দলবাজ সচিবরা এখনো বহাল,হাসিনা রেজিমে উপেক্ষিতরাই এখনো বঞ্চনায়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- অন্তর্বর্তী সরকারে প্রশাসনিক সংস্কার চলছে, অথচ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অন্তত আটটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে সচিব নেই। দীর্ঘ বঞ্চনার পর যুগ্ম সচিব হিসাবে পদোন্নতি পাওয়া ১৩৩ জনের মধ্যে ৬৫ জনকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। ৪৫ জন পূর্বের পদে রয়েছেন। এসব দপ্তরে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত সচিবরা তাঁদের রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তাঁরা কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। বাকিদের পদায়নের ফাইল ঘুরছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যুগ্ম সচিব এবং অধিদপ্তরের পরিচালক হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে বঞ্চিতদের পদায়নের ফাইল পথে পথে আটকে গেলেও পতিত হাসিনা সরকারের সময়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত জেলা প্রশসকরা এবং বিভিন্ন অধিদপ্তর ও কর্তৃপক্ষের পরিচালকরা এখনও বহাল তবিয়তে ফ্যাসিবাদিরা।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর রহমান বলেন, প্রশাসনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে কতজন সচিব, কতজন ডিজি এবং কতজনকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আমরা এসব বিষয়ে কাজ করছি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেরও প্রায় একই দশা। এমন পরিস্থিতিতে সব ব্যাচের বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদায়নের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকে।প্রশাসনের টেবিলে টেবিলে ঘুরছে হাসিনা সরকারের সময়ে পদোন্নতি ও পদায়ন বঞ্চিতদের ফাইল। ফলে বঞ্চিত ও সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্তদের মধ্যেও রয়েছে অসন্তোষ। পদোন্নতির পর যথাস্থানে পদায়ন না করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েও অনেকেই পোস্টিং পাওয়ার আগেই অবসরে চলে গেছেন। এই তালিকার মাত্র তিনজন কর্মকর্তাকে সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সচিবের ৯টি পদ শূন্য রয়েছে। আবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মদ, দুযোগ ব্যবস্থানা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ, পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের সচিব মো.মাহবুব হোসেনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে বিএনপি পন্থী সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছে না। এরা হচ্ছেন,খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস ফরিদুর রহমান,সাবেক এপিএস ড,সুরাতুজ্জামানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক সাবেক যুগ্মসচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলেও তাদের পদায়ন নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে। পদে পদে ফাইল আটকে রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রশাসনে বঞ্চিতরাই বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। পতিত সরকারের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা টাকা-পয়সা কামিয়েছেন। সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫৪জন অতিরিক্ত সচিবকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়ার পর এখনও পূর্বের পদে পদায়িত ৭৯ জন অতিরিক্ত সচিব। বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিবের পদায়নের ফাইল চালাচালির মধ্যে রয়েছে।

জানা গেছে, বঞ্চিত কর্মর্কর্তাদের মধ্যে দুজনকে দুটি কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও ছয়জনকে ছয়টি অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনের পদায়নের ফাইল চালাচালি হচ্ছে। দীর্ঘ বঞ্চনার পর যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের অর্ধেকের পদায়ন হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। বেশকিছু যুগ্মসচিবকে ‘ইনসিটু’ বা পূর্বের স্থানে পদায়ন করা হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া উপসচিবদের পদায়ন শেষ হলেও তাদের মধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তাকে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগ করেছেন তারা। দীর্ঘ বঞ্চনার পর পদোন্নতি দেওয়া কর্মকর্তাদের পদায়ন না দেওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও বঞ্চিত সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্তদের পদায়নের জোর দাবি করা হয়েছে। তবে তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

ফ্যাসিন্ট হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছর পর আগস্টে পদোন্নতি পেয়ে অবসরে গেছেন বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব। বঞ্চিত ২০৬ অতিরিক্ত সচিবের মধ্য থেকে যে তিনজনকে সচিব করা হয়েছে তারা হলেন-তথ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার উল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগের মো. ফাহিমুল ইসলাম। তাদের মধ্য থেকে গ্রেড-১ পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে পাঁচজন অতিরিক্ত সচিবকে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রজেন্দ্র নাথ সরকার, ড. মনিরুল হুদাসহ আরও তিন কর্মকর্তা রয়েছেন। ছয়জন অতিরিক্ত সচিবকে বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ড. এবিএম মাহবুব আলমকে জাতীয় প্রশাসন উন্নয়ন একাডেমির-এমডিএস, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. আতাউর রহমান, ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খানসহ আরও তিনজন এ পদে পোস্টিং পেয়েছেন। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বঞ্চিত দুই কর্মকর্তাকে। এদের একজনকে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন এবং আরেকজনকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) চেয়ারম্যান হিসাবে পদায়ন করা হয়। বর্তমান সরকারে দুই মাস পেড়িয়ে গেছে। এখনো ৮ জেলায় ডিসি নিয়োগ করা হয়নি। দুই বিভাগে বিভাগীয় কমিশনার নাই সেখানে পদায়ন করা হচ্ছে না। ৬৪ জেলায় পতিত সরকারের আমলে থাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রয়েছে। তাদের প্রত্যাহার করা হয়নি। ৪৯ জেলা নতুন ডিসিরা যোগদান করার এক মাস হলেও এডিসিদের বাঁধার কারণে অনেক জেলায় ডিসিরা কাজ করতে পারছে না। ইতোমধ্যে অনেক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে কিন্তু অনেক উপজেলা দুই বছরের বেশি থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা হয়নি। আবার অনেক সহকারি কমিশনাদের প্রত্যাহার না করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাসা) সভাপতি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, প্রশাসনের সবাই সচিব হবেন এমন দাবি আমরা করি না, করবো না। কিন্তু অধিদপ্তরের ডিজি, কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বিভাগীয় কমিশনার হতে তো বাধা নেই।ইনকিলব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions