অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার:- নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি হৃদ, পাহাড় আর ঝর্ণার দেশ রুপের রানী রাঙ্গামাটির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের ছোট্ট ক্যাম্পাসটি। তিন দিকে লেক দ্বারা বেষ্টিত সবুজ গাছ গাছালিতে ঘেরা সুউচ্চ পাহাড় চূড়ায় এই সবুজ ক্যাম্পাসটির অবস্থান। দুটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন ও তিনটি ছাত্রী হোস্টেল নিয়ে প্রায় তিন একর সুউচ্চ পাহাড়ী জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এ সবুজ ক্যাম্পাস। বিচিত জাতের পাখপাখালির কলকাকলিতে আর প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর দীপ্ত পদচারণায় প্রতিদিন মূখরিত হয় এ সবুজ বিদ্যাপীঠটি।পাখিডাকা ছায়াঢাকা সবুজ শ্যামল ছোট্ট ক্যাম্পাসটিতে দীর্ঘ সাত বছর আট মাস কর্মকাল অতিবাহিত করে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে অন্য গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বিদায় নিতে হলো। রেখে গেলাম অনেক স্মৃতি। বিদায় লগ্নে সিক্ত হলাম সম্মানিত সহকর্মী ও অফিস স্টাফদের হৃদয় নিংড়ানো অকৃত্রিম ভালোবাসা মিশ্রিত ফুলেল শুভেচ্ছায়।এই ছোট্ট প্রতিষ্ঠানটির সীমিতসংখ্যক সহকর্মী ও অফিস স্টাফ প্রদত্ত অনেকগুলো মূল্যবান উপহার উপটৌকনের পাশাপাশি বিদায়বেলায় কারও কারও অশ্রুসিক্ত দু’চোখে যে আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার প্রকাশ দেখেছি,তা যেকোনো বস্তুগত উপহারের চেয়ে আমার জীবনে শ্রেষ্ঠতম উপহার হিসেবে হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। বিশেষ করে আমার অফিস স্টাফ রুপনের আমার বদলির খবর শুনেই তার দুচোখে যে অশ্রু প্রবাহ দেখেছি,তার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কাছে আমি চিরঋণী হয়ে থাকলাম। আমার সমগ্র কর্মজীবনে অফিস সহায়ক কর্মচারী রুপনকে পেয়েছিলাম এক ব্যতিক্রমী নিঃস্বার্থ, নির্মোহ ও নির্লোভ চরিত্রের মানুষ হিসেবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সে ছিল এক নিবেদিত প্রাণ নিরব কর্মী। দায়িত্ব পালনে কখনও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য ও অনীহা প্রদর্শিত হয়নি। যখন তাকে যে কাজ দিয়েছি সে অত্যন্ত আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার সাথে সম্পন্ন করেছে। আমি ক্যাম্পাসে অবস্থান করায় সে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত আমাকে নিরলস সেবা দিয়ে গেছে। তার এই দায়িত্ববোধ, কর্তব্যনিষ্ঠা আমার কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আল্লাহ তার মঙ্গল করুন।এ কলেজে কর্মকালে এমন কিছু তরুণ সহকর্মী পেয়েছিলাম, যারা ছিলেন প্রাণবন্ত,সদা সক্রিয় ও কর্তব্যনিষ্ঠ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা ও কলেজের একাডেমিক পরিবেশ সহ সামগ্রিক মানোন্নয়নে আন্তরিকভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক জনাব রাশেদ। তাঁকে আমি মাত্র দেড় বছরের জন্য সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলাম। এ অল্পসময়ে তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। আরও যাদের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, তাঁরা হলেন, ইংরেজির রবিউল, বাংলার সফিক, ( বর্তমানে নোয়াখালী সরকারি কলেজে কর্মরত) হিসাব বিজ্ঞানের ইব্রাহিম এবং প্রাণিবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ইতি সরকার।
২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি এই ছোট্ট কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মকাল শুরু করেছিলাম। সে থেকে ধ্যানে,জ্ঞানে সর্বোপরি আমার সমগ্র সত্ত্বা জুড়ে ছিল এই ছোট্ট নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক উন্নতি, অগ্রগতি ও উৎকর্ষতা অর্জনের অদম্য আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন। আমার লালিত সে আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে বিদায়ের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে ধারাবাহিক প্রয়াস প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। এক্ষেত্রে সফলতা যেমন আছে, ব্যর্থতাও কম নয়। অনেক প্রতিকূলতা এবং বস্তুগত ও অবুস্তুগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সকল ব্যর্থতার দায়ভার আমার নিজের স্কন্ধে বহন করলাম।
আমি কলেজটির অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেই এ সবুজ ক্যাম্পাসটির নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য আমাকে অভিভূত করলেও পাশাপাশি এর কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ভীষণভাবে উপলব্ধি করলাম। প্রথমত কলেজের প্রশাসনিক ভবন ও একাডেমিক ভবনের আশপাশে এবং কলেজের প্রবেশ পথের রাস্তাটির বামপার্শ্বের উঁচু পাহাড়টি ঝোপঝাড় ও ঘনজঙ্গলে ভর্তি থাকায় এতে বিষধর সাপের উপদ্রব ছিল অত্যন্ত মারাত্মক। আমি এসে শুনলাম এবং দেখতে পেলাম, মাঝে মাঝে ক্লাসরুমে পর্যন্ত বিষধর সাপ ঢুকে পড়তে। রাতের আঁধারে কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা না থাকায় ক্যাম্পাসে একরকম ভুতুড়ে পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং পাহাড়ি বিষধর সাপের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।এ পরিস্থিতিতে রাতের ক্যাম্পাসে হাঁটাচলা করা আমার কাছে বিপজ্জনক মনে হলো। তাই যত দ্রুত সম্ভব একটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নিরাপদ দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হলো। প্রথমে ক্যাম্পাসে সকল ঝোপ ঝাড় ও বন জঙ্গল কেটে সম্পূর্ণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অতপর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনার্জি সেভিং সাদা আলোর বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন করে রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূতুড়ে ক্যাম্পাসকে দিনের আলোর মতো আলোকময় করে তোলা হয়। ঝোপঝাড় ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করে এতে নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের চারা লাগিয়ে ফুল ও ফলের বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। কলেজের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সমগ্র ক্যাম্পাসকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হলো প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি। আমি কলেজের দায়িত্ব গ্রহণ করে দেখতে পেলাম,কলেজ লাইব্রেরিটি অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। কলেজে লাইব্রেরি আছে, বিষয়টিও শিক্ষার্থীদের অনেকটা অজানা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার হলরুম হিসেবে লাইব্রেরি কক্ষটি ব্যবহার করার পর পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় ছয় সাত মাস পার হলেও লাইব্রেরি থেকে পরীক্ষার হাই ব্যাঞ্চ,লো ব্যাঞ্চগুলো অন্যত্র সরানো হয়নি এবং লাইব্রেরি কক্ষটি তালাবদ্ধ করে রেখে দেয়া হয়েছে। এঅবস্হা প্রত্যক্ষ করে আমি কলেজের সকল কর্মচারীকে তাৎক্ষণিক ডেকে এনে লাইব্রেরি কক্ষ থেকে পরীক্ষার বেঞ্চগুলো দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে কক্ষটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার উপযোগী করার নির্দেশ দিলাম। অতঃপর লাইব্রেরিতে বসে শিক্ষার্থীদের বইপত্র , পত্র,পত্রিকা ও সাময়িকী পড়ার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পড়ার চেয়ার ও টেবিল নূতন করে নির্মাণ পূর্বক লাইব্রেরিতে সরবরাহ করা হয়। লাইব্রেরি কক্ষের চতুর্দিকে লাইব্রেরির দেয়ালের উপরের অংশে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও দেশবরেণ্য বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের ছবি সম্বলিত ল্যামেনিটিং করা ওয়ালমেট লাগানো হয়,যা কলেজ লাইব্রেরির সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের উক্ত ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হয়। এসকল সৃজনশীল সংস্কারমূলক কাজ বাস্তবায়নে আমার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন কলেজে পূর্ব থেকে কর্মরত ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক জনাব রাশেদ। যার বিষয়ে ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি।
প্রতি বছর পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রয়োজনীয় নূতন বইপত্র ক্রয়ের মাধ্যমে কলেজ লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লাইব্রেরির জন্য বইপত্র ও সাময়িকী ক্রয়ের জন্য প্রতি বছর যে পরিমাণ সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে তার চেয়েও অধিক অর্থ ব্যয়ে বছরে অন্তত দুই বার বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইপত্র ক্রয় করিয়েছি। কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে লাইব্রেরি ব্যবহারে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, লাইব্রেরিতে সর্বোচ্চ অধ্যয়নকারী শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করা। কোভিড-১৯ এর লকডাউন এর পূর্ব পর্যন্ত এজাতীয় ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল। পরে নানান সমস্যা বিশেষ করে শিক্ষক স্বল্পতার কারনে তা আর অব্যাহত রাখতে পারিনি। তবে কভিডের পরে শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরিমূখী হতে লাইব্রেরি কক্ষটিতে দুপ্রান্তে দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে পরিণত করা হয়।
কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষক কর্মকর্তাদের বসার চেয়ার টেবিলগুলো বেশ পুরনো এবং সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের বসার উপযোগী ও মানসম্মত না হওয়ায় মিলনায়তনটি নূতন আঙ্গিকে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করি। এলক্ষ্যে সেগুনকাঠের একটি আয়াতকার কনফারেন্স টেবিল এবং এর দু’পাশে শিক্ষকবৃন্দের বসার জন্য আধুনিক ডিজাইনের সুন্দর সুশোভিত সেগুন কাঠের তৈরি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোমযুক্ত চেয়ার সরবরাহ করে মিলনায়তনটিকে নূতন সাজে সজ্জিত করা হয়। কনফারেন্স টেবিলের সম্মুখভাগে অধ্যক্ষের বসার জন্য তৈরি করা হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন ডিজাইনের একটি আসন,যা দেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা মহোদয় কলেজের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসে অধ্যক্ষের আসনটিকে রাজকীয় আসন বলে মন্তব্য করেছিলেন।
বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ের ফলে অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম শিক্ষক মিলনায়তনে আইপিএস সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর মিলনায়তনে শীতাতপ যন্ত্র স্থাপন পূর্বক সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে পরিণত করা হয়। রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের মতো একটি ছোট্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মিলনায়তনে এসি লাগানো খুব একটা সহজ কাজ ছিলনা। প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্যের তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল ছিল। তখন পর্যন্ত অনেক বড় বড় কলেজে এসি লাগানো হয়নি। আমি আমার সম্মানিত সহকর্মীদের সম্মানার্থে ও সৌজন্যে এ ব্যয়বহুল কাজটা সম্পন্ন করেছিলাম।
কলেজের মূল প্রবেশ পথে কলেজের নামান্কিত দৃষ্টিনন্দন কোনো গেট না থাকায় এটা কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাকি অন্য কোন অফিস বা বাড়ি,তা বুঝার উপায় ছিলনা। আমি অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেই স্হানীয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তকে তাৎক্ষণিক অনুরোধ করি,যত দ্রুত সম্ভব একটি সুন্দর আধুনিক ডিজাইনের গেট নির্মাণ করে দেয়ার জন্য। এর সাথে কলেজের সংযোগ সড়কের মূখে প্রধান সড়কের উপর পূর্বনির্মিত কলেজের নামান্কিত গেটটি বিবর্ণ ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এটিকে সম্পূর্ণ টাইলসে মুড়িয়ে নূতন করে এর সংস্কার করার জন্য। কলেজের মূল ক্যাম্পাসের পেছনে কিছু পাহাড়ি ঢালু জায়গা সীমানা প্রাচীর না থাকায় সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় ছিল,যা স্হানীয় কিছু ভূমিদস্যু কর্তৃক বারবার অপদখলের প্রচেষ্টা চলছিল। এমতাবস্থায় ভূমিদস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে কলেজের ভূমি রক্ষার তড়িৎ পদক্ষেপ হিসেবে একটি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশলকে অনুরোধ করি। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ঐ মূহুর্তে অন্য আর একটা সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিবর্তে আমি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উপর গুরুত্বারোপ করলে প্রকৌশল বিভাগ আমার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে সম্মত হয়। এবং দ্রুত কাজ শুরু করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। প্রধান সড়কে অবস্থিত পুরনো গেটটিরও আমাদের চাহিদামতো সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে।
শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক স্বল্পতম সময়ের মধ্যে কলেজের মূল প্রবেশ পথে সম্পূর্ণ টাইলস করা সুন্দর একটি গেট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে গেটে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরীর অবস্হান পূর্বক কর্তব্য পালনের সুবিধার্থে একটি গার্ড পোস্ট নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি গার্ড পোস্টের সাথে সংযুক্ত একটি ওয়াশরুমও নির্মাণ করে দেয়া হয়। কলেজের উল্লিখিত মূল গেটের দু’পাশে দু’টি বাগান বিলাস ফুলের চারা রোপণ করা হয়। বাগান বিলাসের চারাদুটি বড় হয়ে অত্যন্ত সুশোভিত মনোমুগ্ধকর থোকায় থোকায় ফুল ফুটাতে শুরু করলে তখন কলেজের প্রবেশ পথে খুবই সুন্দর মনোরম একটি চিত্তাকর্ষক দৃশ্য তৈরি করে। এতে গেটের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কলেজে কোনো শহিদ মিনার ছিলনা। বাঙালি জাতির জাতিসত্ত্বা বিকাশের মূল উৎস মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্মারক শহিদ মিনার কলেজ ক্যাম্পাসে নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগকে যত শীঘ্র সম্ভব ক্যাম্পাসে শহিদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলে প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ আমার অনুরোধে সাড়া দিয়ে পাহাড়ি ঢালু জায়গায় বেশ কয়েকটি সিঁড়ি সহ একটি সুন্দর দৃষ্টিনন্দন শহিদ মিনার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে দেয়। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ আমার অনুরোধে এভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কলেজের অবকাঠামোগত অনেকগুলো সমস্যা সমাধান করে দেয়।
শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সহায়তায় কলেজের প্রশাসনিক ভবনের দু’টি কক্ষকে আইসিটি ল্যাব হিসেবে প্রস্তুত করে উভয় কক্ষে দু’টি করে মোট চারটি এসি স্থাপন করা হয়। পূর্ব থেকে বিদ্যমান পাঁচটি ডেস্কটপ সহ পর্যায়ক্রমে কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে আরও তেরোটি ডেস্কটফ ক্রয় করে মোট আঠারোটি ডেস্কটপ কম্পিউটার দ্বারা ল্যাবদু’টিকে সজ্জিত করা হয়। শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদানের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রযেক্টর কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে সরবরাহ করা হয়। বিজ্ঞান বিভাগসমূহের জন্য প্রতিবছর প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি সরবরাহ পূর্বক বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবসমূহকে পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ করা হয়। মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে প্রযেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার সুবিধার্থে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান এ তিনটি বিভাগকে তিনটি ল্যাপটপ প্রদান করা হয়। শিক্ষক মিলনায়তনের জন্য পৃথক একটি ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়,যাতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের আগ্রহী যে কোনো শিক্ষক প্রয়োজনের আলোকে ব্যবহার করতে পারেন। একটি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ছোট্ট কলেজের জন্য প্রয়োজনের চেয়েও বেশি পরিমাণের শিক্ষা উপকরণ ও অফিস সামগ্রী ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রীনিবাসের আবাসিক কক্ষগুলোতে সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা ছিলনা। আমি জানতে পেরে দু’টি ছাত্রী হোস্টেলের সবকয়টি কক্ষে কলেজের অর্থায়নে সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা করেদি।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এ কলেজ কেন্দ্রে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের প্রায় হাজার থেকে দেড় হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। খুবই সীমিত জনবল, ছোট ও দূর্বল অবকাঠামোর এই কলেজটিতে এত অধিক সংখ্যক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পরিচালনার মতো জটিল ও বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা আমাদের জন্য খুবই দূরহ ও কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে এত অধিক সংখ্যক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত হাই বেঞ্চ,লো বেঞ্চ। কলেজে অতিরিক্ত বেঞ্চ না থাকায় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ধার করে বেঞ্চ এনে পরীক্ষা পরিচালনা করতে হতো। আমার যোগদানের প্রথম বছর এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টানাটানি করে বেঞ্চ এনে পরীক্ষা পরিচালনা করতে হয়েছে। এর পরের বছর এমনটি যেন আর করতে না হয়, কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে আর কিছুটা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সহায়তায় প্রায় দেড়শ জোড়া বেঞ্চ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। এর পরের বছর থেকে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য বাহির থেকে আর ধার করে বেঞ্চ আনতে হয়নি।
অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি কলেজের একাডেমিক পরিবেশের উন্নয়ন ও শ্রেণী কক্ষে পাঠদান কার্যক্রমে বৈচিত্র্য ও গতিশীলতা আনয়নের জন্য অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমি বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করি।এর অংশ হিসেবে নিয়মিত সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক টিউটোরিয়াল পরীক্ষা গ্রহণ এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুতিমূলক বিশেষ ক্লাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এজাতীয় কিছু পদক্ষেপের ফলে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে কিছুটা গুণগত মানের উৎকর্ষতা অর্জিত হয়েছিল কোভিড-১৯
এর আগ পর্যন্ত মানোন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তীতে নানান সমস্যা ও প্রতিকূল অবস্থার কারণে এ ইতিবাচক ধারা আর অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি। তবে গতবছর এইচএসসির ফলাফল মোটামুটি সন্তোষজনক ছিল।
এ কলেজে ভর্তিকৃত অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলো, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন দূর্গম পার্বত্য অঞ্চলের পশ্চাদপদ অবস্হান থেকে উঠে আসা। সঙ্গত কারণেই এদের অধিকাংশই পড়াশোনা ও ভালো একাডেমিক ফলাফলের ক্ষেত্রে ছিল অনেকটা পিছিয়ে। এতদসত্ত্বেও কিছু শিক্ষার্থীর সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে বিশেষ করে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। এতে অনেকে ভালো পারফর্ম করে ঋর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতেও সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি অন্তক্রিড়া ও বহিক্রিড়ার বিভিন্ন ইভেন্টে কিছু শিক্ষার্থীর প্রশংসনীয় ক্রীড়া নৈপুণ্য ও অতুলনীয় অর্জিত সাফল্য আমাদের অভিভূত করেছে। কলেজ অভ্যন্তরে আয়োজিত সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে আমাদের উক্ত শিক্ষার্থীরা যেমন ভালো পারফর্ম করে তাদের সুপ্ত প্রতিভা ও কৃতিত্ব প্রদর্শন পূর্বক আমাদেরকে অনুপ্রাণিত ও আশাবাদী করেছে, অনুরুপ তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় কলেজের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে এবং কলেজের সুনাম বয়ে এনেছে। আমি কলেজে যোগদানের পরপরই সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রতিভাবান মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের যথাযথ পরিচর্যা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করতে কলেজে কর্মরত বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের দু’জন উদ্যমী তরুণ শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তাদের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ভালো বিতার্কিক তৈরির লক্ষ্যে কলেজে নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য একটি ডিবেটিং ক্লাব গঠন করে দেয়া হয়েছিল। উক্ত ডিবেটিং ক্লাবের উদ্যোগে কলেজে নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে তাদের প্রতিভা ও মেধার বিকাশ ঘটাতে অগ্রসর হচ্ছিল। দূর্ভাগ্য হলো,২০২০ সালের শুরুতে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমাদের গৃহীত সকল ইতিবাচক উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে পড়ে।
রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজে আমার দীর্ঘ পোনে আট বছররের কর্মকালে আমার জন্য সবচেয়ে আত্মতৃপ্তি ও আত্মপ্রশান্তির বিষয় হলো, কলেজ ক্যাম্পাসে দূর দূরান্ত থেকে আগত ব্যাচেলর শিক্ষকদের আবাসনের সুবিধার্থে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ফলে একটি শিক্ষক ডরমিটরি নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে পারা। আমার সুদীর্ঘ চাকরি জীবনে দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে চাকরির নানা রকমের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমার উপলব্ধি হয়েছিল, প্রত্যেক সরকারি কলেজে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নব নিয়োগপ্রাপ্ত তরুণ শিক্ষক এবং অন্য কর্মস্থল থেকে হঠাৎ বদলি হয়ে আসা নবাগত শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে রাত্রি যাপনের সুবিধার্থে শিক্ষকদের জন্য একটা ডরমিটরির ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। একটা নূতন কর্মস্থলে হঠাৎ যোগদান করে নবাগত শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা ফেস করতে হয় তা হচ্ছে, নূতন কর্মস্থলে থাকার একটা ব্যবস্থা করা। ব্যাচেলর হিসেবে প্রথমদিকে বাসা কিংবা ব্যাচেলর মেস খুঁজে পাওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। আবার শিক্ষা ক্যাডারের নমসুদ্র টাইপের ক্ষমতাহীন কর্মকর্তা হওয়ায় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা সার্কিট হাউস তথা সরকারি ডাকবাংলোতে দু’ চার দিনের জন্যও একটা সিট ম্যানেজ করাও সম্ভব হয়না। নূতন কর্মস্থলে শিক্ষা ক্যাডারের অসহায় নূতন কর্মকর্তাদের নিজেদের থাকার জায়গা যোগাড় করার জন্য দিকবিদিক ছুটে বেড়াতে হয়। এতে তারা অনেক সময় মানসিকভাবে হয় বিপর্যস্ত এবং পেশার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে।এমতাবস্থায় যদি কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা থাকে তাঁরা তখন সকল প্রকার অস্থিরতা ও টেনসনমূক্ত হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও তাঁদের পরিপূর্ণ সেবা লাভ করে উপকৃত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারি কলেজসমূহের অধ্যক্ষগন যদি একটু উদ্যমী ও আন্তরিক হন, তাহলে সবকয়টা সরকারি কলেজেই শিক্ষকদের জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে একটা ডরমিটরির ব্যবস্থা করা করা কঠিন নয়।
আমি ২০১৭ সালে রাঙ্গামাটি মহিলা কলেজে যোগদান করেই একটা শিক্ষক ডরমিটরি নির্মাণের আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রথমত ক্যাম্পাসের একটি নিরিবিলি নির্জন সাইট বেছে নিয়ে এ লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তদানীন্তন চেয়ারম্যান পুলিশের সাবেক এডিশনাল আইজি নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা মহোদয়ের শরণাপন্ন হই। একাজে আমাকে সহযোগিতা করেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক জনাব রাশেদ। উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান ত্রিপুরা মহোদয়ের সাথে জনাব রাশেদের ব্যক্তিগত পরিচয় ও সম্পর্ক থাকায় উক্ত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ২০১৭ এর শেষের দিকে আমরা দুজন বাংলাদেশ সচিবালয়ে ওনার অফিসে ( উল্লেখ্য, তিনি তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে কর্মরত ছিলেন) সৌজন্য সাক্ষাত করি। উক্ত সাক্ষাতে আমি মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়কে উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজে একটি শিক্ষক ডরমিটরি নির্মাণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উক্ত ডরমিটরি নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাই এবং মহোদয়কে সুবিধাজনক সময়ে কলেজে আগমনের আমন্ত্রণ জানাই। সেদিনের সাক্ষাতের পর থেকে প্রায় দেড়, দুই বছর পর্যন্ত ওনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চ্যানেলে আমার যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। পরিশেষে ২০২০ এর জানুয়ারিতে কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাহিত্যে, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে চেয়ারম্যান মহোদয়কে কলেজে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। উক্ত অনুষ্ঠানে মহোদয়ের সমীপে শিক্ষক ডরমিটরি নির্মাণের জোরালো দাবি পুনর্ব্যক্ত করি। আমার দাবির প্রেক্ষিতে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ওনার বক্তব্যে রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজে উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে শিক্ষক ডরমিটরি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন করেন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে ত্রিপুরা মহোদয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পরবর্তীতে ওনার স্হলাভিষিক্ত হন রাঙ্গামাটিরই স্হানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাবু নিখিল কুমার চাকমা। চেয়ারম্যান হিসেবে নিখিল বাবুর নিযুক্তির পরপরই ওনার সাথেও সৌজন্য সাক্ষাত করতে একদিন সন্ধ্যার পর ওনার বাংলোতে স্হানীয় অতিথি শিক্ষক জনাব সালাহউদ্দিনকে সাথে নিয়ে ছুটে গেলাম এবং কলেজের পক্ষ থেকে ওনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানালাম। সাথে সাথে সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ত্রিপুরা মহোদয় কর্তৃক মহিলা কলেজে শিক্ষক ডরমিটরি নির্মাণের লক্ষ্যে র্গৃহীত ও অনুমোদিত প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করি। সে মোতাবেক তিনি আমাকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উনি যথাশীঘ্র সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন। অতঃপর চেয়ারম্যান বাবু নিখিল কুমার চাকমা মহোদয়ের মেয়াদ কালে অত্যন্ত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে শিক্ষক ডরমিটরি নির্মাণ প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়। এভাবে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের উঁচু পাহাড় চূড়ায় ঘন সবুজের মাঝে এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষকদের আবাসনের জন্য একটি আধুনিক ডিজাইনের সাজানো গুছানো সুন্দর পরিপাটি ডরমিটরির ব্যবস্থা হয়ে যায়। এবছরের জানুয়ারিতে এর শুভ উদ্বোধন সম্পন্ন হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নূতন চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মাননীয় সুপ্রদীপ চাকমা মহোদয়ের হাতে। তাঁকে এবছরের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাহিত্য, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রুপে আমন্ত্রণ করে এনে মহোদয়কে দিয়ে নূতন ডরমিটরি ভবনের শুভ উদ্বোধন করানো হয়। উল্লেখ্য, মাননীয় সুপ্রদীপ চাকমা মহোদয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কলেজের মূল ক্যাম্পাস থেকে ডরমিটরি ভবনে যাতায়াতের জন্য সহজ কোনো রাস্তা না থাকায় আপাতত ছাত্রীনিবাসের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করতে হয় বিধায় বিষয়টা আমার কাছে অশিষ্ট ও অসুন্দর বলে বিবেচিত হওয়ায় ডরমিটরিতে যাতায়াতের একটা সহজ বিকল্প রাস্তা তৈরি করার জন্য সম্প্রতি আমি শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগকে অনুরোধ জানালে প্রকৌশল বিভাগ প্রায় পঁচিশ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্যাম্পাসের সমতল অংশ থেকে পাহাড়ে উঠার অনেকগুলো ধাপ তথা সিঁড়ি সহ পাহাড়ের ঝোপঝাড় জঙ্গল পরিষ্কার করে রড সিমেন্ট দ্বারা ঢালাই করা একটা পাকা রাস্তা নির্মাণ করে দেয়। নূতন ডরমিটরি ভবনের সামনের লনে নানা প্রজাতির ফুলের চারা লাগিয়ে ফুলের বাগান করার ফলে এর অবস্থানকে আরও যথেষ্ট সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। এর ছাদে আম্রপালি আমের চারা লাগানো হয়েছে,যাতে একতলার ছাদ ঠান্ডা থাকে এবং পাশাপাশি আমের ফলনও যাতে পাওয়া যায়।এমনিভাবে আমি এ কলেজে যোগদান করে ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের জন্য একটা ডরমিটরি তৈরির যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, আমার কর্মকালের মধ্যেই উক্ত উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন দেখতে পেয়ে সত্যি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। আমার সদ্য যোগদানকৃত কর্মস্থল ফেনী সরকারি কলেজেও শিক্ষকদের জন্য অনুরুপ একটি ডরমিটরি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের আশা রাখি, যদি আল্লাহ আমাকে সে সুযোগ দেন।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার একমাত্র মহিলা কলেজ হিসেবে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৯৮ সালে কলেজটি সরকারিকরণ হয় । সে থেকে সরকারি উচ্চমাধ্যমিক কলেজ হিসেবে এর পথ চলা শুরু হয়। জাতীয়করণের সময় প্রত্যেক বিষয়ে মাত্র একটি করে প্রভাষকের পদ এবং ইতিহাস বিষয়ে একটি সহকারী অধ্যাপকের পদ সহ মোট চৌদ্দটি প্রভাষক ও একটি সহকারী অধ্যাপক অর্থাৎ সর্বমোট পনেরোটি শিক্ষক এর পদ সৃজন করা হয়। ২০১৩ সাল থেকে কলেজটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পাস কোর্সে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
দেড় হাজার শিক্ষার্থীর শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষক প্রতি সাবজেক্টে একজন করে মাত্র পনেরো জন। একথা অনস্বীকার্য যে,সাবজেক্ট প্রতি মাত্র একজন শিক্ষক দ্বারা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নির্বিঘ্নে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা পূর্বক গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আদৌ সম্ভবপর হতে পারেনা।কোনো শিক্ষক জরুরি প্রয়োজনে ছুটিতে গেলে, অসুস্থ থাকলে অথবা সরকার নির্ধারিত কোনো প্রশিক্ষণে গেলে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করা কিছুতেই সম্ভব হয়না। আমার পোনে আটবছরের কর্মকালে কলেজটিতে বিদ্যমান সৃষ্ট পদের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি পদ দীর্ঘদিন ধরে শুন্য ছিল। এখনও ছয়টি সাবজেক্টে কোনো শিক্ষক কর্মরত নেই। এমতাবস্থায় স্থানীয়ভাবে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোনক্রমে জোড়াতালি দিয়ে কলেজটিতে একাডেমিক কার্যক্রম সচল রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর সরকারি কলেজসমূহে পদ সৃজনের জন্য ১৯৮০ সালে গঠিত কমিশন যা এনাম কমিশন নামে পরিচিত, উক্ত কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী কলেজটি ডিগ্রি পাস কলেজ হিসেবে প্রাপ্য নূতন পদ সৃজনের জন্য জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য স্হানীয় জনপ্রতিনিধি তদানীন্তন মাননীয় মহিলা সাংসদের স্মরণাপন্ন হলে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে একাত্তর বিধিতে প্রশ্নোত্তর পর্বে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক বক্তব্য প্রদান করবেন মর্মে আমাদের অবহিত করেন। তিনি আমাদের কলেজে নূতন পদ সৃজনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে একটা লিখিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ওনাকে দিতে বললে আমি আমার সহকর্মী জনাব রাশেদকে নিয়ে এ বিষয়ে যৌক্তিক বিবরণ সম্বলিত একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করে মাননীয় সাংসদ মহোদয়কে পৌঁছে দিয়েছিলাম। তাঁকে একবার কলেজের একটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে এনে শিক্ষক সমস্যার সমাধান কল্পে ওনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের বিনীত অনুরোধ জানাই। তিনি আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জাতীয় সংসদে একাত্তর বিধিতে আমাদের প্রতিবেদনের আলোকে রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষকের নূতন পদ সৃষ্টির তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা প্রসঙ্গে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক প্রায় বিশ মিনিট বক্তব্য প্রদান করেন। মানীয় সাংসদের বক্তব্যের জবাবে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় কলেজে নূতন পদ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং এ বিষয়ে কলেজের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন পত্র উপাস্হনের পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃষ্টির আবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ডেস্কে আমি হাতে হাতে জমা দিয়ে আসি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা অধিদপ্তরের তৎকালীন ডিজি মহোদয় অত্যন্ত তড়িৎ গতিতে রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে আপাতত তেরোটি সহকারী অধ্যাপকের নূতন পদ সৃষ্টির সুপারিশ সহ একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে আমি নিজে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ডেস্কে যোগাযোগ করলে পদ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে মর্মে আমাকে জানানো হয় এবং শীঘ্রই একটি মিটিং এর মাধ্যমে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলেও জানানো হয়। ইতোমধ্যে সরকার অপরিবর্তিত থাকলেও নূতন নির্বাচনের মাধ্যমে নূতন সংসদ গঠিত হলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য আসনের মহিলা সাংসদ চিনু ম্যাডাম পূনর্বার মনোনীত না হওয়ায় তিনি আর এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করার আর সুযোগ পাননি। ফলে সরকার দলীয় একজন জনপ্রতিনিধি কর্তৃক দ্রুত কাজ আদায়ের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির সুযোগ না থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদ সৃষ্টির ফাইলটিও চাপা পড়ে যায়। এটি আর আলোর মূখ দেখেনি। এভাবে নূতন পদ সৃজনের আমাদের সকল চেষ্টা প্রচেষ্টা ও দৌড়ঝাঁপ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এবার নূতন পদ সৃষ্টির চিন্তা বাদ দিয়ে কলেজের শুন্য পদসমূহে বদলি ভিত্তিক পদায়নের জন্য আমি মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে বহুবার দৌড়াদৌড়ি, ছুটাছুটি করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব থেকে সচিব মহোদয় পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে শুন্যপদে পদায়নের অনুরোধ জানিয়েছি। এমনকি গত ৩৬তম বিসিএস থেকে একচল্লিশতম বিসিএস এর নূতন নিয়োগ থেকে পদায়নের আবেদন জানিয়ে কেবলমাত্র চল্লিশতম বিসিএস থেকে একজন ও একচল্লিশতম বিসিএস থেকে তিনজন প্রভাষক আমরা পেয়েছিলাম নয়টি শুন্য পদের বিপরীতে। এখনও পর্যন্ত রাঙ্গামাটি মহিলা কলেজে গণিত, রসায়ন ও আইসিটি সহ ছয়টি বিষয়ে কোনো শিক্ষক কর্মরত নেই। উল্লেখ্য, প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকের বদলি ভিত্তিক পদায়নের ক্ষমতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা অধিদপ্তরের হাতে থাকায় আমি আমার পোনে আটবছরের কর্মকালে শুন্য পদসমূহে নূতন শিক্ষক বদলি করানোর জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরেও বারংবার গিয়েছি। শিক্ষা অধিদপ্তরের লম্বা করিডোরে দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটাহাঁটি করেছি। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলো, ডিজি ওয়াহিদুজ্জামান স্যারের পর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক এমনকি উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের সাথেও আমার সাক্ষাত নসিব হয়নি। যখনি ওনাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছি, ওনাদের দেখা মেলেনি। (কারণ ওনারা বিভিন্ন মিটিং সিটিং কিংবা প্রায়ই অফিসের বাহিরে ব্যস্ত)অথচ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সচিব মহোদয়ের সাথে দেখা করা সম্ভব হলেও আমাদের সমগোত্রীয় কর্মকর্তাদের দর্শন হাসিল করা আমার বদনসিবে জুটেনি। সুতরাং রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজে গুনগত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করণে শ্রেণী কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য নূতন পদ সৃষ্টি ও শুন্য পদ পূরণে বহু চেষ্টা প্রচেষ্টা ও তদবিরের পরও আমি সফলতার আলো দেখতে ব্যর্থ হয়েছি। কলেজে অর্ধেকের বেশি পদে বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক না থাকায় কলেজের একাডেমিক পরিবেশের মানোন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা পালনে আমি সক্ষম হতে পারেনি। বছর বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় লিখাপড়ায় পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের হতাশাজনক ফলাফল আমাকে বিব্রত করেছে। আমি লজ্জিত হয়েছি বারবার । অধ্যক্ষ হিসেবে যদিও আমার আন্তরিকতা ও চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিলনা। তবুও আমি ব্যর্থ হয়েছি। এ ব্যর্থতার দায়ভার আমার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে আমি দীর্ঘ সাত বছর আট মাস আট দিন কর্মকাল অতিবাহিত করে অন্য কর্মস্হলের উদ্দেশ্যে পরিশেষে বিদায় নিলাম। বিদায় রাঙ্গামাটি। ভালো থাকুক রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজ ও এ কলেজে অধ্যয়নরত দূর্গম পার্বত্য জনপদের ভাগ্যবিড়ম্বিত পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা। ভালো থাকুক এ কলেজে কর্মরত আমার দীর্ঘদিনের সম্মানিত সহকর্মীবৃন্দ। পরবর্তীতে এ অবহেলিত বিদ্যাপীঠের কান্ডারি যিনি হবেন, তাঁর হাত ধরে এর পথচলা মসৃন হউক, পৌঁছে যাক সকল ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে সফলতার চুড়ায়। এ কামনা করে এখানই শেষ করছি। আমার বর্তমান কর্মস্থল আমার নিজ জেলা ফেনীর শতবর্ষ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ফেনী সরকারি কলেজ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে চাকরি জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে অধ্যক্ষ হিসেবে এ কলেজে যোগদান করলাম।
লেখক রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার। বর্তমানে ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে বদলি। লেখাটি তাহার পেফবুক থেকে নেয়া।