সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সাফল্যে রাঙ্গামাটির ঋতুপর্ণা ও রুপনার বাড়িতে খুশির বন্যা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৯৪ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বাংলাদেশ দলের নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার বর্তমান বয়স ২২। তার বাড়ি রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাইছড়ি গ্রামে। সেরা গোল রক্ষক রুপনা চাকমার বয়স ২১। তার বাড়ি রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ভুয়ো আদাম গ্রাম। দুজনের পরিবারেই ছিল আর্থিক অভাব অনটন।

ছোট কালে বাবা হারিয়েছেন দুজনেই। মায়েদের কষ্টের সংসারে থেকে বেড়েও তাদের। সেই অবস্থায় বাংলাদেশের মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলে রাঙ্গামাটি থেকে উঠে আসাটা নিঃসন্দেহে যেমনটা খুব কঠিন বিষয়, তেমনি গর্বের। এভাবে সর্বশেষ টানা দ্বিতীয় বারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়া বাংলাদেশের দলে কৃতিত্ব অর্জনকারী রাঙ্গামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা ও রুপনার পরিবারে এখন খুশির বন্যা। উচ্ছাসিত প্রতিবেশীরাও। তাদের কৃতিত্বে গর্বিত গোটা রাঙ্গামাটিবাসী।

ঋতুর মা বসুমতি চাকমা বলেন, শিশু বয়সে ২০১৫ সালে ঋতুর বাবা ব্রজবাঁশি চাকমা মারা গেছেন। এক ভাই ও চার বোনের মধ্যে ঋতু চতুর্থ। একমাত্র ভাই পার্বন চাকমা ২০২২ সালের ২৯ জুলাই বিদ্যুস্পৃষ্টে মারা যায়। এখন ঋতু পর্ণার অদম্য কৃতিত্ব আমার বুক বেঁধেছে। এবারেও তার শিরোপা জয়ে আমি আনন্দে আপ্লুত। আমি তাদের দলের সবার জন্য আশির্বাদ করি, যাতে তারা সারাজীবন সাফল্য অর্জন করতে পারে।

গোল বারের নিচে থাকা অতন্দ্র প্রহরী রুপনা। তিনি এবারেও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা গোল রক্ষক হয়েছেন। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভুয়ো আদমে তাদের ছিল দুইচালা টিনের একটি কুড়ে ঘর। গত বারের সাফ জয়ে তাদের জন্য একটি সেমি পাকা বাড়ি করে দিয়েছে সরকার। রুপনার মা কালা সোনা চাকমা বলেন, রুপনাদের এবারও জয়ের খবর শুনে আমি খুবই আনন্দিত। রুপনা শুধু আমার সন্তান না। সে এদেশের সবার সন্তান। আমি তো শুধু তাকে গর্ভে ধারণ করে ছিলাম। তার সাফল্যের পিছনে যারা, আমি তাদেরকে বুক ভরা শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

রুপনা শিশুকালে তার বাবাকে হারিয়েছে। এর পরদিন মজুরের কাজ করে ছেলে মেয়েদের লালন-পালন করি। এখন রুপনাই আমার ভরসা, সে আমার সব। পাহাড়ে নারী ফুটবলের আতুর ঘর রাঙামাটির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে ফুটবল দুনিয়ায় হাতেখড়ি হয়েছে পাহাড়ের সন্তান জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড় মনিকা, আনাই, আনুচিং, ঋতুপর্নাও রুপনা চাকমার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্য অর্জনে গর্বিত বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান। তিনি বলেন, ঋতুদের জয়ের খবরে আমরা খুবই আনন্দিত। তারা আমাদের গর্ব। আমরা তাদেরকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করি। তারা বাড়ি ফিরলে আমরা সর্বজনীন সংবর্দনা দেব।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ঋতুপর্ণা ও রুপনার জন্য পুরো জাতি গর্বিত। আমরা তাদের জন্য সব সময় সাফল্য কামনা করি। তারা বাড়ি ফিরলে আমি তাদের জন্য সবংর্ধনার আয়োজন করব।

এবারও নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় বার নারী সাফ ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের নারী ফুটবল তারকারা। চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পাশাপাশি নিজেদের কৃতিত্ব নিয়ে অর্জন করেছেন সেরা পুরস্কারও। এর আগে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর একই মাঠে একই প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ শিরোপা জিতে ছিলেন বাংলাদেশের কৃতি নারী ফুটবলাররা।

এবারের সাফের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের রাঙ্গামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা। গোল করেছেন খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা চাকমাও। আর সেরা গোল রক্ষকের খেতাব এসেছে রাঙামাটির রুপনা চাকমার হাতে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions