুলো কীভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে, সেগুলোও আলোচনা হয়েছে।
ঠিকাদারদের বাছাইয়ের ক্ষেত্র অনিয়ম করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিপূর্ণভাবে শেষ না করেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কারণেই প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিক বেনিফিট পাওয়া যাচ্ছে না। আমলাদের পেশাগত সমিতিগুলো
নয়া দিগন্ত
‘আ’লীগ সমর্থক সাড়ে ৩ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ পেতে যাচ্ছে’-এটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের শেষ সময়ে দলীয় পরিচয়ে চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত তিন হাজার ৫৭৪ জন টিআরসি চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছে। গত জুন মাসে দলীয় বিবেচনায় চূড়ান্ত হওয়া এসব টিআরসি (ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল) বর্তমানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, রংপুর, খুলনা, পিএসটিএস রাঙ্গামাটি ও পুলিশ একাডেমি সারদায় চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রশিক্ষণরত রয়েছে।
গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে সারা দেশে ৬৪ জেলায় চারটি পর্বে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় ক্যাডার হিসেবে মৌখিক পরীক্ষার আগের দিন তাদের বাছাই করা হয়। এর বাইরে অন্য প্রার্থীদের নানা কৌশলে বাদ দেয়ার মাধ্যমে তাদের বাছাই করা হয়েছিল। তৎকালীন আইজিপি এবং রিক্রুটমেন্ট ও ক্যারিয়ার প্ল্যানিং শাখা থেকে অত্যন্ত চতুরতার সাথে তাদের বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকারের সময়ে বিভিন্ন পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া সাব-ইন্সপেক্টরদের নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে তদন্তকার্যক্রম সম্পন্ন করা হলেও রহস্যজনক কারণে সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া টিআরসি ব্যাচসহ গত ১৬ বছরের নিয়োগপ্রাপ্ত আনুমানিক ৮০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের বর্তমান কর্মকর্তারা কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য করছেন না।
বণিক বার্তা
‘কৃষিপণ্য পরিবহনে রেলওয়ের উদ্যোগগুলো সফল হয়নি’-এটি বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, কৃষিপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে পরিবহন ব্যয় কমাতে একটি বিশেষ ট্রেন চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল’ নামের এ ট্রেনটিতে সংযুক্ত করা হয় সাতটি লাগেজ ভ্যান, যার মধ্যে একটি ছিল রেফ্রিজারেটেড। ঢাকা-খুলনা রুটে গত ২২ অক্টোবর প্রথম ট্রেনটি পরিচালনা করা হয়। সেই ট্রিপে পণ্য পরিবহন করা হয় ১ হাজার ৮৬০ কেজি। এতে রেলের আয় হয় ২ হাজার ৩২০ টাকা।
২৪ অক্টোবর একই ট্রেন পরিচালনা করা হয় পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে। ৭৬০ কেজি কৃষিপণ্য পরিবহন করে এ ট্রিপে রেলওয়ে পায় ১ হাজার ২৯৬ টাকা। রহনপুর-ঢাকা রুটে ২৬ অক্টোবর পরিচালনা করা ট্রেনটিতে বুকিং হয় মাত্র ২৬০ কেজি কৃষিপণ্য। আয় আসে ৪৮২ টাকা। ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল’ সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর ঢাকা-খুলনা রুটে দ্বিতীয়বার চলে। ১ হাজার ২২৫ কেজি কৃষিপণ্য পরিবহন করে রেলওয়ে পায় মাত্র ১ হাজার ৯১০ টাকা।
দেশের তিনটি রুটে চারদিন কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে সব মিলিয়ে পেয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৮ টাকা। বিপরীতে ট্রেন পরিচালনা করতে গিয়ে সংস্থাটিকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। প্রত্যাশিত কৃষিপণ্য না পেয়ে এবং ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের কারণে এরই মধ্যে পঞ্চগড়-ঢাকা ও রহনপুর-ঢাকা রুটে বিশেষ এ ট্রেনটির চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
লোকসানের কারণে খুলনা-ঢাকা রুটেও ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়ার জন্য রেল ভবনে সুপারিশ করেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলের বাণিজ্যিক কার্যালয়। আজই এ বিষয়ে নির্দেশনা পেয়ে যাবেন বলে আশা করছেন পশ্চিম রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস।
নিউ এজ
নিউ এজের প্রধান শিরোনাম ‘Adani threatens to stop power supply’ অর্থাৎ ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি আদানির’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘৭ই নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ স্থগিত করার কথা বলেছে আদানি। নতুন এই সময়সীমা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানি তার সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ যদি পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানি করে এবং দেশের অবশিষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাকে কাজে লাগায় তাহলেও চালিয়ে নিতে পারবে।
আদানি-ঝাড়খণ্ড পাওয়ার লিমিটেডের ১৪৯৬ মেগাওয়াট কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। কারণ, ৩১শে অক্টোবর বকেয়া প্রদানের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় বকেয়া পরিশোধের জন্য পূর্ববর্তী সময়সীমার পরে উৎপাদন অর্ধেক করে দিয়েছে।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, যে নতুন সময়সীমার মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও বাংলাদেশ ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া বিল পরিশোধের বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করা হয়নি ওই প্রতিবেদনে।
আজকের পত্রিকা
দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ‘ডলার পরিশোধে ব্যর্থ হলে শীতেও বাড়বে লোডশেডিং’। খবরে বলা হয়, বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে আদানি। ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি।
শুধু আদানি নয়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে সরকারি- বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ ৪২ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া পড়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি অনুযায়ী এই বিলের পুরোটাই দিতে হবে মার্কিন ডলারে। কিন্তু ডলার-সংকটের কারণে তা শোধ করতে পারছে না পিডিবি। এতে আসছে শীতেও লোডশেডিং বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার আদানি ৭৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার পর গত শুক্রবার কয়লার অভাবে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিও বন্ধ হয়ে যায়। এতে ইতিমধ্যেই ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রও। ডলারের জোগান না হলে এভাবে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে শীতেও তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়বে দেশ।
ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় নির্মিত আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ২৫ বছর বিদ্যুৎ নেওয়ার চুক্তি করে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া শুরু করে সরকার। এর দেড় বছরের মাথায় এই কেন্দ্রের বকেয়া বিল দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো। এসব বকেয়া পরিশোধের জন্য গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশের বিদ্যুৎসচিবকে চিঠি দেয় আদানি গ্রুপ।
ওই চিঠিতে তারা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১৭ কোটি ডলারের একটি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) দিতে বলা হয়েছিল, তা না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ এই সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করায় ৩১ অক্টোবর মধ্যরাতে ৭৫০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, ৭ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারলে চালু থাকা ৭৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটিও বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছে আদানি।
দেশ রূপান্তর
‘১২০০০ কোটির দায় নিয়ে ঠেলাঠেলি’-এটি দৈনিক দেশ রূপান্তারের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতি বছর গ্যাসের যে বিপুল পরিমাণ অপচয় হচ্ছে, তা ‘সিস্টেম লস’ বা কারিগরি ক্ষতি হিসেবে দেখানো হলেও এর বেশিরভাগই বিতরণ কোম্পানিগুলোর অবৈধ সংযোগের কারণে চুরি হওয়া গ্যাস বলে অভিযোগ রয়েছে। তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম পেট্রোবাংলা তথাকথিত সিস্টেম লসের একটা অংশ চাপিয়ে দিয়েছে গ্যাস সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) ওপর।
কিন্তু জিটিসিএল এ চুরির দায় নিতে নারাজ। আবার বিতরণ কোম্পানিগুলোও পুরো দায় নিতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলছে ঠেলাঠেলি।
সিস্টেম লস মূলত এক ধরনের ক্ষতি, যা পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের সময় লিকেজ, চুরি, অবৈধ সংযোগ, কারিগরি লোকসান ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাহকের কাছে গ্যাস বিক্রি না করায় খুবই সামান্য পরিমাণে কারিগরি ক্ষতি ছাড়া বড় ধরনের সিস্টেম লসের সুযোগ নেই জিটিসিএলের। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি হচ্ছে, তা সমন্বয় করতেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) অনুমোদন ছাড়াই অযৌক্তিকভাবে এ লোকসান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানির ওপর।
প্রায় একই বক্তব্য জিটিসিএলের কর্মকর্তাদের। অন্যদিকে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) দাবি, মিটারিং পদ্ধতি চালুর পর গ্যাসের সঠিক পরিমাপ করতে গিয়ে জিটিসিএলের ওপর এ লোকসানের দায় পড়েছে।